নতুন সংবিধান পুনর্লিখনের প্রাসঙ্গিতা

  • আখতার হোসেন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনীতিতে নতুন বন্দোবস্ত নির্ধারণ করতে গত ৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির উদ্যোগে ৫৫ সদস্যের নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করেছে। কমিটিতে থাকা তরুণ সদস্যদের নিয়ে একটি ফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে এই নাগরিক কমিটি। রাষ্ট্র সংস্কার, পুনর্গঠন কিংবা সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে চায় কমিটি।

তৃণমূল পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির বিস্তৃতি ঘটানোর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। এই কমিটির আটটি প্রাথমিক কাজ হলো:

বিজ্ঞাপন

১. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।
২. ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা
৩. রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা
৪. বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা
৫. দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।
৬. জনস্বার্থের পক্ষে নীতি-নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা
৭. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি-নির্ধারণের প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮. গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণ-আলোচনার আয়োজন করা।

বাংলাদেশের মানুষ দেশ পরিচালনার জন্য একটি নতুন সংবিধান চায়, সংবিধান পুনর্লিখনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু গণ-আলোচনা করেছি। বিভিন্ন জায়গায়, মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমরা মোটাদাগে এক ধরনের সাড়া পেয়েছি, তা হলো বাংলাদেশের মানুষ দেশ পরিচালনার জন্য একটি নতুন সংবিধান চায়। সেই লক্ষ্যে কাজগুলো পরিচালনা করে যাচ্ছে নাগরিক কমিটি।

বিজ্ঞাপন

জুলাই অভ্যুত্থানের যে গতি, সেই গতি অক্ষুণ্ণ রেখে আহত ও শহিদ পরিবারের পুনর্বাসন, খুনিদের বিচার, জনস্বার্থের পক্ষে নীতি-নির্ধারণ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা। সবমিলিয়ে নতুন একটি সংবিধান পুনর্লিখনের লক্ষ্যে আমরা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছি।

এই পরিবর্তন আনতে বেশ কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীতের যে স্বৈরাচার, সেই ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে। তারা নানাভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, এমন পরিস্থিতি আমাদের সামলাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিচারবিভাগ, সচিবালয়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে। এর বাইরে বিচার প্রক্রিয়া ঠিকভাবে শুরু না হওয়ায় খুনি এবং তাদের সহযোগীরা বাইরে ঘুরছে, যেটি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।

আওয়ামী লীগের দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে নাগরিক কমিটি। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক। কেননা এই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছে এবং গুলি চালানোর হুকুম, প্রমাণ লোপাটসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছে, তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হোক। রাজনৈতিক নানা পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সংলাপ আয়োজন করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কাজ করবে নাগরিক কমিটি। রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক জবাবদিহির মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারে যারা রয়েছেন, জবাবদিহির জায়গায় তাদেরও আনছি।

নাগরিক কমিটি কোনো রাজনৈতিক দল নয় যে, নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো নিবন্ধন নেবে বা নির্বাচনে অংশ নেবে। এটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। তরুণ যুবকদের সঙ্গে নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের কাজ হবে সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে আনা এবং সহযোগিতা করা। জনস্বার্থের পলিসি নিয়ে আলোচনা করা। সরকারি নীতি যেন জনগণের পক্ষেই হয়, সে জন্য কাজ করা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনা।

এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় থাকবেন কমিটির সদস্যরা। রাষ্ট্র সংস্কারে নেতৃত্ব দেওয়া, বাংলাদেশের সব মানুষের মত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালু রাখা এবং একটি নতুন সংবিধানের জন্য কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

সংবিধানের বিষয়টি একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। সব রাজনৈতিক পক্ষ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে, বিশেষ করে শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংলাপ এবং আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে আমরা সেই জায়গাটায় পৌঁছাতে চাই।

লেখক: নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক

খবরের কাগজ’র সৌজন্যে