ভ্যালেন্টাইন ডে কী ও কেন? কবে থেকে এর শুরু?
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
অনেকে বিশ্বাস করেন ভালবাসা প্রকাশের বিশেষ কোন দিন থাকতে পারে না। কারও কারও ক্ষেত্রে দিনটি ভিন্ন হতে পারে। কেউ তার বিয়ের দিনটিকে ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করতে পারেন। কেউ তাদের দু’জনের প্রথম পরিচয়ের দিন কিংবা প্রথম কাছে আসার দিনটিকেও ভালবাসা দিন হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আবার নারী পুরুষের অনির্বাণ আকর্ষণে সৃষ্ট প্রেমই শুধু নয় অনেকে মনে করেন ভালবাসা দিবসে বাবা-মা-সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বা অন্য কারও প্রতিও পারস্পারিক ভালবাসাও ভালবাসা দিবসের উপজীব্য হতে পারে।
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ নারী-পুরুষের গভীর প্রেম প্রকাশের দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হলেও আমরা বাংলায় এটিকে ‘ভালবাসা দিবস, হিসেবে পালন করি। যার মাধ্যমে সন্তান মা-বাবার প্রতি, মা-বাবা তার সন্তানের প্রতি, স্বামী স্ত্রী, ভাই-বোন, সহপাঠী, সহকর্মীরা পরস্পরের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকি।
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলন যখন আমাদের দেশে শুরু হয়নি তখন কি আমরা পরস্পরকে ভালবাসতাম না? সে ভালবাসা ছিল সে সময় ভালবাসা দিবস ছিল, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিনসহ নানান নামে।
কিছুদিন আগেই ১লা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইন ডে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হত। ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হত ১লা ফাল্গুন। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী ওইদিন ছিল বসন্তের প্রথম দিন। ওইদিন মেয়েরা বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পরে খোপায় গাঁদা ফুল গুঁজে রাস্তায় বের হত। বাংলা একাডেমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাসন্তি রঙে ভরে উঠত। তার পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হত ভালবাসা দিবস। ওইদিন মেয়ে-ছেলেরা লাল শাড়ি-জামা পরে লাল গোলাপ হাতে প্রিয়জনের সঙ্গে ভালবাসা দিবস উপভোগ করত। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১লা ফাল্গুন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পড়ে যাওয়ায় দুটি দিবস একই দিনে পালিত হতে শুরু করে। ফলে এ দিন বাসন্তি ও লাল রংয়ের মিশ্রন চোখে পড়ে।
ভালবাসার রং কেন লাল তারও রক্তক্ষয়ী ইতিহাস আছে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস, ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। রোমের বাসিন্দা, খ্রিষ্টধর্মের যাজক ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। নানান মত পাওয়া গেলেও প্রসিদ্ধ মতানুসারে সে সময় সৈন্যবাহিনীতে বিয়ে ও ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু খ্রীষ্ট ধর্মযাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন সেসবের তোয়াক্কা না করে সৈন্যরা কোন মেয়ের প্রেমে পড়লে তাদের মধ্যে গোপনে বিয়ে দিয়ে দিতেন তাছাড়া খ্রীষ্টধর্মও প্রচার করছিলেন।
ক্রোধ রোমের তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয়ত ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে বন্দি করার আদেশ দেন। সেখানে আটক থাকাকালীন কারারক্ষির এক মেয়ের চিকিৎসা করে চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন তিনি। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার জয়গান। ভ্যালেন্টাইনের এই জনপ্রিয়তায় রাজা ক্লডিয়াস ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং তাকে নিশ্চিহ্ন করতে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কোনও দিন ব্যক্তিপ্রেমের কথা প্রচার করেননি। ভালবাসাকে নারী-পুরুষের শরীরী ছন্দে বেঁধে দেননি। তার প্রচার ছিল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবপ্রেম নিয়ে। সেই ভালবাসাই বিবর্তনের পদচিহ্ন অনুসরণ করে হয়ে একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
পাশ্চাত্যের সব উৎসবেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠতে থাকলে ভক্তরা গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করতেন না। খ্রিস্টীয় ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও এক সময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত।