আইসিসি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিউজিল্যান্ডের কাছে এক আক্ষেপের নাম। সেই ২৫ বছর আগে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল দলটি। এরপর দুইবার বিশ্বকাপ ও দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলেও জয়ের দেখা পায়নি কিউইরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ২৫ বছরের পুরোনো সেই প্রতিশোধ নিলো ভারত।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ৪ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। আর এই জয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতলো তারা।
২৫২ রানের লক্ষ্যকে খুব একটা ছোট বলার উপায় নেই। তবে ভারতীয় দুই ওপেনারের দুর্দান্ত শুরুতে একটা সময় তাকে খুব ছোটই মনে হয়েছিল। উইকেটের একপ্রান্ত থেকে বোলারদের রীতিমতো শাসন করছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর অপর প্রান্তে দেখেশুনে খেলেছেন সহ-অধিনায়ক শুভমান গিল। যদিও ৩১ রান করে গ্লেন ফিলিপসের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে যান গিল। গিলের বিদায়ে ৩ বল পরেই বিরাট কোহলি ফিরে গেছেন ১ রানে। অপরপ্রান্ত থেকে ৪১ বলে অর্ধশতক তুলে নেন রোহিত।
তবে রোহিতও টিকতে পারেননি তার পরে বেশিক্ষণ। দলীয় ১২২ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক। অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরে কিউইরা। তবে চাপ সামলেছেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। দুজনে মিলে গড়েন ৬১ রানের জুটি। ৪৮ রান করে মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হয়ে ফিরে যান আইয়ার। আইয়ারের বিদায়ের পর দলের হাল ধরতে পারেননি অক্ষরও। মাইকেল ব্রেসওয়েলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। শেষে লোকেশ রাহুলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৬ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ভারত।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা স্বপ্নের মতই করেছিল নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং দুজনে মিলে গড়েছিলেন ৫৭ রানের জুটি। এমন শুরু আভাস দিচ্ছিল বড় সংগ্রহের। শুরু থেকেই ভয়ডরহীন ব্যাটিং শুরু করেন রাচিন। তবে উইকেটের অপর প্রান্তে দেখেশুনে শুরু করেন ইয়াং। তবে তাদের ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন বরুণ চক্রবর্তী। ২৩ বলে ১৫ রান করে ফিরে যান ইয়াং।
ইয়াংয়ের বিদায়ের পর ম্যাচে দুইবার জীবন পাওয়া রাচিনও ফিরে যান ২৯ বলে ৩৭ রান করে। আসরে এর আগে দুই সেঞ্চুরি করা বিধ্বংসী কিউই এই ব্যাটারকে ফেরান কুলদ্বীপ যাদব। সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করা কেন উইলিয়ামসনও হার মানের কুলদ্বীপের ঘূর্ণিতে। ফেরেন ১১ রান করে। উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম লাথাম রবীন্দ্র জাদেজার বলে ১৪ রান করে ফিরে যান সাজঘরে।
১০৮ রানে ৪ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস। দুজনে মিলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। ৫২ বলে ৩৪ রানে বরুণ চক্রবর্তীর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ফিলিপস। ১৬৫ রানে পাঁচ উইকেট হারায় কিউইরা। তবে একপ্রান্ত আগলে ছিলেন মিচেল। ৯১ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশতক। মিচেল ফিরেছেন ৬৩ রান করে। শেষে মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৪০ বলে ৫৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে ২৫১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।
এ ম্যাচ জয়ে আবারও নিজেদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পুনরুদ্ধার করলো ভারত। ২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিং ধনীর নেতৃত্বে শিরোপা জয়ের পর ২০১৭ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল ভারত। তবে সে ক্ষত শুকাতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি ভারতীয় দলকে। পরের আসরেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো রোহিত শর্মার দল। আর নিউজিল্যান্ডের খাতায় যুক্ত হলো আরও এক ফাইনাল হারের আক্ষেপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ২৫১/৭(৫০) ড্যারেল মিচেল ৬৩, মাইকেল ব্রেসওয়েল ৫৩, কুলদ্বীপ যাদব ২/৪০, বরুণ চক্রবর্তী ২/৪৫
ভারত: ২৫৪/৬(৪৯) রোহিত শর্মা ৭৬, শ্রেয়াস আইয়ার ৪৮, মাইকেল ব্রেসওয়েল ২/২৮,মিচেল স্যান্টনার ২/৪৬
ফল: ৪ উইকেটে জয়ী ভারত