ব্রাজিলের ম্যানোয়েল অ্যাঞ্জেলিম ডিনো (১০৫) ও মারিয়া ডি সুসা ডিনো (১০১), দীর্ঘতম দাম্পত্য জীবনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন। ১৯৪০ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এই দম্পতি ৮৪ বছর একসঙ্গে কাটিয়ে বিশ্বকে দেখিয়েছেন ভালোবাসা সময়ের সীমানাও পেরিয়ে যেতে পারে।
প্রথম দেখা থেকে বিয়ে
১৯৩৬ সালে কৃষিকাজের সময় তাদের প্রথম দেখা হয়। কিন্তু তখন কোনে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ১৯৪০ সালে এক আকস্মিক সাক্ষাতে ম্যানোয়েল বুঝতে পারেন, মারিয়াই তার জীবনসঙ্গী। তারপর তিনি সরাসরি অনুভূতি প্রকাশ করেন, আর মারিয়াও এতে রাজি হন। তবে চ্যালেঞ্জ এসেছিল মারিয়ার পরিবারের দিক থেকে। মারিয়ার মা প্রথমে এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি। ম্যানোয়েল ধৈর্য ধরে পরিবারের আস্থা অর্জন করেন এবং একটি ঘর তৈরি শুরু করেন। এরপর তারা বিয়ে করেন ও একসঙ্গে সংসার শুযরু করেন।
সংসার ও সংগ্রামের গল্প
ম্যানোয়েলের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। বিয়ের পর তারা তামাক চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাম্পত্য জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও তারা কখনও একে অপরের হাত ছাড়েননি। এই দম্পতির ১৩টি সন্তান রয়েছে। নাতি নাতনির সংখ্যা ৫৪ জন। তাদেরও আবার সন্তান রয়েছে। সবমিলিয়ে ১০০ জন নাতি-নাতনি রয়েছে দম্পতির। পরিবারের অমতেই দু'জনে সংসার শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে আজ তাদের সংসারে ১০০ জনের বেশি সদস্য রয়েছেন।
দীর্ঘ দাম্পত্যের রহস্য
এই দীর্ঘ সম্পর্কের রহস্যে মারিয়া বলেন, ভালোবাসাই আমাদের বন্ধন শক্ত করে রেখেছে। প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক, এই ভালোবাসার হিসাব কেউ মিলাতে পারবে না! তাই পরিবারের মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন।
আজ শতবর্ষ পেরিয়েও তারা একসঙ্গে রেডিওতে প্রার্থনা শোনেন, সময় কাটান এবং একে অপরের পাশে থাকেন। তাদের গল্প প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও পুরনো হয় না, বরং সময়ের ব্যবধানে আরও শক্ত হয়।
একটি ভালোবাসার ইতিহাস
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাদের নাম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাদের ভালোবাসার গল্প কেবল একটি রেকর্ড নয়, এটি একটি ইতিহাস। এটি প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা টিকে থাকে বছরের পর বছর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
তাদের গল্প আমাদের শেখায়, একটি সম্পর্কের মূল শক্তি হলো ভালোবাসা, পারস্পরিক সম্মান, ধৈর্য, এবং একে অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ।
আজকের যুগে, যেখানে সম্পর্কগুলো অনেক সময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়ে যায়, সেখানে ম্যানোয়েল ও মারিয়ার ৮৪ বছরের দাম্পত্য জীবন আমাদের শেখায় যদি ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে সময়ের ব্যবধানেও তা অটুট থাকে।
এই দম্পতি কেবল দীর্ঘতম বিবাহিত জীবনের রেকর্ড গড়েননি, তারা বিশ্বকে দেখিয়েছেন ভালোবাসা সব কিছুর ঊর্ধ্বে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি