গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার কি নিয়ন্ত্রণের আধুনিক হাতিয়ার?
বাংলাদেশ যতই সমৃদ্ধি, উন্নতি আর জনগণের জন্য উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করুক না কেন আইন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নামে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে উন্নত বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাদের চোখ রাঙানি কখনো উন্নত গণতন্ত্রের নামে, কখনও মানবাধিকারের নামে, কখনও দারিদ্র আর বৈষম্যের নামে।
একদা চাষাভুষার দেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি স্বাধীনতার ৫০ বছরে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এমনভাবে আনয়ন করেছে যে মানুষের পার ক্যাপিটা ইনকাম ২ হাজার ৪৭১ মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। যে বাংলাদেশ ব্রিফকেস হাতে আইএমএফের কনফারেন্সে ছুটে বেড়াত বৈদেশিক অনুদান, মিডল ইস্টের যাকাত-ফেতরা এনে মানুষের ক্ষুধা মেটাতে, সেই বাংলাদেশকে এখানে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো বিনা দ্বিধায়, শর্ত ছাড়াই ঋণ দেয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বুক চিতিয়ে মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প করেছে, কোনভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা আর সমৃদ্ধি দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তির মতো, ‘আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’।
ঠিক তখনই বাংলাদেশকে শাসন আর শোষণ করার, দমিয়ে রাখার নতুন নতুন হাতিয়ারের খুঁজে ব্যস্ত পশ্চিমা বিশ্ব। মানবাধিকার তেমনই একটি নতুন হাতিয়ার, যার প্রয়োগ এতদিনে এসে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের উপর। অথচ ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা, ১৯৭৭-৭৮ এ বাংলাদেশের হাজারে হাজারে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সামরিক অফিসারদের হত্যা করা ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশে নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে দুই বছরে ২০ হাজার সংখ্যালঘু আর দলীয় কর্মীকে হত্যার সময় পশ্চিমা-মানবাধিকার ঘুমিয়ে ছিল। এটা তখনই জেগে উঠেছে যখন বিশ্বব্যাংক আর দালাল গংদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর মতো মেগা স্ট্র্যাকচার করে ফেলল। তখন এসে ২০১৮-১৯/২০ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর জন্য র্যাবকে নিষিদ্ধ করা হলো, আর বাংলাদেশকে চোখ রাঙানো শুরু হলো মানবাধিকার দিয়ে।
২০১৮-১৯-২০ সালের আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিভিন্ন সালের রিপোর্টগুলো থেকে সাধারণত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনগুলো তাদের বাৎসরিক ডাটা নেয়। অধিকারের আদিলুর রহমানও তথ্য দেয়। আদিলুর রহমান যেমন ২০১৩ সালের হেফাজতের সমাবেশে হতাহতের মিথ্যা তথ্য আর নাম সম্বলিত রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটা ব্যতিরেকেই ধরে নেওয়া যাক আইন ও সালিশ কেন্দ্র যেই তথ্য তাদের বাৎসরিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে তা সত্য ও নির্ভুল, এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সেই ডাটার ভিত্তিতেই আজকের এই বিশ্লেষণ।
কী হয়েছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যে এই তিন বছরে প্রায় ১ হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশে?
এই হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটেছিল টেকনাফ আর বার্মা সীমান্তবর্তী এলাকায়। ইয়াবা আর মাদকদ্রব্য চোরাচালান আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছিল সেই সময়ে। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। ইয়াবা আর মাদক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল টেকনাফ কক্সবাজার এলাকা, আর সেই মাদক ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকাসহ দেশের সকল প্রান্তে।
এই গ্রাফ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে প্রাপ্ত। ইয়াবা আর মাদক চোরাচালান রোধে বিশেষ অভিযান চালানো হয় টেকনাফসহ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে। তার ফলে ২০১৮-১৯-২০ সাল মিলে প্রায় হাজারের অধিক লোক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশনে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার শিকার হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চোরাকারবারিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি-আক্রমণ চালিয়েছে, তাতেই মৃত্যুর সংখ্যাটা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এই উদ্যোগ ইয়াবা ও মাদক চোরাকারবারের মেরুদণ্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল। এখনও টেকনাফে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি দেখা যায় যেগুলোতে ইয়াবা’ ব্যবসায়ী গডফাদাররা বসবাস করতো। শত শত মানুষে জাঁকজমক ছিলো সেই প্রাসাদগুলো, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো জনমানুষহীন।
গণতন্ত্র, আইনের শাসন বনাম বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
পশ্চিমা বিশ্বের ভাষায় বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আইনের শাসনের অন্তরায়, যা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় গত ৫/৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লাইভ ট্র্যাকিং করে আসছে। সেই তথ্য মতে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত আইন বহির্ভূতভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছে ১২ হাজার ৯৯ জন। এত বড় গণতন্ত্রের দেশে এত হত্যাকাণ্ড তো তাহলে আইনের শাসনকে সমূলে উৎপাটন করে দিয়েছে, এবং গণতন্ত্র সেখান থেকে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে! তেমনই তো অর্থ দাঁড়ায়!
অথচ সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের ধারক আর আইনের শাসক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে যে পরিমাণ হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেটা বাংলাদেশের ১০ বছরের আইন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমান।
আনুপাতিক হার
এখানে একটা ব্যাখ্যা আসতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বড় দেশ। সেই কারণেই একটা আনুপাতিক হারের তুলনা করা দরকার। প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের অনুপাতে যদি দেখা হয় তাহলে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ বছরের প্রতি ১ মিলিয়ন মানুষের মাঝে ৩.৪৮ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়। তার বিপরীতে গত ১১ বছরে বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে বছরে ১ জনের কাছাকাছি মানুষ এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়েছে।
যদিও ২০১৭/১৮/১৯ সালের মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে আনুপাতিক হারটা বেশি কারণ ঐ ৩ বছর গড়ে প্রতি মিলিয়নে ২ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল বাংলাদেশে। স্পেশাল অপারেশনের ঐ ৩ বছর বাদ দিলে, বাংলাদেশের গড় দাঁড়ায় বছরে প্রতি ১ মিলিয়নে ১ জনেরও কম।
গত ৩ বছরে বাংলাদেশে সেই অনুপাত নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। আমেরিকায় যেখানে গত বছরে ২০২২-এ আইন বহির্ভূতভাবে হত্যার সংখ্যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০১ জন, সেখানে ২০২২ সালে বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা যায় মাত্র ১৯ জন। যার মধ্যে ৪ জন অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে মারা যায়, আর দুইজন পুলিশ কাস্টডিতে সুইসাইড করে। এই সংখ্যা বাদ দিলে ২০২২ সালে আমেরিকায় যেখানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ হত্যাকাণ্ড ঘটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার সংখ্যা ১৩ জন। ২০২৩ সালের এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ জন হত্যার শিকার হয়েছে, অথচ আমেরিকায় সংখ্যাটা আজকের তারিখেই ১ হাজার ৯৩ জন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেও বর্ণবাদী বৈষম্য
সংখ্যাগুরু সাদাদের দেশ আমেরিকা। যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ সাদা চামড়ার বসবাস। অন্যদিকে ব্ল্যাকদের বসবাস ১৩% প্রায়। হিস্পানিক ১৯%, এশিয়ান ৬.৩% আর শংকর জাতির বাস ৩.০%। জাতিগত নির্মূলের শিকার আমেরিকার আদিবাসীদের অবস্থান কমতে কমতে এখন এসে থেমেছে ১.৩% এ।
গণতান্ত্রিক দেশ, মানবাধিকার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১২ হাজার ৯৯ জন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর মধ্যে সাদা ৫ হাজার ৩৪৮ জন, কালো ৩ হাজার ৩৯ জন, হিস্পানিক ২ হাজার ২১২ জন, এশিয়ান ২১৫ জন, আদিবাসী ১৬৭ জন, এবং মিশ্র জাতি ১ হাজার ৭১ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার জাতিগত অনুপাতের ভিত্তিতে হিসাব করলে দেখা যায় পুলিশ কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নিগ্রহ আর হত্যার শিকার হচ্ছে।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে পুলিশি জুলুম আর রাষ্ট্র কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশে যে সকল সংস্থা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণা চালায়, তাদের কোন রিপোর্টে দেখা যায়নি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আইন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ধর্ম, জাতিসত্তা, সংখ্যালঘু শোষণ বা রাজনৈতিক মতাদর্শ কোন ভূমিকা রেখেছে। অথচ মানবাধিকার, আইনের শাসন আর গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দিকপাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শতাব্দী আগে নেটিভ আমেরিকান আদিবাসীদের সমূলে উৎপাটন করেছে, সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে এখনও সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন আর শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে।
বিচারহীনতা
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট ও ২০২০ সালে র্যাবের ওপর স্যাংশনের পর বাংলাদেশের সরকার নড়চড়ে বসে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে। র্যাব পুলিশ বিডিআর থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগে বড়সড় রদবদল থেকে শুরু করে সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং ডিসিপ্লিনারি সাজার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যার প্রভাবে ২০২১ সাল থেকে আশা জাগানিয়া হারে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান কমতে থাকে। জবাবদিহি এখানে সবচেয় বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে। এর সাথে যোগ হয় কক্সবাজারে মেজর সিনহা হত্যায় পুলিশের দায়। সেই মামলার বিচার হয়, ওসি প্রদীপসহ তার সহকারী পরিদর্শককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। এছাড়াও র্যাবের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ জনের হত্যাকাণ্ডে র্যাব অফিসারসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়াও আরও অনেকগুলো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মামলা আদলতে চলমান যেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অভিযোগ দায়ের করেছে এবং মামলা পরিচালনা করছে যেখানে কোন বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া অপরাধীদের হত্যা করে বা পুলিশ কাস্টডিতে নির্যাতনের কারণে আসামি মারা যায়।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। আইনের আর মানবাধিকারের রক্ষক ও বিজয় কেতন উত্তোলনকারী যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ বছরের হওয়া ১২ হাজার ৯৯টি এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ে মাত্র ৪টি ঘটনায় বিচার শুরু করেছে, যা চলছে বছরের পর বছর ধরে। যা মোট অপরাধের মাত্র ১.৯%। বাকি ৯৮.১% বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোন সাজা তো দূর, কোন একশনই নেয়নি মার্কিন আদালত আর প্রশাসন।
বিচার আর জবাবদিহির মধ্যে আনলে যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে যায়, সেটা গত ৩ বছরে বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ আর সরকারের সদিচ্ছার কারণে যেখানে গত ৩ বছরের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ৮০, ১৯ আর ১১-তে নেমে এসেছে। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারহীনতার কারণে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। গত তিন বছরে এই হত্যার সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ১৪৫, ১ হাজার ২০২, ১ হাজার ৯৩ (২০২৩ এর ১১ মাসে)।
অপরাধের মাত্রা
২০১৭-১৮-১৯ সালে বাংলাদেশের হওয়া আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ যেখানে ছিল মাদক চোরাচালানকারীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ আর বন্দুকযুদ্ধ, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাফিক রুল ভায়োলেশনের কারণেও ৮% লোক পুলিশের হাতে মারা যায়, অর্থাৎ গত ১১ বছরে ৯৬৮ জন লোক শুধুমাত্র ট্রাফিক রুল অমান্য করার কারণে পুলিশের হাতে হত্যার শিকার হয়।
আর কোন অপরাধের অভিযোগ ছাড়াই ২১% লোক, মানে মোটের উপর ২ হাজার ৫৪০ জন লোক পুলিশি হামলায় মারা গেছে গত ১১ বছরে, যারা কোন অপরাধ করেনি বা যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিলো না পুলিশের। সহিংস অপরাধ করে হত্যার শিকার হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ জন মার্কিন নাগরিক যা মোট সংখ্যার মাত্র ৩১%
“যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা”। পশ্চিমা দেশগুলোর যখন উন্নয়নশীল দেশের ওপর মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বর্ণবৈষম্যের দোহাই দিয়ে সেই সকল দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন এটাই সবার মনে আসে, সম্ভবত তারা বাংলাদেশের উন্নতিকে পছন্দ করছে না, অথবা আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের উত্থানকে তারা নিজেদের জন্য হুমকি দেখছে। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, কোন জাতি উন্নত হতে থাকলে সেই জাতির নৈতিক অবস্থাও ধীরে ধীরে উন্নত হয়। অথচ ধর্ম পালন না করার অজুহাতে মানুষ পুড়িয়ে মেরে ফেলা, ডাইনি নিধনের নামে হাজার হাজার নারীদের পুড়িয়ে মারা দেশগুলো তো উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছে আরও কয়েক শতাব্দী আগে, তারা কেন পারল না উন্নয়নের সাথে সাথে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থামাতে বা অপরাধের মাত্রা কমাতে?
আসলে অপরাধ দমনের নামে হত্যাকাণ্ড, দখলদারিত্ব মুক্ত করতে যুদ্ধ, সবাই করে, নাম দেয় শান্তি রক্ষার জন্য বা সন্ত্রাসবাদ দমনে অভিযান। তবে এই তারাই যখন যুদ্ধাপরাধী, নৃশংস দেশবিরোধী রাজাকারদের পাশেও মানবতার বুলি নিয়ে দাঁড়ায়, তখন নিশ্চিত সন্দেহ জাগে, তাদের উদ্দেশ্য কি আসলে মানুষের জীবন বাঁচানোর অধিকার, নাকি মানবতার নামে দেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা!