চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিয়া সিড চাষে নতুন সম্ভাবনা
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
পুষ্টি ও ওষুধি গুণে ভরা বিদেশি জাতের শস্য চিয়া সিড চাষের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোলে। উপজেলার ভূজইল গ্রামে জাহাঙ্গীর আলমের ৩৩ শতক জমিতে দুই বছর ধরে চাষ হচ্ছে নতুন ফসল চিয়া সিড।
স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় চিয়া সিড চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। পুষ্টি ও ওষুধিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে একে ছড়িয়ে দিতে ও চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান,স্বল্প খরচ ও কোনো সেচ ছাড়াই এ ফসল চাষ করা যায়। চাহিদা ও বাজারমূল্য বিবেচনায় অন্যান্য ফসলের বিকল্প হিসেবে এই ফসল নিয়ে এসেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে নতুন সম্ভাবনা। আর লাভের আশায় চিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকেই।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চিয়া সিড বীজ একটি বিদেশি মিন্ট প্রজাতির পুদিনা ফসল। বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। রোগবালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ শস্যের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মিন্ট প্রজাতির এই শস্যে রয়েছে মানবদেহকে সুস্থ রাখার অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান আমিষ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার। আরও আছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের ত্বক ও দেহের অভ্যন্তরীণ কোষ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপকারী। শুকনো বা যে কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় চিয়া বীজ। এর ব্যবহারে ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় মানবদেহে। এর মধ্যে দেশের দিনাজপুর, বগুড়া,গাইবান্ধা, পাবনা ও ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে এই শস্য চাষে সফলতা মিলেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক শাগাটা ইসলাম সর্না বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বরেন্দ্র এলাকায় পানির খুব সমস্যা। সেচ ছাড়া এখানে কোনো ফসল হয় না। যেটা কৃষকদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু চিয়া চাষের জন্য কোনো সেচ দিতে হয় না। যেটায় অনেক কষ্ট কম। এ গাছে কোনো পোকা আক্রমণ করতে পারে না। লস হওয়ারও কারণ নেই। হলফ করে বলা যায় এটা চাষ করলে লাভ হবে। এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা চিয়া চাষ করতে পারে। সেই ব্যবস্থা যেন তারা করে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আদিবা সুলতানা বলেন, চিয়ার নিউট্রিশন ভ্যালু বোঝাতে গেলে এখানে গর্ভবতী মা ও সন্তানদের জন্য চিয়া অত্যন্ত উপকারী। কারণ গর্ভে বাচ্চা থাকা অবস্থায় এবং পরবর্তীতে জন্মদানের পর বাচ্চাদের ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য চিয়া খুব দরকারি। কারণ এ সময় বাচ্চাদের মস্তিষ্ক খুব সেনসিটিভ থাকে। তাদের কানেক্টিভ ইস্যুগুলো জোড়া লাগানোর জন্য। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি এটা না থাকে তাহলে বাচ্চাদের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চা এবং বাচ্চার মা উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আলমগীর হোসেন জানান, নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে ‘চিয়া সিড’ সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়। দেহের শক্তি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী, ওজন কমানো, ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখা ও হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। তিনি আরও বলেন, পুষ্টি ও ওষুধিগুণসম্পন্ন এবং পরিবেশবান্ধব ‘চিয়া সিড’ খরা সহনশীল হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যা অন্যান্য ফসলের বিকল্প হিসেবে এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। তার দাবি চিয়া চাষে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবে। এ জন্য বাণিজ্যিকভাবে চিয়া চাষে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি এ গবেষকের। চিয়া চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে একদিকে কৃষক লাভবান হবেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিয়া ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য এই শস্য সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার আহ্বান তাদের