বিএনপির ক্ষতি করার জন্য নতুন-নতুন বয়ান বাজারে ছাড়া হচ্ছে: আমীর খসরু
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তোলার বিষয়টি নাকচ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত করতেই নতুন-নতুন বয়ান বাজারে ছাড়ছে। তিনি বলেন, যাদের রাজনৈতিক কোনো মতাদর্শ নেই, যাদের রাজনীতি দৈন্য হয়ে গেছে, তারাই বিএনপির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে নগরীর লালখান বাজারে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ইফতার উপলক্ষ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, যে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে, যে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে, যে দলের ৬০-৭০ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার সম্মুখীন, হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার, নেতাকর্মীরা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, জেলে চিকিৎসার অভাবে কষ্টভোগ করেছে, সে দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবে, এটা কেবল বিভ্রান্তিকর প্রচারণা।
তিনি বলেন, বেগম জিয়াসহ আমরাও নির্যাতিত। অথচ কেউ যদি বলে আমরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি, তাহলে বুঝতে হবে তাদের কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই। তারা নতুন নতুন ধারণা ও বয়ান বাজারে ছেড়ে বিএনপির জনপ্রিয়তার ক্ষতি করতে চাইছে। কারণ, তাদের আর কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য অবশিষ্ট নেই।
আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপির মতো ক্ষতিগ্রস্ত, আমার মতো ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মধ্যে কয়জন আছে? আমি যতবার জেলে গেছি, আমার ওপর যত নির্যাতন হয়েছে, আমার পরিবারের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে, যারা বলছে, তাদের কি এর এক শতাংশ হয়েছে? তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার করে বলেছেন, আমরা কোনো প্রতিশোধের, প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলাদেশে করব না কিন্তু বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের, যারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন, গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, প্রত্যেকের বিচার করতে হবে। সেটা এখন হচ্ছে কিনা আমার সন্দেহ আছে, তবে বিএনপি এলে সেই কাজটা আমরা পরিপূর্ণভাবে করব।
খসরু বলেন, একটা দেশের প্রশাসন পুলিশ আর সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে চলে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার যখন আসে, এই ফাউন্ডেশনের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ-প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করে। এখন বাংলাদেশে যেসব সমস্যা দেখতে পাচ্ছি, যেহেতু বাংলাদেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই, এজন্য কোনো ফাউন্ডেশনও নেই, পলিটিক্যাল মোবিলাইজেশন নেই, এজন্য সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মূল শক্তি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ। পুলিশ ও প্রশাসন সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত একটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, নতুন প্রজন্ম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। পুলিশ কিংবা প্রশাসন হচ্ছে সহায়ক শক্তি, এটা মাথায় রাখতে হবে। পুলিশ একা কোনোদিন কোনো নির্বাচন সফল করতে পারে না, প্রশাসন পারে না। দেশের মানুষসহ সবাই মিলে নির্বাচন সফল করতে হয়। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ প্রস্তুত আছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, যারা নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে, এসব অবশ্য তাদের যুক্তির একটা অংশ। যারা বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না, এটা তাদের প্রোপাগান্ডার একটি অংশ। তবে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিচারহীনতায় বিশ্বাস করে না। পাঁচ আগস্টের পরে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় যতজন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম এসেছে, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আসুক কিংবা কারও অভিযোগের মাধ্যমে আসুক, এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর কোনো দল এই উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। অভিযোগে যেভাবেই আসুক, কোনো ধরনের ইনভেস্টিগেশন ছাড়াই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রশ্ন তুলেছি, তদন্ত ছাড়াই যে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হচ্ছে, আমরা দেখছি যে অনেক নেতাকর্মীই এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নেই। মিথ্যা অভিযোগের শিকার তারা। কিন্তু বিএনপি সেটার জন্য অপেক্ষা করছে না, আগে বহিষ্কার, তদন্ত করছে পরে। তদন্তে যদি দেখা যায় সে নির্দোষ, তাহলে দলে ফিরে আসতে পারছে। সুতরাং একটি দল সরকারের বাইরে থেকে এটা করছে, কিন্তু আমরা যদি সরকারে থাকতাম, এদের অনেকে জেলে থাকত। সরকারকে বলব, বিএনপি বলে কথা নয়, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে, তাদের গ্রেফতার করুন, বিচার করুন, ইনক্লুডিং বিএনপি। আজ বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আমরা এ কাজটাই করতাম।
খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি বিচারহীনতা কোনো দিন সহ্য করতে পারে না। আরও অনেক দলের নেতাকর্মী কিন্তু এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিএনপি একমাত্র দল, দুই হাজারের মতো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। ক্ষমতায় থাকুক আর ক্ষমতার বাইরে থাকুক, বিএনপি এ ব্যাপারে অনড় থাকবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় নগর কমিটির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদসহ নগর কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।