ঈদে নতুন জামা কিনতে চায় শিশু রাহাদ
-
-
|

শিশু রাহাদ
১০ বছরের শিশু রাহাদ। সামনে ঈদ, তাই নিজের নতুন জামা কেনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা তার। অভাব অনটনে ছোট বয়সেই পরিবারের হাল ধরতে নিমের ডালের তৈরি মেসওয়াক বাজারে বিক্রি করতে এসেছে সে, আর সেই বিক্রির টাকায় এবার ঈদে নতুন জামা কিনতে চায় শিশু রাহাদ।
পরিবারের ছোট ছেলে রাহাদ। পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন বগুড়ার সান্তাহার উপজেলার ইয়াদ কলোনিতে। বড় ভাই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তার বয়সও মাত্র ১২ বছর। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ভাঙারির ব্যবসা করতেন রাহাদের বাবা এমদাদুল। প্রায় ১ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি। রাহাদের মা এক মিলে নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। রাহাদের মায়ের একার রোজগারে সংসার চলে না তাই বাধ্য হয়ে রমজানের শুরু থেকেই রাহাদ নেমে পড়েন রোজগারের আশায়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ শহরের পৌর কাঁচাবাজার এলাকায় হাতে ছোট্ট প্লাস্টিকের ঝুড়ি তার মধ্যে রাখা ১৫-২০ টি নিমের ডালের মেসওয়াক। বাজারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে সে, দাম জিজ্ঞাসা করতেই রাহাদ বলে উঠলো " আপনি যা দিবেন সেটাই "।
বার্তা২৪.কমের সাথে কথা হলে রাহাদ জানায়, আমার বাবা অসুস্থ আর বড়ভাই মাদ্রাসায় পড়ে,আমি আর আমার মা মিলে আমাদের সংসার চালাচ্ছি। সারাদিন শেষে যত ইনকাম হয় সেটা আমার মায়ের হাতে দিয়ে দিই। এবার ঈদে আমিও নতুন জামা কিনবো এজন্য টাকা গোছাচ্ছি। আমার বাবা সুস্থ থাকলে আমার মেসওয়াক বিক্রি করতে হতো না, আমার বাবা-ই আমাকে ঈদে নতুন জামা কিনে দিতো।
রাহাদ জানায়, " আমার মা প্রতিদিন নিমের ডাল কেটে দেয় আর আমি বাজারে এনে বিক্রি করি, সকালে বাড়ি থেকে বের হোই আর বাসায় ফিরি ইফতারের আগে কিন্তু প্রতিদিন সময়মতো বাসায় যাওয়া হয়না যেদিন বিক্রি কম হয় সেদিন কাউকে বলে ইফতারের জন্য টাকা নিয়ে বাহিরেই ইফতার করি। সারাদিন রোজা থেকে রোদের মধ্যে আমি এগুলো বিক্রি করি, কষ্ট হলেও কিছু করার নেই কারণ আমার ওপরে পরিবারের অনেক দায়িত্ব।
রাহাদের মা পারভীন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি বগুড়া সোনাতলা, আমরা সবাই মিলে সান্তাহার ইয়াদ কলোনীতে ভাড়া থাকি। আমার স্বামী ১ বছর ধরে খুব অসুস্থ তাই ইনকাম করতে পারে না। আমার ছোট ছেলে রাহাদকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম কিন্তু পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতে পারি না তাই পড়া বাদ দিয়েছে সে। খুব ইচ্ছা ছিল দুই ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাবো কিন্তু অভাবের জন্য আর সেটা সম্ভব হলো না। বড় ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করাচ্ছি কারণ এটা আমার খুব ইচ্ছা যে আমার কষ্ট হলেও সে ভালো মানুষ হোক। ছোট ছেলেকেও বলেছি পড়াশোনা করতে যদিও আমার কষ্ট হয় কোনো সমস্যা নেই কিন্তু সে আমাদের পরিবারের কষ্ট দেখে পড়াশোনা বাদ দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সামনে ঈদ জানি না ছেলেদের ঈদের নতুন জামা নিয়ে দিতে পারবো কিনা কারণ এই অভাবের সংসারে জীবন চালাতেই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমার ছেলেদের কেউ দায়িত্ব নিলে বা আমাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের পড়াশোনা চালাতে পারতাম এবং অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে পারতাম।