প্রাচীন মিশরীয় মমি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সেই আগ্রহের জায়গা থেকেই বহু বছর ধরে চলছে এই মমি রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা। গবেষকরা যতই এর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন ততই আরও বিস্ময়কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। সম্প্রতি একদল গবেষক প্রাচীন মিশরীয় মমির ঘ্রাণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। আর তা হলো প্রাচীন এ মমিগুলো থেকে 'কাঠ', 'মিষ্টি' ও 'মশলাদার' সুগন্ধ পাওয়া যায়।
গবেষণার জন্য তারা নয়টি মমিকৃত মৃতদেহ ব্যবহার করেছিলেন। আর এজন্য তারা বৈদ্যুতিক, কৃত্রিম নাকের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন।
গবেষণায় পাওয়া যায়, মমিকরণ প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়দের জন্য গন্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় পাইন, সিডার এবং জুনিপারের মতো রজন এবং তেল ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে ৫ হাজার বছর পরেও মমিগুলো থেকে 'মনোরম' সুগন্ধ পাওয়া যায়।
জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, হাজার হাজার বছর ধরে, বাষ্পীভবন, জারণ এবং এমনকি স্টোরেজের কারণে মূল সুগন্ধের অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। তাই সংরক্ষিত মৃতদেহগুলোকে নন-ইনভেসিভ উপায়ে বিশ্লেষণ করার জন্য ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। একইসাথে তারা জাদুঘরে পুনরায় সেই আগের সুগন্ধি তৈরি করার একটি উপায় খুঁজে বের করতে চান যাতে দর্শনার্থীরা পুরোপুরিভাবে মমির আবহ পান।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এবং স্লোভেনিয়ার লুব্লিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কায়রোর মিশরীয় জাদুঘরের সংরক্ষক ও কিউরেটরদের সহযোগিতায় এই গবেষণা চালিয়েছেন।
গবেষণার প্রধান লেখক অধ্যাপক মাতিজা স্ট্রলিক বলেন, বহু বছর ধরেই মমি করা মৃতদেহের গন্ধ বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বিত রাসায়নিক ও উপলব্ধিমূলক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই যুগান্তকারী গবেষণা সত্যিই আমাদের সংরক্ষণের আরও ভাল পরিকল্পনা করতে এবং প্রাচীন ক্ষয়ক্ষতির উপকরণগুলো বুঝতে সহায়তা করেছে। এটি মমিকৃত মৃতদেহের জাদুঘর প্রদর্শনীকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
কায়রোর মিশরীয় জাদুঘরের সহ-লেখক ও পরিচালক অধ্যাপক আলী আবদেল হালিম বলেছেন: প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে, মমিকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্গিং অনুশীলন ছিল। যার লক্ষ্য ছিল তেল, মোম এবং মলম ব্যবহার করে মৃত ব্যক্তির মৃতদেহকে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দেওয়ার বিস্তারিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরকালের জন্য সংরক্ষণ করা।
মিশরীয় এ অধ্যাপক আরও বলেন, মিশরীয়দের মৃতদেহ সংরক্ষণের অনুশীলনটি সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে। একইসাথে এতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কৌশল এবং উপকরণগুলো মমিকৃত ব্যক্তির যুগ, অবস্থান এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বিশদ জানতেও তথ্য সরবরাহ করেছে।
গবেষকরা মমিকৃত দেহগুলো থেকে নির্গত রাসায়নিকগুলো শনাক্ত করতে বিভিন্ন কৌশল এবং বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন। এরপর মানব স্নিফার এর প্যানেলটির গন্ধগুলো থেকে মমিকৃত দেহগুলোর গুণমান, তীব্রতা এবং আনন্দদায়কতার দিক বর্ণনা করেছেন।
জানা যায়, ফেরাউন এবং আভিজাত্যের জন্য সংরক্ষিত ছিল বিশুদ্ধতা এবং দেবদেবীদের সাথে সম্পর্কিত মনোরম গন্ধগুলো। অন্যদিকে খারাপ গন্ধগুলো দুর্নীতি এবং পচে যাওয়ার লক্ষণ ছিল।
গবেষকরা বলছেন, তারা এখন প্রাচীন মমির প্রদর্শনীসহ যে যাদুঘরগুলো রয়েছে সেখানে 'গন্ধস্কেপ; তৈরি করার চেষ্টা করবেন। তারা অ্যারোমাগুলো পুনরায় তৈরি করার চেষ্টা করছেন যাতে যাদুঘরে দর্শণার্থীদের অভিজ্ঞতার উন্নতি করতে পারে। দর্শণার্থীরা যেন প্রাচীন মিশরীয় ঐতিহ্যের সেই পাঁচ হাজার বছর আগের সেই সুগন্ধিকে অনুভব করতে পারে।
তথ্যসূত্র- স্কাই নিউজ।