‘জলে জ্বলে তারা’ প্রকৃতঅর্থেই ভালো ছবি হয়ে উঠেছে
-
-
|

‘জলে জ্বলে তারা’ সিনেমার পোস্টারে মিথিলার প্রাধাণ্য
গত শুক্রবার ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে দুই বাংলার জনপ্রিয় তারকা রাফিয়াত রশিদ মিথিলার নাম ভূমিকায় অভিনীত সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’। তারকাবহুল ছবিটি হুট করে মুক্তি পাওয়ায় অনেক দর্শক হয়তো খবরটি জানেই না। এজন্য থিয়েটার দর্শক সমাগম তেমন নেই।
কিন্তু যারা বলে থাকেন, আমাদের দেশে ভালো ছবি হচ্ছে না, তাদের অন্তত দায় রয়েছে ভালো ছবি মুক্তি পেলে তা হলে এসে দেখার। ‘জলে জ্বলে তারা’ প্রকৃতঅর্থেই একটি ‘ভালো ছবি’। পরিচালক অরুণ চৌধুরী অত্যন্ত নির্মোহভাবে ছবিটি করেছেন। ‘দর্শক খাওয়ানো’র কোন ফন্দি ফিকির তিনি করেননি। শুধু গল্পটার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখেই তিনি এগিয়ে গেছেন পরিণতির দিকে। প্রচলিত গল্পের অনেক দিকেই ধাক্কা দেয় ছবিটি। চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও ব্যাকগ্রাউন্ড একইসঙ্গে জটিল বলেই তা বাস্তবঘেষা মনে হয়েছে।

দিনশেষে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীসহ পুরো টিমের। কারণ ছবিটির প্রতিটি সেক্টরে যত্নের ছাপ পরীলক্ষিত হয়। ছোট করে বলতে গেলে- ছবির লোকেশন, কাস্টিং, কস্টিউম, মিউজিক, আবহসঙ্গীত, ক্যামেরার কাজ, সেট, প্রপস সবকিছুই গল্পটিকে দারুণভাবে সমর্থন দিয়েছে। এজন্যই লেখার শুরুতে বলা, ‘জলে জ্বলে তারা’ প্রকৃতঅর্থেই ভালো ছবি হয়ে উঠেছে।
ছবির নাম ভূমিকা ‘তারা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিথিলা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন আজাদ আবুল কালাম, এফ এস নাঈম, ফজলুর রহমান বাবু, মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও মুনিরা মিঠু। প্রত্যেকে যার যার চরিত্রে কী দারুণ অভিনয় করেছেন সেটা দেখতে হলেও দর্শকের হলে যাওয়া উচিত।

মিথিলার কাছে প্রশ্ন, লম্বা অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুর অনেকগুলো বছর কেন আপনাকে শুধু মিষ্টি প্রেমিকার চরিত্রেই দেখা গেলো? আপনি কি নিজেই জানতেন না যে জটিল থেকে জটিলতম চরিত্র কতো অনায়াসে হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারেন?
দর্শক এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত হবেন, যদি তারা মিথিলার সাম্প্রতিক কাজগুলো দেখে থাকেন। তিনি যেমন ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াকু সৈনিক, তেমনি তিনি ‘কাজল রেখা’র ধূর্ত লোভী নারী কঙ্গন দাসী। আবার তিনিই ‘জলে জ¦লে তারা’র বারবনিতা তথা সার্কাসকন্যা, যার জীবনের লাভের কোঠা শূন্য। শুধু হারতে হারতে সে ক্লান্ত, যার বহিঃপ্রকাশ তার কলকলিয়ে ফেটে পড়া হাসির মধ্যে। শুধু একটু ভালোবাসা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায় সে। তাইতো বিবাহিত এক বাচ্চার বাবার প্রেমে পড়তেও দ্বিধা বোধ করে না।
নাঈম নিজেকে ভেঙেছেন ছবিটির জন্য। তার সুঠম দেহশৈষ্টবের দারুণ ব্যবহার করেছেন নির্মাতা। তার নির্লিপ্ত মুখাবয়ব যেন কিছু না বলে অনেক কথাই বলে যায়। নূর ইমরান যেন ক্ষ্যাপাটে ঘোড়া। ভালোবাসার জন্য কি না করতে পারে সে! নির্মম পরিহাসের ভয় তার নেই।
আজাদ আবুল কালাম যে ছবিতে থাকেন সে ছবিতে অন্য কারও অভিনয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করাই মুশকিল। এই ছবিতেও নিজের জাত ধরে রেখেছেন তিনি। তাকে দেখে দর্শকের গা রি রি করে ওঠাই প্রমাণ করে তিনি নিজের চরিত্রে কতোটা সার্থক। মিথিলার এখানেই স্বার্থকতা, আজাদ আবুল কালামের পাশেও তিনি সমান উজ্জ্বল। এই মিথিলাকে আগে কেউ দেখেনি।
ফজলুর রহমান বাবু ও মুনিরা মিঠু অসহায় সন্তানের প্রতীক্ষায় দিনগোনা বাবা মায়ের চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য। তাদেও পরিণতি দর্শকের মনে কষ্টের সঞ্চার করে নিঃসন্দেহে।