স্কোরবোর্ডে মাত্র ১ রান জমা হতেই প্রথম উইকেট পড়ল। ব্যক্তিগত শূন্য রানে আউট হলেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়।
বাজে শুরু, সন্দেহ নেই।
কিন্তু সেই বাংলাদেশ যখন দ্বিতীয় উইকেট হারার তখন স্কোরবোর্ডে জমা দাড়িয়েছে ২০৮ রান! অর্থাৎ দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দ্বিশত রানের নতুন রেকর্ড। সাকিব ও তামিম ইকবালের গড়া সেই ২০৭ রানের রেকর্ড জুটিই বাংলাদেশকে গায়ানায় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে এনে দিল ২৭৯ রানের বড় সংগ্রহ।
সাকিবের ৯৭। তামিমের অপরাজিত ১৩০ রান এবং শেষের দিকে মুশফিকের ঝড়ো ব্যাটিং-এই তিনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ এই বিশাল রান যোগাড় করে। গায়ানার স্লো এবং স্পিন সহায়ক উইকেটে জেতার জন্য এই স্কোরকে নিরাপদ মানা যেতেই পারে! ঠিক যেভাবে এই উইকেটে ব্যাট করতে হয়- সেটাই করে দেখাল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর।
মিল রেখেই ব্যাটিংয়ে যেভাবে সামনে বাড়ছিলেন দুই বন্ধু; তাতে দুজনেরই প্রায় একই সময় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু একটু বেশি ঝুঁকি নিতে গিয়ে সাকিব সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও পারলেন না। ফিরলেন ৯৭ রানে। ওপেনার তামিম ইকবাল অবশ্য সেই ভুল করেননি। সেঞ্চুরি পেলেন সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি তামিমের প্রথম সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের দশম।
গায়ানার উইকেটের গুণাগুণের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ পরিচিত। এখানেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ভালই জানা এই উইকেটে বল একটু দেরিতে আসে। মিরপুরের উইকেটের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বেশ ভালই মিল খায় গায়ানার উইকেট। সাকিব ও তামিম দুজনেই উইকেটে এসেই শটস খেলার চেষ্টা না করে টিকে থাকার দিকে মনোযোগ দেন। শুরুতে সিঙ্গেলস নিয়েই সামনে বাড়েন। ম্যাচে নিজের প্রথম বাউন্ডারি পান সাকিব ৪২ নম্বর বলে!
এই পরিস্থিতিই জানাচ্ছে গায়ানা প্রভিন্স ষ্টেডিয়ামের এই উইকেটে শটস খেলা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। তামিমÑসাকিবের ব্যাটে ধৈর্য্য নিয়ে সামনে বাড়ে বাংলাদেশ। সাকিব অবশ্য কিছুটা সৌভাগ্যবান। ৯৭ রানে আউট হওয়ার আগে ১৮ ও ৮৫ রানে দুবার তার ক্যাচ ফেলে দেন ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা। তবে সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েও সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস নিয়ে ফিরতে হয় তাকে। তামিম সেঞ্চুরি পান ১৪৬ বলে।
এটি শুধু তার নয়; ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের যে কোন ব্যাটসম্যানের বলের হিসেবে ধীরগতির সেঞ্চুরি। পরিস্থিতির দাবি মেটাতেই তামিমকে অমন কৌশল বেছে নিতে হয়েছিল। তবে সেঞ্চুরির পর তামিম তার খেলা বাকি ১৪ বলে ৩০ রান তুলে রান ও বলের ব্যবধান অনেক কমিয়ে দেন। আর শেষের দিকে ব্যাট করতে নামা মুশফিক রহিম তো ব্যাট হাতে ¯্রফে টি-টুয়েন্টি ষ্টাইলে ব্যাট চালান। দুই ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে মাত্র ১১ বলে তুলে নেন ৩০ রান! শেষের এই ঝড়ে জ্যাসন হোল্ডারের এক ওভার থেকেই বাংলাদেশ আদায় করে নেয় ২২ রান। আর ইনিংসের শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেল খরচা করেন আরো ২১ রান! শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিং ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যায় ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বোলিং। এই সময়ে স্কোরে জমা হয় ৫৩ রান!
শুরুর ধৈর্য্য। মাঝের মনোযাগ। এবং শেষের ঝড়; এই তিন কৃতিত্বে গায়ানায় ২৭৯ রানের স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জয়ের রঙিন স্বপ্ন দেখছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২৭৯/৪ (৫০ ওভারে, এনামুল ০, তামিম ১৩০*, সাকিব ৯৭, সাব্বির ৩, মুশফিক ৩০, মাহমুদউল্লাহ ৪*, রাসেল ১/৬২, হোল্ডার ১/৪৭, বিশু ২/৫২)।