দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। মশাল মিছিল শেষে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা৷ এসময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকাণ্ডের সাথে যুক্ত অপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়েছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ৷
রোববার (৯ মার্চ) রাত ১০ টায় 'ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ'র ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মশাল মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে শেষ হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরেকটি মশাল মিছিল ফজিলাতুন্নেছা হল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে জড়ো হয়।
এসময় মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শহীদ মিনারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে রাত আনুমানিক ১১ টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট অবরোধ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের 'অ্যাকশন অ্যাকশন-ডাইরেক্ট অ্যাকশন, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'ধর্ষকদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে', 'তুমি কে, আমি কে? আছিয়া-আছিয়া', 'জাস্টিস-জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস', 'হলে হলে খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে', 'এসো ভাই-এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন', 'ধর্ষকদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলি আন্দোলন', 'আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই', 'চব্বিশ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই', 'ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই' প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান ইমাম বলেন, ছোট শিশু, গর্ভবতী নারী, প্রতিবন্ধী নারীসহ কোন নারীই ধর্ষকের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাইনা। আমরা নারীদের জন্য নিরাপদ দেশ চাই। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে কেউই যাতে কখনো ধর্ষণের শিকার না হয় সরকারের প্রতি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে
ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চের সহ–মুখপাত্র মালিহা নামলা বলেন, আজকে আছিয়ার খবরটা যদি ভাইরাল না হতো তাহলে কি আসিয়ার চিকিৎসাটাও হতো? নাকি আছিয়ার ধর্ষকের বিচারের দাবিতে আমরা এখানে থাকতাম? এরকম হাজার হাজার আছিয়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছে, আমাদের আশেপাশেই আছে। এই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনকে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে নারী-শিশু কেউই কখনোই ধর্ষণের শিকার না হয়।
নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশের প্রত্যাশা জানিয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান অন্বেষা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দেখেছি। এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমরা সেই একই ধরনের সংস্কৃতি দেখছি। শুধু ধর্ষণ নয় নারীদের প্রতিনিয়ত হেনস্তা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বুলিং করা হচ্ছে। আমরা নারীদের জন্য নিরাপদ দেশ চাই।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণকাণ্ডের সাথে যুক্ত অপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের মুখপাত্র সাইয়েদ শাওলি বলেন, আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়ে যে লাগাতার ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদ করছি। সেই প্রত্যেকটি ধর্ষণকান্ডের সাথে যুক্ত অপরাধীদেরকে শনাক্ত করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রাষ্ট্র অপরাধীদেরকে বিচারের আওতায় আনবে। যদি তা করা না হয়, তাহলে আমরা ধরে নেবো এই ইন্টেরিম সরকার পূর্বের স্বৈরাচারী সরকারের মতো নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।