জাতীয় নির্বাচনের পথেই হাঁটছে সরকার?
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ-জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে কোনটি পূর্বে অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিয়ে রাজর্নৈতিক দলগুলির দ্বিধাবিভক্ত অবস্থানের মাঝে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মূলতঃ বিষয়টি নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতায় সংসদ নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছে সরকার। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজক নির্বাচন কমিশনও সেই পথেই হাটছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংসদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কথা বলে আসছেন। যদিও সারা দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় জনগণের সেবাবঞ্চিত হওয়াসহ মাঠ প্রশাসনের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠানের নতুন চিন্তাও তৈরি হয়। গত ৮ জানুয়ারি ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
পরদিন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জনগণ কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবাগুলো না পাওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা এসেছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে নাগরিকদের এই সেবা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ নিয়ে অগ্রসর হতে পারব।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অনুরোধে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত যে জনমত জরিপ করে, তাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে জোরালো মত আসে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারের পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশ্যে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি তৈরি হয়। বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও তাদের মিত্ররা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতায় সরব হয়।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে ‘রক্তপাত এবং বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টির আশঙ্কায় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনাকে তারা দুরভিসন্ধিমূলক বলেও অভিযোগ তোলে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই পীর), ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির (বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি) এই মতের বিরোধিতা করেন। সম্প্রতি স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশের যে সারসংক্ষেপ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে, তাতে আগামী জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যদের বিপরীতমুখী অবস্থানের মাঝেই গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত। এর আগের দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকরা বিশ্বাস করেন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের.. এবং গণহত্যা, অর্থপাচার এবং মাফিয়া কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের পুনর্বাসনের পথ খুলে দেবে।
তবে নির্বাচন কমিশনও যে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে নয় তা জানিয়ে ইসি আব্দুর রহমানেল মাসুদ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ধামরাইয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের এখন মেইন ফোকাস হচ্ছে সংসদ নির্বাচন। সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে সরকারকে এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার সুপারিশ করেছে। সার্বিক বিবেচনায় সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা পিছু হটছে।
সূত্র বলছে, নানাবিধ কারণে সরকার এমনিতেই চাপে রয়েছে। এরই মধ্যে বড় একটি অংশীজন বিশেষ করে বিএনপির বিরোধিতার মুখে স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে জটিলতা আরো ঘনীভূত হবে। এসব যৌক্তিকতা বিবেচনা করে এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়েছে সরকার। এর পরিবর্তে স্থানীয় সরকাররের সব স্তরে প্রশাসক নিয়োগের চিন্তা করছে সরকার।