তিস্তার চর থেকে ভারতকে হুঁশিয়ারি, ‘পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিন’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নজরুল ইসলাম, বার্তা২৪.কম (রংপুর থেকে)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ভারতের উত্তর সিকিম থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা নদীর মোট ৩১৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। ১৯৯৮ সালে প্রতিবেশী ভারত তাদের অংশে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করায় ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশ অংশে সৃষ্টি হয় তিস্তার নাব্যতা সংকট। ফলে বর্ষায় অল্প পানিতেই বন্যার দেখা দেয়। দু’কুল ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে, দুর্ভোগে পড়ে নদীর দুই তীরের কয়েক জেলার মানুষ।

এদিকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতায় বাংলাদেশ অংশে মরতে বসেছে নদীটি। তিস্তায় সর্বশান্ত হওয়া মানুষের দীর্ঘদিনের আর্তনাদ ঘোচাতে পারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। যা বাস্তবায়নে দীর্ঘ আন্দোলন করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এবং তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদসহ একাধিক সংগঠন। অথচ এর বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন চলছে টালবাহানা। সম্প্রতি এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি আবারো জোরালো হয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ডাকে। এরই মধ্যে মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সভা, সমাবেশ পদযাত্রা শেষ করে করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

দাবি আদায়ে তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি'র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু ডাকে তিস্তা চরের ১১টি পয়েন্টে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করছে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার কয়েক লাখ মানুষ। এসব সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মিত্র দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, তবে ন্যায্য পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাইলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে আমাদের নাগরিককে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না, লড়াই করে আমাদের গুলো অধিকার আদায় করবো, ন্যায্য পাওনা বুঝে নেবো। এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে, সেটা হলো, বাঁচা মরার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলায় কথা আছে ঠেলার নাম বাবাজি। আজকের এই কর্মসূচি যখন ৬০ দিন আগে ঘোষণা করা হয়েছিল এরপর গত কয়েক দিন আগে ভারত পানি ছাড়া শুরু করেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করতে চাই, যদি তিস্তার ন্যায্য হিসসা না দাও তাহলে আমরা এককভাবে 'তিস্তা মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়ন করব। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার আছে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।

বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শুকনো মৌসুমে ভারত উজানের পানি আটকে রাখে, আর বর্ষার মৌসুমে ছেড়ে দেয়। যার ফলে আমাদের এখানে বন্যায় সব ভেসে যায়। এটা কি কোন বন্ধুর পরিচয়? কোন ভাবেই না। তাই ভারত আমাদের বন্ধু না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব এখন সময় এসেছে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময় এসেছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিসসা পেতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সরকারকে যেতে হবে। মাওলানা ভাষানীর মত প্রয়োজন হলে আবারো আমরা লং মার্চের আয়োজন করব। এবাই তিস্তার লড়াই আমাদের জিততেই হবে, যদি এই জনপদের লোকদের বাচাতে চাই।

একই দাবিতে রংপুরের গংগাচওড়া বাজার পয়েন্টে সমাবেশে অতিথির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বায়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অববাহিকার উপর যতগুলো দেশ রয়েছে সবাই সেই নদীর পানি সমভাবে পাবেন। কিন্তু ভারত সরকার সেই আইন লঙ্ঘন করে তিস্তায় গজলডোবা দিয়ে পানি একতরফা ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি তুলে তখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতকে চাপে রাখে। ভারত তখন দাবি করে তাদের অঙ্গরাজ্য সরকার মানছে না। তাই সম্ভব যাচ্ছে না। এসব হচ্ছে ভারতে ছলনা। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় তারা সমাধান করবে। চুক্তির দরকার কি? আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ তিস্তার যে হিস্যা পায় তা বুঝে দেয়া উচিত। তা না করে ভারত সরকার তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে টালবাহনা করছে। যা বাংলাদেশের মানুষ মানবে না।