চুয়াডাঙ্গায় পানির অভাবে কৃষকদের হাহাকার
-
-
|

পানির অভাবে খা খা করছে খাল; ছবি: বার্তা২৪
চলতি মৌসুমেও পানি সরবরাহ নেই গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে। এতে পানির অভাবে বোরো ধানের আবাদ করতে পারছেন না চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক। দীর্ঘদিন পানি না থাকায় খাল শুকিয়ে ফাটল ধরেছে। বিভিন্ন অংশে পলি জমে তা এখন দৃশ্যমান। খালের পানি না পেয়ে অতিরিক্ত দামে তেল কিনে শ্যালোমেশিন দিয়ে বোরো ধান ও ভুট্টায় সেচ দেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পান্নি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পদ্মা নদীতে পলি জমে ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ভোড়ামার পাম্প হাউজ সূত্রে জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বছরের ১০ মাস ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পদ্মা নদী থেকে পানি তোলা হয়। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাম্প বন্ধ থাকে। এ পানি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ বছর এখনো এসব খালে পানি সরবরাহ করা হয়নি। এতে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিনে জিকে সেচ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ খাল এখন পানির অভাবে খা খা করছে, মাটি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাল এখন তরুণদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। কেউ ব্যাট-বল হাতে আবার কেউ ফুটবল নিয়ে খালের মাঝে খেলছে। অনেকে আবার গরু-ছাগল চরাচ্ছেন। আর এ জিকে খালকে কেন্দ্র করে চাষ হওয়া ধান নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। তাদের বৈদ্যুতিক মোটর ও ডিজেল কিনে শ্যালোমেশিন দিয়ে চাষ করতে হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী গ্রামের কৃষক ফুলচাঁন আলী বলেন, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন। ধান রোপনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পানি পাননি। ধান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এক দিন পরপর ডিজেল কিনে শ্যালোমেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বছরে ২০০ টাকা দিলে সারা বছর জিকে খালের পানি দিয়ে চাষ করা যায়। কিন্তু মেশিনে প্রতিদিনই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার তেল কিনতে হয়। এতে চাষে অনেক খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
হাউসপুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, জিকে খালে ঠিক মতো পানি না পাওয়ায় তিনি ধান চাষ থেকে সরে আসছেন। আগে তিনি ২০-২৫ বিঘা ধানচাষ করলেও এবার তিনি মাত্র ৫ বিঘা ধান লাগিয়েছেন। বাকি জমিতে ভুট্টা, তামাক লাগিয়েছেন। ধানে এক দিন পরপর পানি দেয়া লাগে, আর অন্য চাষে মাসে ২ বার সেচ দিলেই হয়ে যায়। এতে তার চাষে খরচ সাশ্রয় হয়।
একই এলাকার কৃষক শাহাজুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরে বছরে ঠিকই তো টাকা দিয়ে দিই, কিন্তু সময় মতো পানি পাই না। এভাবে চললে চাষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। শ্যালোমেশিনেও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। সামনে চৈত্র-বৈশাখ মাসে খরায় পানি না পেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর বোরো ধান চাষ হয়। এবার কৃষকরা ২১১ হেক্টর জমি বোরো থেকে ভুট্টা চাষ করছেন। আর বাকি যা আছে, আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। কৃষকদের বিকল্প সেচের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি জিকে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, ওদের ইলেকট্রেশিয়ানদের কোনো একটা ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘট না ওঠা পর্যন্ত ওরা পানি দিতে পারবে না।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের কয়েকটা উইং আছে। আমাদের উইংয়ের সেচ খালগুলো মেরামত করছি। আর পানি যেখান থেকে আসবে, ভেড়ামারা পাম্প হাউজ, সেটা একটা আলাদা উইং। তারাও পাম্প মেরামত করছে। কানেক্টিং খাল যেটা, সেটা ড্রেনেজ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই পাম্প চালু করা হবে।