জিভে জল আনা তুর্কিস রেসিপি
-
-
|

তুর্কিস রেসিপি / ছবি: বার্তা২৪
বাংলাদেশ এবং তুরস্কের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন শক্তিশালী হচ্ছে। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ কূটনীতির অংশ হিসেবে, তুরস্কের কোনিয়া ও বাংলাদেশের সিলেট সিস্টার সিটি হিসাবে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সমঝোতা সই করেছে। শাপলা ফুলখ্যাত কোনিয়ার ঐতিহ্যবাহী শহর বেশেহির মিউনিসিপ্যালিটি জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহকে ‘বাংলাদেশ শাপলা দিবস’ ঘোষণা করেছে। কোনিয়ার ‘বাংলাদেশ অনারারি কনস্যুলেট’র উদ্যোগে বেশেহির শহরে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে আঙ্কারাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে।
বেশেহির মিউনিসাপ্যালিটির ৫০ জনকে মৌলিক বাংলা ভাষা শেখার জন্য সনদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রান্না ও স্বাদ সংস্কৃতির সঙ্গে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বেশেহির শহরের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বাংলাদেশের রন্ধন সংস্কৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যময় বেশেহিরের বিশেষ স্বাদের তুর্কি রেসিপি তুলে ধরছি বাংলাদেশি রসনা বিলাসীদের জন্য। ভোজনপ্রিয় তুর্কিদের জন্যও বাংলাদেশি কিছু রেসিপি তুরস্কের গণমাধ্যমে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে রইলো বেশেহির
কয়েকটি তুর্কি স্বাদ শেয়ার করেছেন ডেনিজ বুলকুর (অনারারি কনসাল জেনারেল বাংলাদেশ, কোনিয়া প্রদেশ, তুরস্ক)-
১. সাজান দোলমাসি/ স্টাফড কার্প মাছ
উপকরণ:
১. ১টি সম্পূর্ণ কার্ড ফিশ (৩ কেজি)
২. আধা চা চামচ গুঁড়ো লাল মরিচ
৩. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
৪. আধা চা চামচ গুঁড়ো কালো মরিচ
৫. ২-৩ টেবিল চামচ রান্নার তেল
৬.আধা চা চামচ জিরা গুঁড়ো
৭. ১টি বড় আকারের পেঁয়াজ
৮. ১ টেবিল চামচ লবণ
৯. ২ গ্লাস চাল
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ম্যারিনেট করা: তাজা কার্প মাছটি পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। টমেটো পেস্ট ও তেল মিশিয়ে মাছের গায়ে মাখিয়ে দিন এবং সেটিকে রেখে দিন।
২. স্টাফিং তৈরি: একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এরপর টমেটো পেস্ট যোগ করে কিছুক্ষণের জন্য নাড়ুন। জিরা গুঁড়ো, কালো মরিচ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর চাল মিশিয়ে দিন এবং পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রান্না করে নিন যতক্ষণ পর্যন্ত চাল সম্পূর্ণ সেদ্ধ না হয়।
৩. মাছ স্টাফিং ও সিল করা: ম্যারিনেট করা মাছের পেটের ভেতর তৈরিকৃত স্টাফিং বা পুর ভরে দিন। স্টাফিং বাইরে যাতে বেরিয়ে না আসে, সে জন্য মাছের পেট সেলাই করুন বা অন্যভাবে ছেড়ে দিন।
৪. বেক করা: বেকিং ট্রেতে স্টাফিং করা মাছটি রাখুন। আগে থেকে গরম করে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ২৫-৩০ মিনিট বেক করুন যতক্ষণ না মাছ সোনালি আকার নেয় ও সম্পূর্ণ সেদ্ধ হয়। এরপর কিছু সবজি সেদ্ধ করে প্লেটের চারপাশে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশেও অনেক রেস্তোরাঁয় প্রায় এরকম মাছ পরিবেশন করা হয়।
২. ইতলি ইউভালাক
উপকরণ:
১. ২৫০ গ্রাম কিমা
২. আধা চা চামচ গুঁড়ো কালো মরিচ
৩. ১টি ছোট পেঁয়াজ
৪. আধা চা চামচ লবণ
৫. ১ কাপ সেদ্ধ ছোলা
৬. ২ টেবিল চামচ রান্নার তেল
৬. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
৭. আধা কাপ সূক্ষ্ম বুলগুর বা ভাঙা চাল
৮. ১টি ডিম
রন্ধন প্রণালি:
১. ছোট মিটবল তৈরি করা: একটি বাটিতে কিমা, পেঁয়াজ কুঁচি, বুলগুর/চাল, ডিম, লবণ এবং গুঁড়ো কালো মরিচ মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে মেখে, ছোলা আকারের বল তৈরি করুন।
২. রান্না করা: একটি প্যানে অলিভ বা খাওয়ার তেল গরম করুন। টমেটো পেস্ট দিয়ে ২- ৩ মিনিট রান্না করুন।
৩. আলাদা সেদ্ধ করে নেয়া ছোলা যোগ করুন এবং প্যানের উপরের দিক থেকে ২ আঙুল পরিমাণ পানি ঢেলে দিন। ১০-১৫ মিনিট ফোটানোর পর চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
৪.গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশের চটপটি তৈরির সময় যে ছোলাবুটের তরকারি তৈরি করা হয়, অনেকটা সে রকম।
৩. লাহানা সারামাসি / পাতাকপি রোল
উপকরণ:
১. ১টি মাঝারি আকারের বাঁধাকপি
২. ১ কাপ বুলগুর বা চাল
৩. আধা কাপ রান্নার তেল
৪. ৫০০ গ্রাম কিমা
৫. ২টি ডিম
৬. আধা গোছা ধনেপাতা
৭. ১ চা চামচ শুকনো পুদিনা
৮. ১ চা চামচ গোল মরিচ গুঁড়া
৯. ২টি পেঁয়াজ
১০. ১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া
১১. ২টি স্প্রিং পেঁয়াজ
১২. ২টি পেঁয়াজ
সসের জন্য:
১. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
২. ১ টেবিল চামচ মরিচ পেস্ট (যদি না থাকে, অতিরিক্ত টমেটো পেস্ট ব্যবহার করুন)
৩. ৩ টেবিল চামচ মাখন
৪. ২-৩টি রসুন কোয়া
৫. গরম পানি
প্রস্তুত প্রণালি:
১. ফিলিং তৈরি করা: একটি বড় বাটিতে কিমা, ডিম, পেঁয়াজ, বুলগুর বা চাল, টমেটো পেস্ট, শুকনো পুদিনা, গুঁড়ো কালো মরিচ, রান্নার তেল, সূক্ষ্ম কাটা ধনেপাতা এবং বসন্ত পেঁয়াজ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
২. বাঁধাকপি প্রস্তুত করা: বাঁধাকপির পাতা আলাদা করুন এবং গরম পানিতে সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না নরম হয়। সেদ্ধ পাতা আয়তাকার টুকরো করে কেটে নিন।
৩. স্টাফিং এবং রোল করা: প্রতিটি বাঁধাকপির টুকরোর উপর এক চামচ ফিলিং দিন। টাইট করে রোল করুন এবং সিম-সাইড নিচে রেখে মাঝারি আকারের বেকিং ট্রেতে সাজান।
৪. সস তৈরি করা: একটি প্যানে মাখন গলিয়ে টমেটো পেস্ট এবং মরিচ পেস্ট দিন। যদি মরিচ পেস্ট না থাকে, অতিরিক্ত টমেটো পেস্ট ব্যবহার করুন। রসুন কুঁচি যোগ করে হালকা ভাজুন। গরম পানি ঢেলে ভালোভাবে মেশান।
৫. বেক করা: প্রস্তুতকৃত সস বাঁধাকপির রোলগুলোর উপর ঢেলে দিন। ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করা ওভেনে রেখে বেক করুন যতক্ষণ না সম্পূর্ণ রান্না হয়।
৬. গরম গরম পরিবেশন করুন। এই রেসিপিটি বাংলাদেশের যে কোনো সবজি রোলের আদলে খেতে পারবেন।
এগ অনিয়ন / ডিম দোঁপেয়াজা
উপকরণ:
১. ৪টি পেঁয়াজ
২. ৪টি ডিম
৩. আধা চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
৪.৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা রান্নার তেল
প্রস্তুত প্রণালি:
১. পেঁয়াজ ভাজা: মাঝারি আঁচে একটি প্যানে রান্নার তেল গরম করুন। পেঁয়াজ কুচি নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। লাল মরিচ গুঁড়ো এবং লবণ মেশান। যদি মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করেন, তবে পেঁয়াজ ক্যারামেলাইজ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
২. ডিম যোগ করা: পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে একে একে ডিম ভেঙে প্যানে দিন। আপনার পছন্দমতো ডিম যতটা শক্ত বা নরম চান, সেই অনুযায়ী রান্না করুন।
৩. পরিবেশন: চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশের ডিম প্রিয়রা যারা অমলেট বা মামলেট খান, তারা এটা সবাই পছন্দ করবেন।
হোমমেড ওয়ালনাট বাকলাভা
উপকরণ:
ডোয়ের জন্য:
১. ১টি ডিম
২.আধা কাপ দুধ
৩. আধা কাপ সূর্যমুখীর তেল
৪.১ প্যাকেট বেকিং পাউডার
৫. ২ টেবিল চামচ ভিনেগার
৬. ডো পাতার জন্য কর্ণ স্টার্চ
স্টাফিংয়ের জন্য:
২ কাপ গুঁড়ো আখরোট
১ কাপ গুঁড়ো বাদাম
টপিংয়ের জন্য:
১ কাপ সূর্যমুখীর তেল
৩ টেবিল চামচ মাখন
সিরার জন্য:
৩.৫ কাপ চিনি
৩ কাপ পানি
প্রস্তুত প্রণালি:
১. ডো তৈরি করুন: ডিম, দুধ, সূর্যমুখীর তেল, বেকিং পাউডার এবং ভিনেগার মিশিয়ে একটি নন-স্টিকি ডো তৈরি করুন। ডো টি ডিম আকৃতির ভাগে ভাগ করুন। প্রতিটি টুকরোতে কর্ন স্টার্চ দিয়ে গুঁড়ো করে পাতলা করে বেলে নিন।
২. স্টাফিং বা পুর যোগ করুন: বেলে রাখা ডোর উপর গুঁড়ো আখরোট ও বাদামের মিশ্রণ সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। রোলিং পিন দিয়ে ডো রোল করুন, তারপর দুই পাশ থেকে কেন্দ্রের দিকে হালকাভাবে ঠেলে ফোল্ড তৈরি করুন। রোলটি রোলিং পিন থেকে সরিয়ে দুই আঙুল চওড়া টুকরো করে কাটুন। টুকরোগুলো বেকিং ট্রেতে সাজান।
৩. টপিং এবং বেকিং: একটি প্যানে সূর্যমুখীর তেল ও মাখন গলিয়ে নিন। গরম মিশ্রণটি প্রস্তুত ডো টুকরোগুলোর উপর সমানভাবে ঢেলে দিন। আগে থেকে গরম করা ওভেনে ১৮০ ডিগি্র সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহােইট) তাপমাত্রায় সোনালি হওয়া পর্যন্ত বেক করুন।
৪. সিরা তৈরি করুন: একটি আলাদা পাত্রে চিনি ও পানি মেশান। ফুটিয়ে ঘন হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন।
৫. চূড়ান্ত প্রস্তুত ও পরিবেশন: বাকলাভা সোনালি হয়ে গেলে ওভেন থেকে নামিয়ে নিন। গরম সিরা গরম বাকলাভার উপর ঢেলে দিন। এটি ভিজে ভিজে ভেতরে যেতে এবং ঠান্ডা হতে দিন। এরপর পরিবেশন করুন।
তার্কিশ এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের কাছে বাংলাদেশে যে কোন মিষ্টান্ন হার মানবে।