বিলুপ্তির পথে উগান্ডার আইকনিক ক্রেস্টেড সারস

  • ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত/ উগান্ডার আইকনিক ক্রেস্টেড সারস

ছবি: সংগৃহীত/ উগান্ডার আইকনিক ক্রেস্টেড সারস

সোনালি মুকুট, লাল গলার থলি, আর সরু কালো পায়ের শোভা নিয়ে উগান্ডার ক্রেস্টেড সারস শুধু একটি পাখিই নয়-এটি দেশটির গর্বের প্রতীক। উগান্ডার জাতীয় পতাকা ও কোট অফ আর্মসে থাকা এই পাখিটি দেশের পরিচয়ের অংশ। জাতীয় ক্রীড়া দলগুলোর নামেও রয়েছে এর ছোঁয়া। কিন্তু এই সৌন্দর্যমণ্ডিত পাখিটি এখন চরম হুমকির মুখে ।

এক সময় উগান্ডায় ১ লাখের বেশি ক্রেস্টেড সারস দেখা গেলেও বর্তমানে সংখ্যাটি কমে মাত্র ১০ হাজারে নেমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

সারসে হ্রাসের কারণ

এই পাখি মূলত জলাভূমিতে বাস করে এবং ঘাসের বীজ, ছোট ব্যাঙ ও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষিজমি সম্প্রসারণ ও জলাভূমি ধ্বংস হওয়ায় এদের আবাস হ্রাস পেয়েছে।
কৃষকদের মনে করেন, তাদের খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে এই সারসদের জন্য। তাদের মতে, এই পাখিরা ফসল নষ্ট করে, তাই তারা বাধ্য হয়ে বিষ প্রয়োগ করে।
পশ্চিম উগান্ডার কৃষক টম মুকুঙ্গুজি বলেন, এই পাখির কোনও উপকার নেই, শুধু আমাদের ফসল খেয়ে ফেলে।

বিজ্ঞাপন

বিপদ সীমানায়

আন্তর্জাতিক ক্রেন ফাউন্ডেশনের পূর্ব আফ্রিকার প্রধান অ্যাডালবার্ট আইনোমুকুঙ্গুজি বলেন, গত ২৫ বছরে পূর্ব আফ্রিকায় এই পাখির সংখ্যা শতকার ৮০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ২০১২ সালে আইইউসিএন (IUCN) একে বিপন্ন তালিকাভুক্ত করেছে।

দক্ষিণ-মধ্য উগান্ডার লওয়েঙ্গো জেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান ও ভুট্টা চাষিরা বিষ প্রয়োগ করে বহু সারস হত্যা করেছে। ফলে এক সময় যেখানে সহজেই সারসের দেখা মিলত, এখন সেখানে তাদের খুঁজে পাওয়াই কঠিন।

উগান্ডার পক্ষীবিদ ড্যান সেরুগ বলেন, এই পাখিটি যতই সুন্দর ও জনপ্রিয় হোক না কেন, এটি এখন গুরুতর হুমকির সম্মুখীন। যদি আমরা দ্রুত কিছু না করি, তাহলে আমরা এই পাখিটিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেব।

সারস বাঁচাতে করণীয়

উগান্ডার আইন অনুযায়ী, এই পাখি হত্যা করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ২০ বিলিয়ন উগান্ডার শিলিং ($৫ মিলিয়ন) জরিমানা হতে পারে। এক সময় এখানকার জনগোষ্ঠীর কুসংস্কার এই পাখিকে সুরক্ষা দিত, কিন্তু এখন সেই ভয়ও কমে গেছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, আইন বাস্তবায়ন আরও কঠোর করতে হবে। পাশাপাশি কৃষকদের সচেতন করতে হবে যে এই পাখি পরিবেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জলাভূমি সংরক্ষণ ও বিকল্প খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাও করা দরকার।

একটি সময় ক্রেস্টেড সারস ছিল উগান্ডার সংস্কৃতি ও প্রকৃতির গৌরব। কিন্তু অবহেলা আর পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে এটি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো উগান্ডার পতাকা ও ক্রীড়া দলের নামেই শুধু এই পাখির অস্তিত্ব টিকে থাকবে-বাস্তবে নয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে উগান্ডার গর্বের প্রতীক ক্রেস্টেড সারস একদিন কেবল স্মৃতির অংশ হয়ে থাকবে।

তথ্য সূত্র: বিবিসি