জমি দখল ও লুটপাটের অভিযোগে জামালপুর আদালতে মামলা হয়েছে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ -বকশিগঞ্জ) আসনের ছয় বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ তার ৪ ভাই-ভাতিজার বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অধীনে বকশীগঞ্জ আমলি আদালতে আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর চার ভাই এবং ভাতিজাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সিদ্দিকুর রহমান।
মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও মামলার আসামিরা হলেন, তাঁর ছোট ভাই গোলাম মোস্তফা, নজরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন এবং তাঁর ভাতিজা রেজাউল করিম। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিচারক মামলাটি তদন্ত করে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, মামলার বাদী সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত উপজেলার মেরুরচর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে ছিলেন। মামলার প্রধান আসামি আবুল কালাম আজাদ জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ছয়বার এমপি নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মামলার আর্জিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, আসামিগণ সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ এবং ভূমি দখলকারী। ইতিপূর্বে ১ নম্বর আসামি আবুল কালাম আজাদের ছত্রছায়ায় এবং ক্ষমতায় ভূমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং চাঁদাবাজি কার্যকলাপ পরিচালনা করেছে। ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদের হুকুমে ও কুপরামর্শে আসামিগণ দা, লাঠি, ফালা, হেমার, লোহার খস্তা, কুড়াল, খুর, চাকু, হাতুড়ি ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাদীর বসতবাড়িতে ঢুকে নব নির্মিত ৫২ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্ষ বিশিষ্ট হাফ বিল্ডিং ঘর ভেঙে নিয়ে যায়। এতে বাঁধা দিলে বাদী সিদ্দিকুর রহমানসহ মামলায় সাক্ষীদের খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয় আসামিরা। এরপর আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় বাদীর বিল্ডিং ঘরটি ভেঙে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এ ছাড়া ধান-গম ভাঙার হলারসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি, আলমারিতে থাকা ৬ লাখ টাকা মূল্যের ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণের অলংকার, জমিতে রোপণ করা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৩৬টি মূল্যবান কাঠের গাছ এবং ৩০ শতাংশ জমির পাকা ধান চুরি করে নেয় আসামিরা।
এসব বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানায় বারবার ফোন করার চেষ্টা করলে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই ২ নম্বর আসামি গোলাম মোস্তফা ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল ফোন হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। ৩ নম্বর আসামি তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা রেজাউল করিম বাবু থানায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে খুর দিয়ে সিদ্দিকুর রহমানের পেট ফেড়ে ভূরি নামিয়ে ফেলার হুমকি দেয়। এ ছাড়া এসব বিষয়ে কোনরূপ আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলে বাদী সিদ্দিকুর রহমানকে যেখানে পাবে সেখানেই খুন জখম করবে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় আসামিরা।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান থানায় মামলা করতে গেলে আসামিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি থানায় নিতে দেয়নি।
এসব বিষয়ে মামলার বাদী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ' জমি দখলসহ লুটপাটের ঘটনায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদসহ তাঁর চার ভাই এবং এক ভাতিজার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আবুল কালাম আজাদ আমার বাবার চাচাতো ভাই। তিনি ১৯৯৭ সালে এমপি পদে থাকাকালীন ৪১ শতাংশ কৃষি জমি আমার কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে একাধিকবার জমি বেদখল করে। এনিয়ে আদালতে মামলা করলে এমপির আবুল কালাম আজাদ ২০০৯ সালে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে। আমি তিন মাস জেলে খেটে জামিনে মুক্তি পাই। এরপর আবুল কালাম আজাদ তাঁর আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে পাঁচটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখে। এসব ঘটনা এলাকাবাসী জানেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আশরাফুল হক আলাল বলেন, 'আমাদের করা মামলাটি শোনানি শেষে বিচারক মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন ।'