বাসা-বাড়ির নির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়ার লাভ
-
-
|

জায়নামাজ, ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ শিশুদের পরিবর্তনে অসামান্য ভূমিকা রাখে। তাদের প্রথম পাঠ শুরু হয় মায়ের কোল থেকে। তার ঘরের আঙ্গিনা ও চৌহদ্দিতে। যে ঘরে দ্বিনি পরিবেশ আছে সে ঘরের পরবর্তী প্রজন্ম স্বভাবত দ্বিনদার হিসেবেই বেড়ে ওঠে।
এ জন্য আমাদের ঘরের মধ্যে যদি এমন একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা থাকে, যেখানে গিয়ে আমরা নামাজ আদায় করব। নির্জনে আল্লাহকে ডাকতে পারব, তাহাজ্জুদ ও তিলাওয়াত করব; তাহলে শিশুরাও এটা দেখে দেখে আমাদের থেকে শিখবে এবং এর প্রভাব শিশুদের মনে প্রবলভাবে গেঁথে যাবে। এভাবে নামাজের জায়গা করার জন্য বিশেষ আহামরি কোনো কিছু করার প্রয়োজন নেই, বরং একটু জায়গাকে ভিন্নভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখলেই তা ঘরোয়া মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের মসজিদ নির্মাণের কথা বলেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৫৫
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) বলেন, আমি আমার খালা নবী কারিম (সা.)-এর স্ত্রী হজরত মাইমুনা (রা.) থেকে শুনেছি যে তিনি হায়েজ অবস্থায় নামাজ আদায় করতেন না; তখন তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নামাজের জায়গায় সোজাসুজি শুয়ে থাকতেন। নবী কারিম (সা.) তার চাটাইয়ে নামাজ আদায় করতেন। সিজদা করার সময় তার কাপড়ের অংশ আমার (মাইমুনার) শরীর স্পর্শ করত। -সহিহ বোখারি: ৩৩৩
হাদিসে নামাজের জায়গা থেকে ঘরে নামাজের নির্ধারিত স্থান উদ্দেশ্য। -ফাতহুল বারি: ১/৫৫০
ঘরোয়া মসজিদের আরেকটি লাভ হচ্ছে, কোনো বেনামাজি মেহমান যদি বাড়িতে আসে তাহলে তার ওপরও নামাজের বিশেষ প্রভাব পড়বে। এ জন্য সাহাবায়ে কেরামও ঘরোয়া মসজিদ বানানোর আদেশ গুরুত্বের সঙ্গে তামিল করেছেন। হজরত মাহমুদ ইবনে রাবি (রা.) বলেন, আমি ইতবান ইবনে মালিক আনসারি (রা.), যিনি বনু সালিম গোত্রের একজন, তাকে বলতে শুনেছি, আমি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, আমার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে গেছে এবং আমার বাড়ি থেকে আমার গোত্রের মসজিদ পর্যন্ত পানি আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমার বাড়িতে এসে এক জায়গায় নামাজ আদায় করবেন, যেটা আমি নামাজ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট করে নেব।
নবী কারিম (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ- আমি তা করব। পরদিন রোদের তেজ বৃদ্ধি পেলে আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং হজরত আবু বকর (রা.) আমার বাড়িতে এলেন। নবী কারিম (সা.) প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই বললেন, তোমার ঘরের কোন স্থানে তুমি আমার নামাজ আদায় পছন্দ করো? তিনি পছন্দমতো একটি স্থান নবী কারিম (সা.)-কে নামাজ আদায়ের জন্য ইঙ্গিত করে দেখালেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন, আমরাও তার পেছনে কাতারে দাঁড়ালাম। অবশেষে তিনি সালাম ফেরালেন, আমরাও তার সালামের সময় সালাম ফেরালাম। -সহিহ বোখারি: ৮৪০
আমরা অনেক সময় ছেলেশিশুদের মসজিদে সঙ্গে নিয়ে যাই, কিন্তু মেয়েশিশুদের সঙ্গে নিই না। যদি আমাদের এ রকম ঘরোয়া মসজিদ থাকে তাহলে মেয়েশিশুরাও সেখানে গিয়ে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত হবে। খুব অল্প সময়েই সে সেখানে গিয়ে ইবাদত করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আর এই ইবাদতের আবহে ঘরে তৈরি হবে মধুময় পরিবেশ।
তা ছাড়া ঘরের মধ্যে এসব নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গার বরকতে আল্লাহতায়ালা ঘরকে সব অনিষ্টতা থেকেও মুক্ত রাখবেন।