১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পরিবর্তনের বার্তা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পরিবর্তনের বার্তা

১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পরিবর্তনের বার্তা

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হলেন চার তরুণ। ব্যাগ কাঁধে, মুখে দৃঢ় প্রত্যয়ের ছাপ। বিদ্যুৎ অপচয় রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ, প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তারা হাঁটবেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ।

স্কাউটস চট্টগ্রাম জেলা রোভারের যুগ্ম সম্পাদক মো. আবু সালেহ, অফিস সহকারী রোভার মাসুদ আহমেদসহ আরও কয়েকজন শুভকামনা জানাতে এসেছেন। এ সময় আবু সালেহ বললেন, এই পরিভ্রমণ কেবল একটা ভ্রমণ নয়, এটি এক অনুপ্রেরণার যাত্রা। সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে, এরপর অন্যদের সচেতন করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

এ পরিভ্রমণে অংশ নিয়েছেন বোয়ালখালীর ঘাসফুল মুক্ত রোভার স্কাউট গ্রুপের রিমেল বড়ুয়া ও এহছানুল হক নিলয়, স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের রায়হানুল কালাম এবং গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের জয়াশীষ সূত্রধর।

তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ এবং রামু উপজেলা পরিষদে যাত্রাবিরতি ও রাত্রিযাপন করবেন। শুধু হাঁটবেন না, পথে পথে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করবেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজারগুলোতে জনসচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেবেন।

বিজ্ঞাপন

'প্লাস্টিক ও পলিথিনের অপব্যবহার কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে, তা অনেকেই জানেন না। আমরা চাই সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে বলতে, সচেতন করতে। এটাই আমাদের এই পদযাত্রার মূল লক্ষ্য।'—বললেন জয়াশীষ সূত্রধর।

এ পরিভ্রমণের পেছনে আছে প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট (পিআরএস) অ্যাওয়ার্ড অর্জনের স্বপ্ন। স্কাউটস চট্টগ্রাম জেলা রোভারের যুগ্ম সম্পাদক মো. আবু সালেহ জানালেন, প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য রোভার স্কাউটদের পরিভ্রমণ ব্যাজ অর্জন করতে হয়। এর অংশ হিসেবেই তারা ১৫০ কিলোমিটার পথ হাঁটছে।

তবে শুধু ব্যাজের জন্য নয়, এই হাঁটা তাদের কাছে এক সামাজিক দায়িত্ব। রিমেল বড়ুয়া বললেন, আমরা চাই তরুণরা শুধু নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সমাজের জন্যও ভাবুক। ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

পথের গল্প, মানুষের সাড়া

যাত্রার প্রথম দিনে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে পৌঁছানোর পরপরই স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরলেন। তাদের উদ্দেশ্য জানতে পেরে কেউ বলল, আপনাদের দেখে অনুপ্রাণিত লাগছে! কেউ আবার জানতে চাইলেন, এতটা পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে যাবেন না?

তারা জানালেন, ক্লান্তি আসবে ঠিকই, কিন্তু পথচলা থামবে না। কারণ এই যাত্রা শুধু তাদের ব্যক্তিগত স্বপ্ন নয়, এটি এক সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতীক।

একটি নতুন সকালের অপেক্ষায়

প্রতিদিন তারা নতুন এলাকায় পৌঁছাবেন, নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা পরিষদে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে তাদের এই পথযাত্রা।

তবে এই শেষ নয়, এটি কেবল শুরু। কারণ সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলে, পথ চলতে হয় বারবার। আর এই চার তরুণ সেই পথেরই যাত্রী।