সন্ধ্যা নামলেই রাজশাহীর ব্যস্ত রাস্তাগুলো বদলে যায় কেনাকাটার ভিড়ে। দোকানের ঝলমলে বাতিগুলো যেন ঈদের আনন্দকেই ফুটিয়ে তোলে। শিশুদের কৌতূহলী চোখ, তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশন সচেতন ভাবনা, অভিভাবকদের হিসেবি কেনাকাটা সব মিলিয়ে ঈদের বাজার হয়ে উঠেছে এক বর্ণিল উৎসব।
শহরের অলিগলিতে কান পাতলেই শোনা যায় দরদাম করার চেনা সুর। কেউ খুঁজছেন পছন্দের শাড়ি, কেউ বা হাতড়ে দেখছেন নকশাদার পাঞ্জাবি। ব্যস্ততার মাঝে রিকশার ঘণ্টা, হকারদের ডাক আর দোকানিদের আহ্বান মিশে এক অভূতপূর্ব শব্দময়তায়। সকালে কেনাকাটা কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শপিংমল আর বিপণিবিতানগুলো যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
নগরীর সাহেববাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, হকার্স মার্কেট, গণকপাড়া, থিম ওমর প্লাজা থেকে শুরু করে কুমারপাড়ার আড়ং, লারেভে, টুয়েলভ, সেইলর, সারা, ইনফিনিটি সব জায়গায় উপচে পড়া ভিড়। মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, বোরকা, অলংকার ও কসমেটিকসের দোকানে বেশি ভিড় দেখা যাচ্ছে। ছেলেদের পাঞ্জাবি, জিন্স, টি-শার্টের দোকানেও জমজমাট কেনাকাটা চলছে।
তবে এবার ঈদ বাজারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পোশাকের দাম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও পোশাকের দামে কোনো লাগাম নেই।
গণকপাড়া এলাকার গৃহবধূ সাবিহা জেসমিন বলেন, গত বছর যে থ্রি-পিস ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছিলাম, এবার সেটাই ২ হাজার ৫০০ টাকা! শাড়ির দামও অনেক বেশি। আগের তুলনায় ১ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
সাহেববাজারে কেনাকাটা করতে আসা এক তরুণ বলেন, পাঞ্জাবির দাম এত বেশি যে কেনার আগে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। ১৫০০ টাকার পাঞ্জাবি এখন ২৫০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই তারা বেশি দামে কাপড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী আবিদ হাসান বলেন, আমরা নিজেরাও বেশি দামে কাপড় কিনছি, তাই দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। ক্রেতারা হতাশ হচ্ছেন, কিন্তু আমরাও অসহায়।
নিউমার্কেটের এক বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঈদের বাজার ভালো চলছে, তবে ক্রেতাদের মনমতো দাম রাখা যাচ্ছে না। তারা কমানোর অনুরোধ করেন, কিন্তু আমাদেরও একটা সীমা আছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, এবার ঈদের বাজার ভালো যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও তাদের সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছেন। যদিও দাম কিছুটা বেশি, তবে অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে।