যিনি এনেছিলেন রুহ আফজা
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
উর্দু ও ফার্সি ভাষায় পন্ডিত হাকিম হাফেজ আবদুল মজিদের আগ্রহ ছিল চিকিৎসা শাস্ত্রে। ইউনানি বিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের যে সময়টায় তিনি কাজ করতেন তখন পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়াতে মারা যেত মানুষ। কোরআনে হাফেজ এই ভদ্রলোককে বিষয়টি বেশ পীড়া দিত। ১৯০৬ সালে দিল্লিতে নিজ এলাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ‘হামদর্দ।’ ফার্সি এ শব্দের বাংলা হচ্ছে সহানুভূতি।
একশো বছরেরও বেশি সময় পরেও হাকিম হাফেজ আবদুল মজিদকে মনে রেখেছে উপমহাদেশের মানুষ। কারণ ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় শরবত ‘রুহ আফজা’ তাঁরই আবিষ্কার। প্রচণ্ড গরমে তো বটেই, রমজান মাস এলেই রুহ আফজা এই তিন দেশেই দারুণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। রুহ আফজা ছাড়া ইফতারটা কোনো ভাবেই যেন পরিপূর্ণ হয় না।
১৯০৬ সালে রুহ আফজা তৈরি করেন আবদুল মজিদ। উদ্দেশ্য ছিল প্রচন্ড গরম থেকে মানুষের শরীরকে কিছুটা রক্ষা করা। নিজের মেধা ও পাণ্ডিত্য দিয়ে মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর এ পানীয়টি তৈরি করতে বেশ কষ্টও করেছেন তিনি। হাকিম এমন একটা কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। একটি মুসলিম দাওয়াখানা থেকে উদ্ভব এই পানীয় কিন্তু হয়ে ওঠে সর্বভারতীয় পানীয়।
মেধাবী এই হাকিম ১৯২২ সালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যান। এরপর তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা হাল ধরেন হামদর্দ এর।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আঁচ লাগে রুহ আফজাতেও। আবদুল মজিদের বড় ছেলে ভারতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ছোট ছেলে হাকিম মোহাম্মদ সাইদ পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে হামদর্দ গড়ে তোলেন। যা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেও কাজ করত। হাকিম মোহাম্মদ সাইদের মেয়ে সাদিয়া রশিদ জানান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের হামদর্দ অংশটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য উপহার দেন তিনি।
তিন দেশেই গৌরব ও আবেগের সাথে মানুষে ঘরে ঠাঁই নিয়েছে হাকিম হাফেজ আবদুল মজিদের এই অমর সৃষ্টি। রুহ আফজা নিয়ে রীতিমত গর্বিত ভারত। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রুহ আফজার বিস্তৃতি নানা ভাবে তুলে ধরে দেশটি। এখন পাকিস্তান-বাংলাদেশে পৌঁছে গেলেও দিল্লির হাউজ কাজী এলাকায় শুরু হয়েছিল পানীয়টির যাত্রা। যা এখনো চলছে। চলছে না কেবল শরবতের রাজ্যে রাজত্ব করছে।