ক্যান্সার প্রতিরোধে শৈশব থেকে যা করণীয়
ক্যান্সার খুব জটিল এক অসুখ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূত্রপাতের কারণ অজানা হওয়ার কারণে এটি একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। ক্যান্সারের কোনো ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ক্যান্সারকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। অনেক সময় জীবনধারার কিছু অভ্যাসের কারণে মানুষ অজান্তেই ক্যান্সারের বীজ বপন করে বসে। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। বিশ্বে যত ক্যান্সার রোগী আছে; বিশেষ করে শিশুরা, তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ অজানা।
শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোন কারণে আদরের শিশুটির জীবনে ক্যান্সারের মতো রোগের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসবে, তা বলা মুশকিল। তবে নিজের শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসক উষ্মা সিং এই ব্যাপারে আলোচনা করেন। শিশুর সুস্থ এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চতকরণে বাবা-মায়েরা এইসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:
১.ভালো অভ্যাস: শিশুদের খুব ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করলে অন্যান্য রোগের মতো ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমানো সম্ভব। শিশু শরীরে সরাসরি ক্যান্সারকোষ সৃষ্টি হওয়া থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে প্রাপ্তবয়সে শরীরে ম্যালিগন্যান্সি তৈরি হওয়া রোধ করা যেতে পারে।
যেমন ধূমপান করার ফলে যা যা ক্ষতি হতে পারে, তা শিশুদের জানাতে হবে। রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন মাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। এছাড়া ফল, সবজি, শস্যজাতীয় খাদ্যাভ্যাস যেভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, আবার চিনি ও বাইরের খাবার যেভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে সেসব শিশুদের ছোট থেকেই জানাতে হবে।
নবজাতক শিশুদের অবশ্যই মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এর বাইরে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে রান্না করা বা খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। অনেক সময় এসব পাত্র তৈরিতে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হয়।
ছোট থেকেই প্রতিদিন শরীরচর্চা বা যোগাসন আর ধ্যান করার অভ্যাস করতে হবে। এসব অভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
২.প্রতিকার ও চিকিৎসা: যেসব শিশুরা এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, এপসটাইন-বারের মতো রোগ আছে তাদের ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধরনের ক্রোনিক রোগের চিকিৎসা ও টিকাদান সঠিক ও পরিচ্ছন্নভাবে করতে হবে, যেন প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর হয়। ‘হেপাটাইটিস বি’, ‘এইচপিভি’র মতো রোগের টিকা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। এতে ভবিষ্যতে লিভার, সার্ভিকাল ও ওরাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। শিশুদের ক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান, এক্স-রে জাতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক পদার্থসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার একেবারেই না করার চেষ্টা করতে হবে।
৩.পরিবেশগত সাবধানতা: ক্যান্সারকোষ সৃষ্টিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর এক্স-রে রশ্মি, সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়া, সীসা, অ্যাসবেস্টসের মতো ক্ষতিকর পদার্থ থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। অবশ্যই ঘর-বাড়ি পর্যাপ্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৪. জীন ও রোগ সনাক্তকরণ: শতকরা ১০ ভাগ শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের রোগসৃষ্টিতে বংশগত জীনের প্রভাব ছিল। পারিবারিকভাবে যাদের ক্যান্সারের ঘটনা দেখা যায়, তাদের শিশুদের নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো উপসর্গ সন্দেহজনক মনে হলেই চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে।