একটি গাছ একবছরে বায়ুমণ্ডল থেকে যে পরিমাণ কার্বন মুক্ত করতে পারে, তা মাত্র ২শ গ্রাম পাউডার দিয়ে করা সম্ভব, এমন একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী।
সেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তাদের এই উদ্ভাবিত যন্ত্র খুব কম খরচে বায়ুমণ্ডলকে পুরোপুরি কার্বন মুক্ত করতে সক্ষম।
২৩ অক্টোবর বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ন্যাচার’ এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে।
নিবন্ধে বলা হয়, একটি গাছ সারাবছর বায়ুমণ্ডলকে যতটা কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত করতে সক্ষম, তা মাত্র ২শ গ্রাম পাউডার ব্যবহার করে এবং খুব কম খরচে নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে বায়ুমণ্ডলকে সেই পরিমাণ কার্বনমুক্ত করা সম্ভব।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে যে ধরনের কার্বন মুক্ত করার জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তা অনেক ব্যয়বহুল বলে গবেষক দল জানিয়েছেন। এ ধরনের যন্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃতও হয় না।
এ বিষয়ে নিবন্ধের সহলেখক ইউনির্ভাসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বারকেলের অধ্যাপক ওমর ইয়াগি বলেন, আমরা এক ধরনের পাউডার একটি টিউবের ভেতরে ভরে বারকেলের বায়ুমণ্ডলে রেখে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছি যে, এটি কীভাবে কাজ করে।
ওমর ইয়াগি বলেন, এর কার্যকারিতা আসলেই চমৎকার! আমরা দেখেছি, এটি বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড পুরোপুরি মুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, এর ভেতরে একটি কাঠি ভরে দেওয়া দেওয়া হয়েছিল, যা গ্যাসের অণুগুলি শোষণ করে নিয়েছে। এটি জৈব কাঠামোর (organic Framework-COF)-এর মতোই কাজ করে।
অধ্যাপক ওমর ইয়াগি বলেন, আমি রীতিমতো উৎফুল্ল যে, এই যন্ত্রের মতো আর কোনো যন্ত্র এত কার্যকরিভাবে বায়ুমণ্ডলকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) মুক্ত করতে পারে না! এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার বড় একটি সমাধান।
এ বিষয়ে নিবন্ধের মূল লেখক জিহুই ঝৌ বলেন, এই ‘ফ্লু গ্যাস ক্যাপচার’ পদ্ধতি ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তনে কাজ করে। কারণ, আপনি তো বায়ুমণ্ডলকে পুরোপুরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড মুক্ত করতে চাইছেন না।
আমাদের এই পদ্ধতি ১শ বছর বছর আগে বায়ুমণ্ডলের যে অবস্থা ছিল, আমাদের ঠিক সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
দ্য ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসি) বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যে পরিমাণ বেড়েছে, সেখান থেকে কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
শিল্প বিপ্লবের ফলে আগে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্ব ছিল, বর্তমানে তার চেয়ে ৫০ শতাংশ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে বেশি রয়েছে।
আইপিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কার্বন ক্যাপচার জরুরি যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সীমিত আকারে রাখতে চাই।
ওরম ইয়াগির গবেষক দল এই কার্বন ক্যাপচার যন্ত্র উদ্ভাবনে ২০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এসেছে।