রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেন ঘাম ঝরছে ট্রাম্পের?

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বলতেন, ক্ষমতায় এলে তিনি দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে যখন ট্রাম্পের দেখা হয়, তখনও তিনি এই কথাই জানান। তাঁর বিশ্বাস, তিনি নির্বাচিত হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

কত দ্রুততম সময়ে সমস্যার সমাধান হবে? ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার আগেই হয়তো সমাধান হয়ে যাবে! ২০২৩ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট এর চেয়ারে বসার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ করাবেন!

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস হয়ে গেলো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। একদিনেই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন এ প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তাঁর ভাষায় তিনি ‘কিছুটা সার্কাসটিক’ হয়েছিলেন।

মাঠে নামার পর ট্রাম্পের গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

প্রথমত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারণা তিনি কারো সাথে আলোচনায় বসলেই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও তিনি ‘ওয়ান টু ওয়ান ডিপ্লোমেসি’ কৌশল নিতে চেয়েছেন। ট্রাম্প গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেন। দেড় ঘন্টার আলাপের পর নিজেই সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে দুই নেতা কথা বলেন গত ১৮ মার্চ। ট্রাম্প ত্রিশ দিনের যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেটা হয়নি। তার মানে এটা পরিস্কার টেলিফোনের এসব আলাপ আসলে ব্যর্থ। কেবল একটাই কাজ হয়েছে, ফোনে ট্রাম্পকে কথা দিয়েছেন পুতিন যে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা করবে না।

দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন পরিস্কার করে দিয়েছেন যে তিনি তাড়াহুড়ো করে কিছু করবেন না। দীর্ঘ সময়ের সমঝোতায় না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছেন না পুতিন। ন্যাটো জোটকে নিয়ে তাঁর শঙ্কা। ইউক্রেনে ন্যাটোর উপস্থিতি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্যই বড় হুমকি। পুতিন কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। কোনো সমঝোতায় আসার আগে সেসব প্রশ্নের উত্তর জানা তাঁর কাছে জরুরি।

তৃতীয়ত, শুরুতেই ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিটা ঠিক ছিল না। হোয়াইট হাউস মনে করেছিল শান্তির মূল বাধাটা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এদিকে পশ্চিমা কূটনীতিকরা স্বীকার করেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ব কতটুকু বদলেছে তা দেরিতে বুঝতে পেরেছে ইউক্রেন সরকার। সেই কিয়েভের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ, বাক বিতণ্ডায় সময়ক্ষেপণ সবই এখন দৃশ্যমান।

বিষয়টি ইউরোপ ও ‍যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে একটা প্রভাব ফেলবে। যা অন্য একটি কূটনৈতিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। এসব কিছুই দেখছেন পুতিন। উপভোগ করছেন।

চতুর্থত, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবগুলোও কিছুটা দায়ী। ইউক্রেনের প্রস্তাব ছিল আকাশ ও সমূদ্রপথে যুদ্ধবিরতির আনা। কিন্তু গত সপ্তাহে জেদ্দায় আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে পূর্বাঞ্চলে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার লং ফ্রন্ট লাইনও যুদ্ধবিরতি আওতাভূক্ত হওয়া উচিত। যা পুতিন প্রত্যাখ্যান করেন। সমস্যা হচ্ছে যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেন কেউই একে অপরের সাথে কথা বলছে না। উভয়েই যুক্তরাষ্ট্র মারফত কথা বলছে। সময়টা এখানেও লম্বা হচ্ছে।

পঞ্চমত, যুদ্ধবিরতিতে আর্থিক লাভের বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের সাথে খনিজ চুক্তি নিয়ে বেশ আলোচনাও করেছেন ট্রাম্প। কারো চোখে এটা ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কেউ এর বিপরীত দিকটা ভেবে সমালোচনাও করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতায় যেতে রাজি জেলেনস্কি। তবে তাঁর শর্ত ছিল ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। হোয়াইট হাউজ অবশ্য এটা প্রত্যাখান করেছে। তবে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খনিজ চুক্তি করার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো সমঝোতা চুক্তিতে সই করে নি। সময় দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ভাবছে দেশটি।

ট্রাম্প যত দ্রুত করে ফেলতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন, বিষয়টি সেখানেও নেই। একসময় তিনি বিষয়টিকে সহজ মনে করলেও তা যথেষ্টই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।