গোবরে ভাগ্য বদলাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারীরা
-
-
|
![ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=1280&quality=75&type=webp&path=uploads/news/2025/Feb/18/1739822486774.jpg)
ছবি: বার্তা২৪.কম
গোবর থেকে ঘুঁটা বানিয়ে স্বাবলম্বী সহস্রাধিক নারী। তবে এই কাজের জন্য কাউকে সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহায়তা করা হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গরুর গোবর থেকে নুনদা বা গুঠা তৈরি করে সহস্রাধিক গৃহিনীর বাড়তি আয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে।
যেখানে কোনো পুঁজি বা মূলধন লাগে না। শুধু বাড়িতে দুরচারটা গরু থাকলেই হয়। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রায় প্রতি পরিবারেই গরু পালন করে। এই গুঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন নয়। শতাধিক বছর থেকে এ ঐতিহ্যবাহী গুঠা তৈরির প্রথা প্রচলিত আছে। গুঠা তৈরি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলারর নিম্নবিত্ত পেশার গৃহিণীরা। তারা গুঠা তৈরি করে তা বিক্রি করে সংসারের নানা কাজে সহযোগীরা করে থাকে।
যেমন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ,পোশাক কেনা, নিজের শাড়ি,জামা সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়। শুধু তাই নয়, নিম্নবিত্ত ঘরের এ গৃহিণীরা তিলতিল করে টাকা জমিয়ে আকস্মিক বিপদের সময়ও কাজে লাগায়।এ গুঠা গ্রাম এলাকা থেকে শত শত ভ্যান চালন ক্রয় করে জেলা ও জেলার বাইরে রফতানি করে। এমনকি বিদেশেও রফতানি করা হয়। সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গুঠা তৈরির সময় প্রায় ৩০-৩৫ জন গৃহিনীর সাকেলা বলেন তাদের এ কাজটি সংসারের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে করা যায়।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিনী ও অনার্স পড়–য়া মাসা. বৃষ্টি জানান,আমার স্বামী আমাকে চারটি গরু কিনে দিয়েছেন। লেখাপড়া ও সংসারের কাজ করেও আমি গরু পালন করি। এটি আমার এক ধরনের নেশা। তার সাথে সাথে গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি গুঠা তৈরি করে বাঁশ বেঁধে তারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে শুকাই। মাঝে মাঝে এপিঠ ওপিঠ উল্টাইতে হয়। শুকিয়ে গেছে বাঁশের তৈরি করা মাচায় গুছিয়ে রাখি। মাস থেকে বা ১৫দিন পর ভ্যান নিয়ে আসা পাইকার বা ক্রেতাদের কাছে গুঠা প্রতি দুই টাকা দরে বিক্রি করে। তাতে প্রতিমাসে আমার আয় হয় প্রায় ১৮০০ টাকা। যার মধ্যে থেকে আমার স্বামীকে কিছু টাকা দিই এবং কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বিভিন্ন কাজে খরচ করি। এ কাজে আমার লেখাপড়া ও সংসারের কোনো ক্ষতি হয় না। শুধু বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ গুঠা দিয়ে সারা বছর জ্বালানি জোগান দেয়। দাই পুখুরিয়া ইউনিয়নের একেবারে অসহায় গৃহিণী আলেয়া খাতুন জানান,আমার স্বামী একজন শ্রমিক। অতি কষ্টে একটি গুরু কিনে দিয়েছেন। এটিই আমাদের সম্বল। এ গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০টি গুটা বা নুনদা তৈরি করে বিক্রি করে গরুর খাবার ক্রয় করি । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের লক্ষ্মীপুর গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে তিনি দেড় হাজার ঘুঠা বানাতে পারেন। সেগুলো রাস্তার পাশে অথবা বাড়ির মধ্যেই শুকিয়ে বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ বহন করি। এ কাজে খরচ বলতে শুধু পাটকাঠি কিনতে হয়।
মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী শ্রী সবিতা সাহা জানান আমার স্বামী একজন গরুর রাখাল। ছোট-বড় দিয়ে আমার ৩৫টি গরু আছে। দিনের বেলায় আমার স্বামী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে গরুগুলো চরায়। শুধু রাতের গোবর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ টি গুঠা তৈরি করি। সপ্তাহ বা ১৫দিন পরপর ভ্যানওয়ালার কাছে দুই টাকা দরে বিক্রি করি। সে টাকা দিয়ে গরুর জন্য খড়ি, ক্রয় করি। মাঝে মাঝে সংসারের অন্যান্য কাজেও খরচ করি। আমি এ কাজটি সংসারের করার পর করি। তবে মাঝে মাঝে আমরা শাশুড়ি সাহায্য করেন। আমার কাছে কাজটি খুব আনন্দের। কারণ এর মাধ্যমে আমি আমার কর্মের সন্ধান পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা তমলিম উদ্দিন মাস্টার বলেন গুঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য। আমাদের মা খালাবরাও এ কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রাম্য মহিলারা সাংসারিক কাজের পর গুঠা তৈরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনে এবং সংসারে সারা বছরের জ্বালানির ব্যবস্থাও হয়। গুঠা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় গাছ কাটা কম হয় এবংয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।এটি আমাদের এলাকায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে পড়ে।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, গুঠা একটি উত্তম জ্বালানি। এ জ্বালানি ছাই একটি উত্তম সার। এই গুঠা তৈরির কারিগর জেলার শত শত মহিলা বাড়তি আয় করতে পারে। আমি চেষ্টার করবো একটি কুটির শিল্পের আওতায় আনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনায় আলোচনা করবো।