হাজার বছরের পুরনো পাণ্ডুলিপি উন্মোচনের পথে

  • Tania mcj cou
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দুই হাজার বছরের পুরনো হেরকুলানিয়ামের পুড়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপি অবশেষে তার রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আধুনিক এআই প্রযুক্তি ও শক্তিশালী স্ক্যানিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা এই প্রাচীন গ্রন্থগুলোর প্রথম পাঠযোগ্য অংশ আবিষ্কার করেছেন, যা ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।

হাজার বছরের রহস্য সমাধানের পথে

বিজ্ঞাপন

৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাত ধ্বংস করে দিয়েছিল রোমান নগরী পম্পেই এবং হেরকুলানিয়াম। এ সময়, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রচণ্ড তাপে পুড়ে যায় অসংখ্য মূল্যবান পাণ্ডুলিপি, যা একটি বিলাসবহুল রোমান ভিলার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায় ১৭৫০-এর দশকে।

তবে পাণ্ডুলিপিগুলো এতটাই ভঙ্গুর যে, সেগুলো খোলার চেষ্টা করলেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে প্রায় ২৫০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেও এগুলো পড়তে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

অবশেষে, ২০২৩ সালে আয়োজিত ভিসুভিয়াস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়, যার ফলে প্রথমবারের মতো একটি পাণ্ডুলিপির ভেতরের পাঠযোগ্য চিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

কীভাবে সম্ভব হলো এই ঐতিহাসিক আবিষ্কার?

ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বোডলিয়ান লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত তিনটি স্ক্রোলের মধ্যে একটি স্ক্যান করা হয় ডায়মন্ড লাইট সোর্স (Diamond Light Source) গবেষণাগারে। এখানে একটি সিঙ্ক্রোট্রন নামক শক্তিশালী কণাত্বরণী (পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর) ব্যবহার করা হয়, যা উচ্চমাত্রার এক্স-রে তৈরি করতে সক্ষম।

এই এক্স-রে স্ক্যানিং পাণ্ডুলিপির প্রতিটি স্তর বিশ্লেষণ করে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্দিষ্ট চিহ্ন ও কালি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর, থ্রিডি মডেল তৈরি করে পাণ্ডুলিপিগুলো ভার্চুয়ালভাবে খোলা হয়েছে, যা ঐতিহাসিক গবেষণার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

প্রথম প্রকাশিত শব্দ: ঘৃণা

এই পদ্ধতিতে যে প্রথম পাঠযোগ্য শব্দটি উন্মোচিত হয়েছে, তা হলো প্রাচীন গ্রিক ভাষায়-ঘৃণা। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, স্ক্রোলগুলোর মধ্যে হয়তো রোমান যুগের দার্শনিক বা সাহিত্যিক কোন মূল্যবান লেখা রয়েছে, যা এতদিন মানুষের কাছে অজানা ছিল।

আরও বড় আবিষ্কারের চলমান

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি শুধু শুরু। বোডলিয়ান লাইব্রেরির গবেষক পিটার টোথ বলেছেন, আরও উন্নত চিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে এই পাণ্ডুলিপি থেকে আরও বেশি তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

এখনও নেপলসের গ্রন্থাগারে প্রায় ১০০০টি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে, যা একইভাবে বিশ্লেষণ করা গেলে রোমান সভ্যতা ও দর্শন সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানা যেতে পারে।

রোমের হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান কি পুনরুদ্ধার হবে?

এআই ও উন্নত স্ক্যানিং প্রযুক্তির সাহায্যে গবেষকরা এখন প্রাচীন সভ্যতার জ্ঞান পুনরুদ্ধারের দ্বারপ্রান্তে। হয়তো, এই পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রোমান দার্শনিকদের হারিয়ে যাওয়া মহামূল্যবান সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ইতিহাস!

অতীতের ছাই থেকে নতুন এক ইতিহাস উন্মোচিত হওয়ার আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।