দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের রমজান: শ্রম, সিয়াম ও সম্প্রীতির গল্প
-
-
|

ছবিঃ বার্তা২৪
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য রমজান এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। ধর্মীয় অনুশাসন পালনের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করেই তাদের দিন কাটে।
দুবাইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা সাধারণত গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করেন। তবে রমজান মাসে সরকারি এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মঘণ্টা কিছুটা কমানো হয়, যা প্রবাসীদের জন্য স্বস্তির বিষয়। অনেকেই নির্মাণশিল্প, রিটেইল, ডেলিভারি বা হসপিটালিটি সেক্টরে কাজ করেন, যেখানে রোজা রেখে দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
রমজানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থার উদ্যোগে মসজিদ ও অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ইফতার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। এসব ইফতার প্যাকেটে থাকে খেজুর, পানি, জুস, ফল, মাংস ও বিরিয়ানিসহ নানা জাতের ইফতার আইটেম। অনেক প্রবাসী কর্মব্যস্ততার কারণে বাসায় ইফতার তৈরির ঝামেলা এড়াতে এসব জায়গা থেকে ইফতার সংগ্রহ করেন। আসরের নামাজের পর স্থানীয় বাসিন্দাদেরও পথচারীদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে ইফতার আয়োজনের প্রচলন বেশ পুরোনো। অনেকেই মসজিদ, কর্মস্থল বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলিত হয়ে ইফতার করেন। দুবাইয়ের বাংলাদেশি হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি ও হালিমসহ দেশীয় খাবারের বিশাল সমাহার থাকে। ইফতারের আগ মুহূর্তে এসব রেস্তোরাঁয় প্রচুর ভিড় জমে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইফতার আয়োজন করা হয়।
রমজানের শেষ দশকে প্রবাসীরা ঈদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। নতুন জামা কেনা, পরিবার-পরিজনের জন্য উপহার পাঠানো এবং ঈদের ছুটিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করেন তারা। কেউ কেউ ঈদের ছুটিতে দেশে ফেরার চেষ্টা করেন, তবে অনেকে কর্মব্যস্ততার কারণে ভিডিও কলের মাধ্যমেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেন।
প্রবাসীদের অভিমত অনুযায়ী, বাংলাদেশেও আরব দেশগুলোর মতো বিত্তবান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে সব শ্রেণির রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা উচিত।
ফরিদ উদ্দিন, দুবাইয়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, “রমজানে কাজ করতে কষ্ট হলেও আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ শক্তি দেন। ইফতারির জন্য স্থানীয়রা প্রচুর সাহায্য করে। তাছাড়া, বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও একে অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা অনেক বেশি।”
ফরহাদ আহমেদ, একজন রেস্টুরেন্ট কর্মী, বলেন, “দুবাইতে ইফতার আয়োজন খুব সুন্দরভাবে হয়। আমাদের রেস্টুরেন্টেও বিশেষ ইফতার মেনু থাকে, যা বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসে। দেশের খাবার খেয়ে মনে হয় যেন বাংলাদেশেই আছি।”
আসমা আক্তার, একটি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তিনি বলেন, “রমজানে প্রবাসে এক ধরনের একাকিত্ব অনুভব হয়। তবে এখানে মসজিদগুলোতে পরিবেশ এত ভালো যে, ইবাদতে মন বসে। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও ইফতার ও নামাজের জন্য সময় বের করতে পারি, যা রমজানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।”
দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য রমজান শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। কর্মব্যস্ততার মাঝেও তারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে রমজান উদ্যাপন করেন।