রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ঠিক করুন ঘুমের অভ্যাস
-
-
|

রাতে ঘুমের ঘাটতি / ছবি: সংগৃহীত
ঘুম দৈনন্দিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় শরীর বিশ্রাম নেয় এবং শরীরে হওয়া ক্ষয়গুলো পুরণ হয়। সারাদিনের পরিশ্রম এবং ক্লান্তির পর পর্যাপ্ত ঘুম ও পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। রাতে রাতে ঘুম ভালো না হলে সকালে উঠে প্রায়ই ক্লান্ত লাগে। অনেকেই ঘুম থেকেই ওঠার মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা হতে পারে। তবে হয়তো এই ক্লান্তি এবং মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা সাধারণ কোনো কারণে হচ্ছে না, বরং রক্তে শর্করার পরিমাণ ভারসাম্য হারাচ্ছে।
চায়না ওয়েস্টলেক ল্যাবরেটরি অব লাইফ সায়েন্সের এন্ড বায়োমেডিসিন কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘুমের সঙ্গে রক্তের শর্করা মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঘুমের সঙ্গে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ এর পরিমাণের সম্পর্ক রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ভালো খাবার-দাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম করা নয় শুধু, সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন রক্ষা করার অংশ হিসেবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমও প্রয়োজন।
রক্তে শর্করা অসামঞ্জস্যতা কেবল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের জন্য উদ্বেগজনক নয়। এই সমস্যা আরও অনেক মারাত্মক সমস্যা; যেমন- শক্তিমাত্রা কমিয়ে দেওয়া, বারবার ক্ষুধা লাগা, বিপাক গতি মন্থর করা, ইনসুলিন প্রতিরোধ করাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের অবনতি করাতেও দায়ী। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানো ছাড়াও, দৈনিক চিনি সেবন মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৫ গ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৬ গ্রাম চিনি গ্রহণ মাত্রা বিবেচনা করা হয়।
এই সমস্যা এড়ানোর জন্য ঘুমের রুটিনকে উন্নত করতে হবে। সেজন্য যা করবেন-
১. ৭-৮ ঘণ্টা দৈনিক ঘুম: হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং বিপাকীয় কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখার জন্য আপনার শরীরের অন্তত প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানো প্রয়োজন।
২. সময় নির্ধারণ: প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া জরুরি। প্রতিদিনের ঘুমানোর সময়ের উপর নির্ভর করে আমাকে অভ্যন্তরীণ ঘড়ির রুটিন। তাই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমালে এই দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য হয়।
৩. স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন: ঘুমানোর সময় কোনো ডিভাইস কাছে রাখা উচিত নয়। ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং টিভি থেকে আসা নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। এতে ঘুমানোর সময় বিলম্ব হয় এবং নির্ধারিত সময়ে ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. রাতের খাবার: ঘুমানোর আগে খুব বেশি খাবার খেলে রক্তে অবিভাজিত গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এই কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৫. সকালের সূর্যস্নান: ভোরে দিনের প্রথমে আসা প্রাকৃতিক আলো শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভোরের আলোর সংস্পর্শে আসা সার্কাডিয়ান ছন্দে প্রভাব ফেলে। এতে রাতে ভালো ঘুম হয়।
স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের উপর মনোযোগ দেওয়া যথেষ্ট নয়। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুমের অভ্যাসও ঠিক করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট ঘুমানোর সময় মেনে চলা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস