মান্নাহীন ঢালিউডের ১৭ বছর
-
-
|

অকালপ্রয়াত ঢালিউড সুপারস্টার মান্না
অকালপ্রয়াত ঢালিউড সুপারস্টার মান্নার ধ্যান জ্ঞান ছিলো অভিনয়। শুটিং প্যাক-আপ হলেই তিনি ঘরে ফিরে যেতেন না। এফডিসিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তাদের সুখ-দুঃখের গল্প শুনতেন, বের করে আনতেন চলচ্চিত্রশিল্পকে আরও চাঙ্গা করার নানা পন্থা।
এতো বড় তারকা হয়েও তার ভালো একটি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কী পরিমাণ আকাঙ্খা থাকতো তা বিভিন্ন পরিচালকের সাক্ষাৎকারে শোনা যায়। ফলে শুধু তারকাখ্যাতি নয়, সর্বাঙ্গীনভাবেই মান্না হয়ে উঠেছিলেন চলচ্চিত্রের মানুষ।

সেই তারকার অকাল মৃত্যুর পর ঢালিউডে তার প্রভাব পড়েছে। সে কথা এখনো সবাই স্বীকার করেন। এখন ঢালিউড এক শাকিব খানের ওপর ভর করে চলছে। মান্না বেঁচে থাকলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো, এখনো ঢালিউডের চাকা সচল থাকতো বেলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকাই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় এই নায়কের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৮ সালের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। যদিও পরিবারের দাবি ছিল, হাসপাতালে চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ার কারণে এ অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে।

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় নায়ক মান্না জন্মগ্রহণ করেন । নিজ এলাকায় স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন মান্না। ১৯৮৪ সালে তিনি এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে আসেন। নায়করাজ রাজ্জাক মান্নাকে প্রথম চলচ্চিত্রে সুযোগ করে দেন।
‘তওবা’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তওবা’ হলেও তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম ‘পাগলী’। তবে দর্শক নজরে পড়েন ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
এরপর ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন তিনি। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ সিনেমাতে দুর্দান্ত অভিনয় করে মান্না হয়ে ওঠেন পরিচালক-প্রযোজকদের নির্ভরযোগ্য নাম। মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘অন্ধ প্রেম’, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দেশদ্রোহী’ ছবিগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে তুমুল জনপ্রিয় করে তোলে।
১৯৯৯ সালে মান্না ‘কে আমার বাবা’, ‘আম্মাজান’, ‘লাল বাদশা’র মতো সুপার-ডুপারহিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। অভিনয়, অ্যাকশন, সংলাপ বলার ধরন সবকিছু মিলেই একটা স্বতন্ত্র স্টাইল দাঁড় করেছিলেন তিনি। শুধু অভিনেতা নন, প্রযোজক হিসেবেও মান্না ছিলেন বেশ সফল। তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৮টি সিনেমা প্রযোজনা করেন তিনি। সবকটি সিনেমাই ছিল সুপারহিট।
অভিনয় জীবনে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন মান্না। একসময় বড় পর্দায় চিত্রনায়ক মান্নার সিনেমা মানেই ছিল হলভর্তি দর্শক আর সফল ব্যবসা। দেশের চলচ্চিত্র যখন অশ্লীলতার সংকটে পড়েছিল, তখন সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে মান্না গঠন করেন ‘কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা। তার প্রযোজনায় তৈরি হয় ‘লুটতরাজ’, ‘স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’সহ অনেক ব্যবসাসফল ও প্রশংসিত সিনেমা।