এখনও জলসা বসে জমিদার বাড়ির নহবতখানায়
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
সন্ধ্যার পর নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ক্ষানিকটা পরেই আকাশে চাঁদের আলো দেখা যায়। কখনো ঝিঝি পোকার শব্দ আবার কখনো বা তারকার ঝলমলে আকাশে চাঁদনী রাতের সৌন্দর্য। এমনি আবহে জমিদার বাড়িতে প্রতিদিন বসে জলসা। জমিদার বাড়ির নহবতখানা থেকে ভেসে আসে তবলা, সেতারা, খঞ্জর, বাঁশি, হারমোনিয়ামের স্বর।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে এমনি দৃশ্য প্রতিদিন রাতের৷ পুরনো এই ঐতিহ্য রেওয়াজ ধরে রেখেছেন জমিদারের শেষ বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। সূর্য ডুবার পরপরই জ্বলে উঠে জমিদার বাড়ির আলো৷ বকুল, গোলাপের ঘ্রাণ ছড়ায় চারদিকে। গ্রামের মধ্যে শুনশান নীরবতা। বাড়ির চারদিকে মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
এই বাড়ির পুরাতন জৌলুশ এখন আর না থাকলেও একদম হারিয়ে যায়নি৷ কিছুটা চিহ্ন আজও টিকিয়ে রেখেছেন মানবেন্দ্র নাথ৷ স্থানীয়রা তাকে মানব বাবু বলেই চিনেন৷ প্রতিদিন রাতে বাদ্য বাদকসহ স্থানীয় শিল্পীরা আসেন৷ একসাথে সবাই বাড়ির নহবতখানায় জড়ো হন৷ মানব বাবু আসরে আসার সাথে সাথে শুরু হয় সংগীত ৷ তিনি চেয়ারে বসে নিজে কিছু গান করেন এবং শুনেন মনযোগী হয়ে। এসময় যে কেউ স্রোতা হিসাবে আসতে পারেন৷ এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত করা৷ শেষে চা আর মিষ্টি দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে৷ এভাবেই সবার সাথে দিন কাটে মানব বাবুর। জমিদারি না থাকলেও তিনি শুধু এই অঞ্চলে রয়ে যায় মাটির টানে৷ নিজের রয়েছে মাছের বড় কয়েকটি প্রজেক্ট৷ মাছ বিক্রি করার অর্থ দিয়েই চলছেন তিনি৷
জানা যায়, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পূজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। শিব মন্দিরটি এখনো এই বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দণ্ডায়মান। গাঙ্গাটিয়ার জমিদার ভূপতিনাথ চক্রবর্তীর দুই ছেলে মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী ও ধারনাথ চক্রবর্তী।

জমিদারদের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে অতুল বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক, গবেষক ও হাইকোর্টের জজ ধারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন। ছোটভাই ধারনাথের মৃত্যুর পর শেষ বংশধর মানব বাবু শুধুমাত্র এখানে রয়েছেন৷
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির একমাত্র শেষ উত্তরাধিকার ৮০উর্দ্ধ বয়স্ক মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (মানব বাবু) বার্তা ২৪. কম'কে বলেন, রোজ রাতেই সংগীতের আসর হয়। এটি আমাদের পুরনো রেওয়াজ। আমার ছোট ভাই ধারনাথ চক্রবর্তী ভালো সংগীত শিল্পী ছিলেন৷ তিনি সবসময়ই নিজে গান গাইতেন৷ আমি শুধু আমাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।