শীত এলে অনেকের হাত-পা একেবারেই গরম হয় না। ফলে কেউ কেউ রাতে ঘুমানোর সময় মোজা পড়ে শুয়ে পড়েন। এতে শীক কম অনুভূত হলেও অভ্যাসটা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। সারারাত মোজা পড়ে ঘুমানোর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
জেনে নিন কী কী সেগুলো-
১. মোজা পড়ে ঘুমালে হৃদস্পন্দনের তারতম্য ঘটে। তাছাড়া মোজা পরে ঘুমালে ব্লাড সার্কুলেশন ধীর হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
২. নাইলন অথবা ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কাপড়ে তৈরি মোজা দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে সুতির মোজা ব্যবহার করা যায়।
৩. আমরা অনেক সময় খুব টাইট মোজা পরি। সে ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ঘুমের সময় অস্বস্তি হতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে মোজা খুলে রাখাই ভালো।
বিজ্ঞাপন
৪. পা ঘামতে শুরু করে, ফলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে। তাই নিয়মিত পরার জন্য সুতির মোজাই ভালো। যা আপনার পা থেকে ঘাম শোষণ করে এবং সংক্রমণ রোধ করে।
তবে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ঘুমের আগে গরম তেল দিয়ে পা ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে একটি সুতির মোজা পরে নিতে পারেন। তবে ঘুমানোর আগে মোজাটি খুলে নিতে ভুলবেন না যেন।
বাংলাদেশ এবং তুরস্কের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন শক্তিশালী হচ্ছে। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ কূটনীতির অংশ হিসেবে, তুরস্কের কোনিয়া ও বাংলাদেশের সিলেট সিস্টার সিটি হিসাবে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সমঝোতা সই করেছে। শাপলা ফুলখ্যাত কোনিয়ার ঐতিহ্যবাহী শহর বেশেহির মিউনিসিপ্যালিটি জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহকে ‘বাংলাদেশ শাপলা দিবস’ ঘোষণা করেছে। কোনিয়ার ‘বাংলাদেশ অনারারি কনস্যুলেট’র উদ্যোগে বেশেহির শহরে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে আঙ্কারাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে।
বেশেহির মিউনিসাপ্যালিটির ৫০ জনকে মৌলিক বাংলা ভাষা শেখার জন্য সনদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রান্না ও স্বাদ সংস্কৃতির সঙ্গে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বেশেহির শহরের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বাংলাদেশের রন্ধন সংস্কৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যময় বেশেহিরের বিশেষ স্বাদের তুর্কি রেসিপি তুলে ধরছি বাংলাদেশি রসনা বিলাসীদের জন্য। ভোজনপ্রিয় তুর্কিদের জন্যও বাংলাদেশি কিছু রেসিপি তুরস্কের গণমাধ্যমে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে রইলো বেশেহির
কয়েকটি তুর্কি স্বাদ শেয়ার করেছেন ডেনিজ বুলকুর (অনারারি কনসাল জেনারেল বাংলাদেশ, কোনিয়া প্রদেশ, তুরস্ক)-
১. সাজান দোলমাসি/ স্টাফড কার্প মাছ
উপকরণ:
১. ১টি সম্পূর্ণ কার্ড ফিশ (৩ কেজি)
২. আধা চা চামচ গুঁড়ো লাল মরিচ
৩. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
৪. আধা চা চামচ গুঁড়ো কালো মরিচ
৫. ২-৩ টেবিল চামচ রান্নার তেল
৬.আধা চা চামচ জিরা গুঁড়ো
৭. ১টি বড় আকারের পেঁয়াজ
৮. ১ টেবিল চামচ লবণ
৯. ২ গ্লাস চাল
কার্প ফিশ
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ম্যারিনেট করা: তাজা কার্প মাছটি পরিষ্কার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। টমেটো পেস্ট ও তেল মিশিয়ে মাছের গায়ে মাখিয়ে দিন এবং সেটিকে রেখে দিন।
২. স্টাফিং তৈরি: একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এরপর টমেটো পেস্ট যোগ করে কিছুক্ষণের জন্য নাড়ুন। জিরা গুঁড়ো, কালো মরিচ গুঁড়ো, লাল মরিচ গুঁড়ো যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর চাল মিশিয়ে দিন এবং পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রান্না করে নিন যতক্ষণ পর্যন্ত চাল সম্পূর্ণ সেদ্ধ না হয়।
৩. মাছ স্টাফিং ও সিল করা: ম্যারিনেট করা মাছের পেটের ভেতর তৈরিকৃত স্টাফিং বা পুর ভরে দিন। স্টাফিং বাইরে যাতে বেরিয়ে না আসে, সে জন্য মাছের পেট সেলাই করুন বা অন্যভাবে ছেড়ে দিন।
৪. বেক করা: বেকিং ট্রেতে স্টাফিং করা মাছটি রাখুন। আগে থেকে গরম করে ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ২৫-৩০ মিনিট বেক করুন যতক্ষণ না মাছ সোনালি আকার নেয় ও সম্পূর্ণ সেদ্ধ হয়। এরপর কিছু সবজি সেদ্ধ করে প্লেটের চারপাশে দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশেও অনেক রেস্তোরাঁয় প্রায় এরকম মাছ পরিবেশন করা হয়।
২. ইতলি ইউভালাক
উপকরণ:
১. ২৫০ গ্রাম কিমা
২. আধা চা চামচ গুঁড়ো কালো মরিচ
৩. ১টি ছোট পেঁয়াজ
৪. আধা চা চামচ লবণ
৫. ১ কাপ সেদ্ধ ছোলা
৬. ২ টেবিল চামচ রান্নার তেল
৬. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
৭. আধা কাপ সূক্ষ্ম বুলগুর বা ভাঙা চাল
৮. ১টি ডিম
ইতালি ইউভালাক
রন্ধন প্রণালি:
১. ছোট মিটবল তৈরি করা: একটি বাটিতে কিমা, পেঁয়াজ কুঁচি, বুলগুর/চাল, ডিম, লবণ এবং গুঁড়ো কালো মরিচ মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে মেখে, ছোলা আকারের বল তৈরি করুন।
২. রান্না করা: একটি প্যানে অলিভ বা খাওয়ার তেল গরম করুন। টমেটো পেস্ট দিয়ে ২- ৩ মিনিট রান্না করুন।
৩. আলাদা সেদ্ধ করে নেয়া ছোলা যোগ করুন এবং প্যানের উপরের দিক থেকে ২ আঙুল পরিমাণ পানি ঢেলে দিন। ১০-১৫ মিনিট ফোটানোর পর চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
৪.গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশের চটপটি তৈরির সময় যে ছোলাবুটের তরকারি তৈরি করা হয়, অনেকটা সে রকম।
৩. লাহানা সারামাসি / পাতাকপি রোল
উপকরণ:
১. ১টি মাঝারি আকারের বাঁধাকপি
২. ১ কাপ বুলগুর বা চাল
৩. আধা কাপ রান্নার তেল
৪. ৫০০ গ্রাম কিমা
৫. ২টি ডিম
৬. আধা গোছা ধনেপাতা
৭. ১ চা চামচ শুকনো পুদিনা
৮. ১ চা চামচ গোল মরিচ গুঁড়া
৯. ২টি পেঁয়াজ
১০. ১ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া
১১. ২টি স্প্রিং পেঁয়াজ
১২. ২টি পেঁয়াজ
সসের জন্য:
১. ১ টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট
২. ১ টেবিল চামচ মরিচ পেস্ট (যদি না থাকে, অতিরিক্ত টমেটো পেস্ট ব্যবহার করুন)
৩. ৩ টেবিল চামচ মাখন
৪. ২-৩টি রসুন কোয়া
৫. গরম পানি
পাতাকপি রোল
প্রস্তুত প্রণালি:
১. ফিলিং তৈরি করা: একটি বড় বাটিতে কিমা, ডিম, পেঁয়াজ, বুলগুর বা চাল, টমেটো পেস্ট, শুকনো পুদিনা, গুঁড়ো কালো মরিচ, রান্নার তেল, সূক্ষ্ম কাটা ধনেপাতা এবং বসন্ত পেঁয়াজ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
২. বাঁধাকপি প্রস্তুত করা: বাঁধাকপির পাতা আলাদা করুন এবং গরম পানিতে সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না নরম হয়। সেদ্ধ পাতা আয়তাকার টুকরো করে কেটে নিন।
৩. স্টাফিং এবং রোল করা: প্রতিটি বাঁধাকপির টুকরোর উপর এক চামচ ফিলিং দিন। টাইট করে রোল করুন এবং সিম-সাইড নিচে রেখে মাঝারি আকারের বেকিং ট্রেতে সাজান।
৪. সস তৈরি করা: একটি প্যানে মাখন গলিয়ে টমেটো পেস্ট এবং মরিচ পেস্ট দিন। যদি মরিচ পেস্ট না থাকে, অতিরিক্ত টমেটো পেস্ট ব্যবহার করুন। রসুন কুঁচি যোগ করে হালকা ভাজুন। গরম পানি ঢেলে ভালোভাবে মেশান।
৫. বেক করা: প্রস্তুতকৃত সস বাঁধাকপির রোলগুলোর উপর ঢেলে দিন। ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করা ওভেনে রেখে বেক করুন যতক্ষণ না সম্পূর্ণ রান্না হয়।
৬. গরম গরম পরিবেশন করুন। এই রেসিপিটি বাংলাদেশের যে কোনো সবজি রোলের আদলে খেতে পারবেন।
এগ অনিয়ন / ডিম দোঁপেয়াজা
উপকরণ:
১. ৪টি পেঁয়াজ
২. ৪টি ডিম
৩. আধা চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়ো
৪.৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা রান্নার তেল
ডিম দোপেঁয়াজা
প্রস্তুত প্রণালি:
১. পেঁয়াজ ভাজা: মাঝারি আঁচে একটি প্যানে রান্নার তেল গরম করুন। পেঁয়াজ কুচি নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। লাল মরিচ গুঁড়ো এবং লবণ মেশান। যদি মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করেন, তবে পেঁয়াজ ক্যারামেলাইজ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
২. ডিম যোগ করা: পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে একে একে ডিম ভেঙে প্যানে দিন। আপনার পছন্দমতো ডিম যতটা শক্ত বা নরম চান, সেই অনুযায়ী রান্না করুন।
৩. পরিবেশন: চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। বাংলাদেশের ডিম প্রিয়রা যারা অমলেট বা মামলেট খান, তারা এটা সবাই পছন্দ করবেন।
হোমমেড ওয়ালনাট বাকলাভা
উপকরণ:
ডোয়ের জন্য:
১. ১টি ডিম
২.আধা কাপ দুধ
৩. আধা কাপ সূর্যমুখীর তেল
৪.১ প্যাকেট বেকিং পাউডার
৫. ২ টেবিল চামচ ভিনেগার
৬. ডো পাতার জন্য কর্ণ স্টার্চ
স্টাফিংয়ের জন্য:
২ কাপ গুঁড়ো আখরোট
১ কাপ গুঁড়ো বাদাম
টপিংয়ের জন্য:
১ কাপ সূর্যমুখীর তেল
৩ টেবিল চামচ মাখন
সিরার জন্য:
৩.৫ কাপ চিনি
৩ কাপ পানি
ওয়ালনাট বাকলাভা
প্রস্তুত প্রণালি:
১. ডো তৈরি করুন: ডিম, দুধ, সূর্যমুখীর তেল, বেকিং পাউডার এবং ভিনেগার মিশিয়ে একটি নন-স্টিকি ডো তৈরি করুন। ডো টি ডিম আকৃতির ভাগে ভাগ করুন। প্রতিটি টুকরোতে কর্ন স্টার্চ দিয়ে গুঁড়ো করে পাতলা করে বেলে নিন।
২. স্টাফিং বা পুর যোগ করুন: বেলে রাখা ডোর উপর গুঁড়ো আখরোট ও বাদামের মিশ্রণ সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। রোলিং পিন দিয়ে ডো রোল করুন, তারপর দুই পাশ থেকে কেন্দ্রের দিকে হালকাভাবে ঠেলে ফোল্ড তৈরি করুন। রোলটি রোলিং পিন থেকে সরিয়ে দুই আঙুল চওড়া টুকরো করে কাটুন। টুকরোগুলো বেকিং ট্রেতে সাজান।
৩. টপিং এবং বেকিং: একটি প্যানে সূর্যমুখীর তেল ও মাখন গলিয়ে নিন। গরম মিশ্রণটি প্রস্তুত ডো টুকরোগুলোর উপর সমানভাবে ঢেলে দিন। আগে থেকে গরম করা ওভেনে ১৮০ ডিগি্র সেলসিয়াস (৩৫০ ডিগ্রি ফারেনহােইট) তাপমাত্রায় সোনালি হওয়া পর্যন্ত বেক করুন।
৪. সিরা তৈরি করুন: একটি আলাদা পাত্রে চিনি ও পানি মেশান। ফুটিয়ে ঘন হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন।
৫. চূড়ান্ত প্রস্তুত ও পরিবেশন: বাকলাভা সোনালি হয়ে গেলে ওভেন থেকে নামিয়ে নিন। গরম সিরা গরম বাকলাভার উপর ঢেলে দিন। এটি ভিজে ভিজে ভেতরে যেতে এবং ঠান্ডা হতে দিন। এরপর পরিবেশন করুন।
তার্কিশ এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের কাছে বাংলাদেশে যে কোন মিষ্টান্ন হার মানবে।
ঘুম দৈনন্দিন কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় শরীর বিশ্রাম নেয় এবং শরীরে হওয়া ক্ষয়গুলো পুরণ হয়। সারাদিনের পরিশ্রম এবং ক্লান্তির পর পর্যাপ্ত ঘুম ও পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। রাতে রাতে ঘুম ভালো না হলে সকালে উঠে প্রায়ই ক্লান্ত লাগে। অনেকেই ঘুম থেকেই ওঠার মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা হতে পারে। তবে হয়তো এই ক্লান্তি এবং মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা সাধারণ কোনো কারণে হচ্ছে না, বরং রক্তে শর্করার পরিমাণ ভারসাম্য হারাচ্ছে।
চায়না ওয়েস্টলেক ল্যাবরেটরি অব লাইফ সায়েন্সের এন্ড বায়োমেডিসিন কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘুমের সঙ্গে রক্তের শর্করা মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঘুমের সঙ্গে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ এর পরিমাণের সম্পর্ক রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ভালো খাবার-দাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম করা নয় শুধু, সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন রক্ষা করার অংশ হিসেবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমও প্রয়োজন।
রক্তে শর্করা অসামঞ্জস্যতা কেবল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের জন্য উদ্বেগজনক নয়। এই সমস্যা আরও অনেক মারাত্মক সমস্যা; যেমন- শক্তিমাত্রা কমিয়ে দেওয়া, বারবার ক্ষুধা লাগা, বিপাক গতি মন্থর করা, ইনসুলিন প্রতিরোধ করাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের অবনতি করাতেও দায়ী। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানো ছাড়াও, দৈনিক চিনি সেবন মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৫ গ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৬ গ্রাম চিনি গ্রহণ মাত্রা বিবেচনা করা হয়।
এই সমস্যা এড়ানোর জন্য ঘুমের রুটিনকে উন্নত করতে হবে। সেজন্য যা করবেন-
১. ৭-৮ ঘণ্টা দৈনিক ঘুম: হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং বিপাকীয় কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখার জন্য আপনার শরীরের অন্তত প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানো প্রয়োজন।
২. সময় নির্ধারণ: প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া জরুরি। প্রতিদিনের ঘুমানোর সময়ের উপর নির্ভর করে আমাকে অভ্যন্তরীণ ঘড়ির রুটিন। তাই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমালে এই দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য হয়।
৩. স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন: ঘুমানোর সময় কোনো ডিভাইস কাছে রাখা উচিত নয়। ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং টিভি থেকে আসা নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। এতে ঘুমানোর সময় বিলম্ব হয় এবং নির্ধারিত সময়ে ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. রাতের খাবার: ঘুমানোর আগে খুব বেশি খাবার খেলে রক্তে অবিভাজিত গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এই কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৫. সকালের সূর্যস্নান: ভোরে দিনের প্রথমে আসা প্রাকৃতিক আলো শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভোরের আলোর সংস্পর্শে আসা সার্কাডিয়ান ছন্দে প্রভাব ফেলে। এতে রাতে ভালো ঘুম হয়।
স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের উপর মনোযোগ দেওয়া যথেষ্ট নয়। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুমের অভ্যাসও ঠিক করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট ঘুমানোর সময় মেনে চলা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সারাদিনের পরিশ্রম এবং ক্লান্তির পর পর্যাপ্ত ঘুম ও পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। রাতে ঘুম ভালো না হলে সকালে উঠে প্রায়ই ক্লান্ত লাগে। অনেকেই ঘুম থেকেই ওঠার পর মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা হতে পারে। তবে হয়তো এই ক্লান্তি এবং মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা সাধারণ কোনো কারণে হচ্ছে না, বরং রক্তে শর্করার পরিমাণ ভারসাম্য হারাচ্ছে।
‘চায়না ওয়েস্টলেক ল্যাবরেটরি অব লাইফ সায়েন্সের এন্ড বায়োমেডিসিন’ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘুমের সঙ্গে রক্তের শর্করা মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। এর কারণে ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য হজম সম্পর্কিত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
৪৬ থেকে ৮৩ বছর বয়সী ১১০০ জন ব্যক্তির উপর এই সমীক্ষা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের সঙ্গে সরাসরি রক্তে শর্করার পরিমাণ সম্পর্কিত। প্রতিদিন কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন এবং কখন ঘুমাতে যাচ্ছেন, তা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে। ঘুমের ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ওঠানামা করে। বিপাক এবং ডায়াবেটিসের ওপরও এর প্রভাব পড়ে।
গবেষণায় ঘুমের সময়কে ভিত্তি করে ৪ টি ভাগ করা হয়েছে-
৪ থেকে ৪.৭ ঘণ্টা ঘুমানোকে অতিমাত্রায় অপর্যাপ্ত ঘুম বিবেচনা করা হয়।
৫.৫ থেকে ৬ ঘণ্টার ঘুমকে অপর্যাপ্ত ধরা হয়।
৬.৮ থেকে ৭.২ ঘণ্টা ঘুমকে সামান্য অপর্যাপ্ত ঘুম বিবেচনা করা হয়।
৮ ঘণ্টা এবং এর চেয়ে আধ বেশি সময় ঘুমকে পর্যাপ্ত ঘুম বলা হয়।
যারা প্রতিদিন কম ঘুমান তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। ৫.৫ ঘণ্টা থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো ব্যক্তিদের মধ্যে গ্লাইসেমিকের ব্যাপক পরিবর্তন নজরে পরে। যারা দেরিতে ঘুমায় তাদের গ্লাইসেমিক শতকরা ১.১৮ ভাগ বেশি ছিল। যারা এরচেয়েও কম ঘুমায় তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ আরও নেতিবাচকভাবে অনিয়ন্ত্রিত ছিল।
রক্তে শর্করা অসামঞ্জস্যতা কেবল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের জন্য উদ্বেগজনক নয়। এই সমস্যা আরও অনেক মারাত্মক সমস্যা ; যেমন- শক্তিমাত্রা কমিয়ে দেওয়া, বারবার ক্ষুধা লাগা, বিপাক গতি মন্থর করা, ইনসুলিন প্রতিরোধ করাসহ সার্বিক স্বাস্থ্যের অবনতি করাতেও দায়ী। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানো ছাড়াও, দৈনিক চিনি সেবন মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৫ গ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৬ গ্রাম চিনি গ্রহণ মাত্রা বিবেচনা করা হয়।
ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকিতে সাধারণত সিগারেট এবং তামাকজাত দ্রব্য সেবনকারী ব্যক্তিরা বেশি থাকেন। তবে ধূমপান ছাড়াও ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার আরও কিছু কারণ থাকতে পারে। বর্তমান সময়ে সঠিক জীবনযাপনের নিয়ম অবলম্বনকারী অনেকের ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ছে। জীবনে একবারও ধূমপান না করেও অনায়াসে তারা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সরাসরি ধূমপান না করলেও, ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধূমপায়ী ব্যক্তি পরিবার বা বন্ধুদের ধূমপায়ীদের কাছ থেকে নির্গত তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসেন। এছাড়া যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, ধুলা এবং কৃষিকাজের কারণে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ হচ্ছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষেরও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
গ্যাসের অসম্পূর্ণ দহনের ফলে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, ফর্মালডিহাইড এবং ভারী ধাতু সহ গ্যাস নির্গত হয়। নির্গমনের সময় এগুলো সাধারণত মাইক্রোস্কোপিক বা অতিক্ষুদ্র কঠিন টুকনো বা তরল ফোঁটায় নির্গত হয়। একে পার্টিকুলেট ম্যাটার বলা হয়। এই কণাগুলো এত ছোট হয় যে সহজেই শ্বাসের সঙ্গে শরীরে চলে যেতে পারে। এই ক্ষুদ্র কণাগুলোই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ হতে পারে।
জ্বালানির ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলে ক্যান্সার ছাড়াও নানান ক্ষতিকর রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন পালমোনারি, তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণসহ ফুসফুস ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্যান্সার হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি’ অনুমান করেছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর যে মানুষরা ফুসফুস ক্যান্সারে মারা যান তাদের মধ্যে আড়াই লাখ মানুষের ফুসফুসে ক্যান্সার হয় বায়ু দূষণের কারণে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মিটারপ্রতি প্রতি ১০ মাইক্রোগ্রাম মাইক্রোস্কোপিক কণা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অধূমপায়ীদেরও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ১৫ থেকে ৩৬ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সার / ছবি: সংগৃহীত
বায়ুদূষণ ছাড়াও দৈনন্দিন আরও কিছু কারণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পথ সুগম করার জন্য দায়ী হতে পারে। দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং অ্যালকোহল, অতিমাত্রায় মাংস খাওয়া, বিশেষভাবে ভাজা বা স্মোক করা লাল মাংস- এসব কারণেও ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে। অতি মাত্রায় কফি এবং অ্যালকোহল গ্রহণ তামাক সেবনের মতোই ক্ষতিকর হতে পারে। অপরদিকে শাক-সবজি এবং ফলমূল প্রতিদিন খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে।
ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন খনিশ্রমিকরাও। পাথর কাটা, ঢালাই করখানার কর্মী, খনিজ গলানোর যন্ত্র, বিদ্যুৎ বিশ্লেষণ কর্মী, ভারী খাদ প্রস্তুতকারক, অ্যাসবেস্টস, সিলিকা, রেডন, নিকেল, ক্রোমিয়াম উদ্ধারকরণ মতো পেশায় জড়িতদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। এই পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের মাস্ক পড়া এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
এসব কারণে ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ক্যান্সার ছাড়াও হাঁপানি, ফুসফুসে যক্ষ্মা , সিওপিডি’র মতো মারাত্মক দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।