হৃদয় জয় করা শতবর্ষী পলাশ 

  • ছাইদুর রহমান নাঈম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, কিশোরগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সৌন্দর্য আর প্রশান্তির প্রতীক শতবর্ষী পলাশ

সৌন্দর্য আর প্রশান্তির প্রতীক শতবর্ষী পলাশ

পলাশ ফুলের গেলাস ভরি, পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া। চাঁদিনি রাতের চাঁদোয়া-তলে, বুকের আঁচল দিব পাতিয়া। নয়ন-মণির মুকুরে তোমার দুলিবে আমার সজল ছবি, সবুজ ঘাসের শিশির ছানি মুকুতা-মালিকা দিব গাঁথিয়া।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত এই কবিতার মতো সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়ানো দৃশ্য দিয়ে হৃদয় জয় করা এক পলাশ গাছ। শতবর্ষের বেশি পুরনো এই বহুরূপী সৌন্দর্যের গাছটি সহজেই মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে। জীর্ণ মনকে সতেজ করে তুলে।

বিজ্ঞাপন

লাল মাটি আর সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর অনিন্দ্য সুন্দর এক গ্রাম কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু রাস্তা। বসন্তের নানান ফুল ফলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে বাতাসের সঙ্গে। কোকিলের ডাক আর নাম না জানা অনেক পাখির কুহুতান চারদিকে। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের ছেলদিয়া গ্রামে এই গাছের অবস্থান।

শতবর্ষী পলাশের ছায়ায় প্রশান্তির আবেশ

পাকা কাঁচা সড়ক পেরিয়ে মাটির মেঠো পথ পেরিয়ে যেতেই দেখা মিলবে ধানের সবুজ জমি। এর মধ্যে সবুজের বুকে যেন একখণ্ড লাল চিহ্ন। এটি পলাশ গাছে ফুটা ফুল। সবুজের ভিতর লাল। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় এটি যেন আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। এমনি সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছে গাছটি।

বিজ্ঞাপন

বসন্তের ভরদুপুরে এই গাছের নিচে একবার সময় কাটালে প্রেম মোহে পড়তে বাধ্য হতে হবে যে কেউ। বসন্তের শীতল হাওয়া আর মিষ্টি রোদ এনে দেয় তৃপ্তির ঢেঁকুর। ফসলের মাঠের পানিতে শীতল হওয়া মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে মনের মধ্যে উচ্ছাস ছড়াবে। মনকে মুহূর্তে শীতল করে দিবে প্রকৃতি৷। ইট-পাথরের শহরে যাদের মন অশান্ত হয়ে ওঠেছে তাদের মনের শান্তি ও তৃপ্তির খোরাক হতে পারে এমন দৃশ্য।

এই পলাশ গাছটির বয়স কত হয়েছে তার সঠিক ধারণা স্থানীয় কারও নিকট পাওয়া যায়নি। তবে এটির বয়স শতবর্ষ ছাড়িয়ে গেছে আরও আগেই এ বিষয়েস্থানীয় সবাই একমত। প্রকৃতিতে আপনা আপনি বেড়ে ওঠা এই গাছটি কৃষকদের পরম বন্ধু হয়ে আছে। কৃষকের ক্লান্ত শরীর মুহূর্তে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। ভরদুপুরে ছায়াতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আসেন মাঠের কৃষকরা। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজের অজান্তেই ঘুম চলে আসে তাদের চোখে।

পলাশের সৌন্দর্য

স্থানীয় কৃষক আফাজ উদ্দিন বার্তা২৪. কম'কে বলেন, আমার নিজের বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। আমার পিতার কাছে শুনেছি গাছটি তিনি এমনি দেখেছেন ছোট থেকেই। আমরা মাঠে কাজ করে বিশ্রাম নেই। এর ছায়ার নিচে বসে খাবার খাই। আমাদের পরম উপকারী বন্ধু হয়ে আছে পলাশ গাছটি।

নরসিংদী থেকে ঘুরতে আসা আবদুল্লাহ বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে আসছি। সত্যি অসাধারণ লাগলো আমাদের কাছে। এই সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে এই গাছের সৌন্দর্য হচ্ছে ফুল। ঘুরতে আসা কেউ যেন ফুল না ছিঁড়ে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গাছ বেঁচে থাকলে সৌন্দর্য বেঁচে থাকবে।