নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আগাম আলু উৎপাদনে চাষিরা ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়ে আসছেন। এখন বাজারে আলুর দাম বেশি। তাই উপজেলার চাষিরা শুরু করেছেন আগাম আলু চাষ। স্বল্পমেয়াদী আগাম আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষে সেই জমিতে আগাম আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা। এ অঞ্চলের জমিগুলো একদম উঁচু বেলে-দোআঁশ মাটি। ভারী বৃষ্টিপাতেও সেখানে সহজে পানি জমে না। তাই পানি জমে আলু নষ্ট হওয়ার তেমন ভয় থাকে না। তা ছাড়া বর্তমানে আলুর বাড়তি দামের কারণে আগাম বাজার ধরার আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন। ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের বীজ আলু রোপণে কোমর বেধে লেগেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু চাষের আবহাওয়া অনুকূলে। আগাম আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতে আগাম আলু রোপণের জন্য জমিতে হালচাষ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, হিমাগার থেকে বীজ আলু সংগ্রহ ও রোপণে শত শত চাষি ও কৃষিশ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠের এত প্রাণচাঞ্চল্য নজর কাড়ছে সবার। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আগাম আলু রোপণ শেষ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এতে সদর ইউনিয়নের আলুচাষি লুৎফর রহমান লুতু ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমিতে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু রোপণ করছেন। অপরদিকে পুটিমারি ইউনিয়নের কালিকাপুর চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বি চৌধুরী টিপু ২০ থেকে ২২ বিঘা জমি, দুরাকুটি গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী ১৫ বিঘা জমিতে আগাম আলী রোপণ করবেন বলে জানান।
দুরাকুটি এলাকার আলুচাষি আকবর আলী বলেন, গত বছর আমি ১০ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপন করেছিলাম। সেখানে আগাম আলু চাষ করে কয়েক লক্ষ লাভ করেছি। তবে এবার সবকিছুর বাজারমূল্য বেশি রাসায়নিক সার, হালচাষ, কৃষকের দাম বেশি। এবার সবকিছুর দাম বেশি বিক্রিতে বাজার মূল্য বেশি না পেলে লোকসান গুণতে হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, এবছর ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আলু ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। আরও আশা করা যায় উপজেলায় ৪ শ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।
ফেনীতে তরমুজের চাষ এবং উৎপাদন বেড়ে চলেছে। জেলায় ৭৭৪ হেক্টর জমিতে এবার বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে।বেলে মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় সোনাগাজীর চরে দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও নদীকেন্দ্রিক ভূমিতে তরমুজ চাষাবাদ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। সোনাগাজীর চর যেন এখন তরমুজের বাড়ি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর তরমুজের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার টন ছাড়াবে। এবার তরমুজ চাষের সাথে সম্পৃক্ত থেকে প্রায় ৩ হাজার কৃষক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জীবিকার নির্বাহ করছে। এ মৌসুমে ১৫০ কোটি টাকা তরমুজ বিক্রির আশা করছেন জেলার কৃষকরা। এরমধ্যে আবহাওয়া এবং বাজার অনুকূল থাকলে এ বছর শুধু সোনাগাজী হতেই ১৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা তরমুজ বিক্রির আশা রয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্যমতে, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ১৬০ টন তরমুজ উৎপাদন অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।এবছর সোনাগাজীতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৭৭ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৪৯ দশমিক ৭৬ টন হলেও আবাদ ৩৬ হাজার টন ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন জেলা কৃষি অফিস।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় অন্যান্য স্থানের মধ্যে দাগনভূঞার জয়লস্কর ইউনিয়নে নদী-খাল কেন্দ্রিক ১৩ হেক্টর জমিতে এবং সদর উপজেলার ধর্মপুরের জান্নাত এগ্রোতে এবং ধলিয়ার ইউনিয়নে স্বল্প পরিসরে ৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়াও ছাগলনাইয়ায় ৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কানিপ্রতি (১ হেক্টরে ৬ দশমিক ২৩ কানি ধরে) সর্বনিম্ন খরচ ১লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বিক্রি আড়াই লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। এই হিসেবে ৭৭৪ হেক্টর জমিতে ১৫০ কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা।
আবহাওয়া ঠিক থাকলে কানিতে তরমুজ বিক্রি করা হবে ৩ লাখ টাকা
নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা আব্দুর রহমান নামে এক তরমুজ চাষি জানান, তিনিসহ সোনাগাজী চরাঞ্চলে তিনজন সম্মিলিতভাবে চর ডুব্বা এলাকায় ৪৫ কানি জমিতে বাংলা লিংক ও জাম্বু জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। কানি প্রতি (৩৯.৬৭ শতক) খরচ হয় ১ লাখ টাকা। তবে গরম আবহাওয়া থাকায় এই বছর সেচের কাজে অতিরিক্ত আরো ১০-২০ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে কানিতে তরমুজ বিক্রি করা হবে ৩ লাখ টাকা। উপযুক্ত উর্বর মাটি এবং বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে তরমুজের মৌসুমে খালি জমি পাওয়ায় সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে বিপ্লব হয়েছে বলে মনে করেন এ কৃষক।
সোনাগাজী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ বলেন, গত বছরের বন্যায় সোনাগাজীর চরে পলিমাটি জমায় আবাদকৃত তরমুজের গাছে ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়াও আমরা কৃষি অফিস থেকে এই অঞ্চলে তরমুজ চাষের উপযোগিতার বিষয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। পাশাপাশি কৃষকরা বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ লাভবান হওয়ায় নতুন করে পতিত জমিতে আবাদে আগ্রহী হয়েছে।
আল আমিন শেখ আরও জানান, এই তরমুজ চাষে ঝুঁকিও রয়েছে। ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সঠিক সময়ে ওষুধ না দেওয়া, পোকার আক্রমণ, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, গাছ মরে যাওয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে হঠাৎ অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি ফলন নষ্টে প্রভাব ফেলে বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে সোনাগাজীর জমিতে কৃষকরা উচ্চ ফলন পেয়েছে এবং দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আবাদে আগ্রহী হয়েছে স্থানীয় কৃষকসহ নোয়াখালীর কৃষকরা। আগে সুবর্ণ চরে তরমুজ আবাদ বেশি হতো, এ বছর সোনাগাজীতে নোয়াখালীর সুবর্ণ চরের চেয়েও বেশি আবাদ হয়। বন্যায় পলি জমে জমিগুলো উর্বর হয়ে উঠেছে, তাই এইবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু না হলেও মার্চ মাসের শেষে কৃষকরা এখান থেকে প্রতিনিয়ত ফলন বাজার জাত করতে পারবে।
জানা গেছে,সোনাগাজীর অনেক জমি রবি মৌসুমে খালি পড়ে থাকতো। ২০১৭ সালে নোয়াখালী থেকে আসা একজন কৃষক এই উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পান। তার সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮ থেকে ১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে লাভবান হন। পরিচর্যা খরচের তুলনায় আয় বেশি হওয়ায় নোয়াখালী সুবর্ণচরের পাশাপাশি স্থানীয়রাও উদ্বুদ্ধ হয়ে পতিত জমিতে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়ে। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে এই উপজেলায় তরমুজ চাষের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।
সোনাগাজীতে ২০২০ মৌসুমে ১০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়, ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে, ২০২২ সালে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে, ২০২৩ সালে ৫৭০ হেক্টর জমিতে, ২০২৪ সালে ৫৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় বিভিন্ন জাতের তরমুজ। চলতি বছর ২০২৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
সোনাগাজীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্রনাথ জানান, নদী বেষ্টিত এবং উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় পূর্ব থেকেই এখানকার মাটি উর্বর হয়ে উঠে। এই অঞ্চলে পলি মাটি-বেলে মাটি থাকায় এবং আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় তরমুজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই অঞ্চলের তরমুজ অনেক বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও রয়েছে এর বেশ চাহিদা।
হাঁস পালনে বদলে যাচ্ছে হাওরের শিক্ষিত বেকারদের জীবন
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা
|
ছবিঃ বার্তা২৪
কৃষি
কম খরচসহ বিনামূল্যে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন নেত্রকোনা জেলার হাওরের যুবকেরা। ধান এবং মাছের পাশাপাশি বিকল্প পেশা হিসেবে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয় পেয়েছে এই হাঁস পালন। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে বেড়ে উঠছে হাঁস। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে,অন্যদিকে চাহিদা মিটছে প্রোটিন ও আমিষের। নেত্রকোনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, বেকারদের আরও আগ্রহী করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় এনজিওগুলোর সহযোগিতাও প্রয়োজন বলেন জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরে প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন পালন হচ্ছে হাঁস। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ছোট বড় মাঝারিসহ বিভিন্ন ধরনের খামারি। বাড়তি আয় হিসেবে খামার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। হাওরে রয়েছে প্রকৃতির নানান বৈচিত্র্য। আর এই সুযোগে বর্ষাকাল পর্যন্ত অনায়াসে বিস্তীর্ণ ভূমি ব্যবহার করে পালন করছেন হাঁস। বৈশাখ মাসে ফসল ওঠার সময় হাঁসের খাবার খরচও বেঁচে যায় অনেক। যে কারণে জেলার হাওরাঞ্চল মদন , মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীতে বেশি জনপ্রিয় এখন হাঁস পালন।
নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি উপজেলার নীচু এলাকায় এখন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী অনেকে। অনেকেই বাড়তি লাভ এমনকি কায়িক পরিশ্রম কম হওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় এটিকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছেন। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রোটিন এবং আমিষের জোগান হচ্ছে।
মদন থানার জঙ্গল টেংঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত যুবক আব্দুল মান্নান। হাঁস পালনে হয়েছেন সফল। তাকে দেখে হাঁস পালনে উৎসাহিত হয়েছেন উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার, সকলেই দেখেছেন সফলতার মুখ। আব্দুল মান্নান বলেন, বেকার যুবকেরা হাঁস পালনে যুক্ত হচ্ছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁস বেড়ে ওঠে। তার খামারের থেকে উৎপাদন খরচ অনেক কম।
হাঁস পালনের সাথে যুক্ত আরও কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক তরুণই হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলছেন। হাঁস থেকে ডিম ও মাংস উৎপাদন করে তারা বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন, যা তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন হাঁসের খামার করার জন্য বেশ আগ্রহী। হাঁসের খামার করে যুবকেরা লাভবান হচ্ছেন। জেলায় বাণিজ্যিক প্রায় ৬ হাজার খামারি রয়েছে। এছাড়া ছোটখাটো করে বা বাড়িতে লালন পালনের হিসাব তো করাই হয়নি। এদিকে ডিম মাংসে মিটে যাচ্ছে প্রোটিন আমিষের চাহিদাও। তিনি বলেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিদের উন্নত করার চেষ্টা চলছে। তবে বেসরকারিভাবে এই একটি সম্পদকে কাজে লাগালে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হতে পারে।
নেত্রকোনা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলায় ২০২৩—২০২৪ অর্থবছরে ডিম, মাংস, দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ডিমের চাহিদা ছিল ৫৩ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ৫৩.৮০ কোটি, মাংস উৎপাদনের চাহিদা ছিল ১.৭৩ লক্ষ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ১.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে ২.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন।
রমজান মাসে আমের চাহিদা বাড়লে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন কৃষি উদ্যোক্তা চাষি সুযোগকে পুঁজি করে মৌসুমের আগেই চাষ করছেন কাটিমন আম।
৩৪ বছর বয়সী একজন কৃষি উদ্যোক্তা রুবেল হোসেন, সারা বছর ফল ধরে এমন একটি জাতের কাটিমন আম চাষ করে চাষের প্রতি তার আগ্রহকে একটি লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে । ছয় বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে যাত্রা শুরু করেন রুবেল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার এলাইপুরে ২০ বিঘা জমিতে কাটিমন আমের গাছ লাগিয়েছেন তিনি এখন তার গাছগুলোতে পাকা আম ও ফুলে ভরে যাচ্ছে, অনেক স্থানীয়কে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করছে।
বাগানে শোভা পাচ্ছে কাটিমন আম
গোমস্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা রুবেল এ মৌসুমে ঐতিহ্যবাহী আমের অভাবের কথা জানান। যেহেতু প্রচলিত আম এখন খুব কমই পাওয়া যায়, তাই আমার বাগানটি ফল এবং ফুলে ভরা গাছের সাথে আলাদা, তাদের ডালগুলি ওজনের নিচে বাঁকানো তিনি বলেছিলেন। কাটিমন আমের জাতটি বছরে তিনবার ফল দেওয়ার ক্ষমতার ক্ষেত্রে অনন্য এবং সঠিক কৌশলের সাহায্যে কৃষকরা ফসল কাটার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমি রমজানে আম চাষে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যখন চাহিদা সর্বোচ্চ। গত বছর, আমি চমৎকার দাম পেয়েছি, তাই আমি এই বছর একই কৌশল অনুসরণ করেছি।
কৃষি উদ্যোক্তা রুবেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমানে আমার বাগানে প্রায় ২৫০ মণ আম রয়েছে, প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেছি। আমি এই মৌসুমে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছি। লাভজনকতার বাইরেও কাটিমন আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছি। এই আমগুলো সুস্বাদু এবং চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। আমি কোনো ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি বাগান থেকে বিক্রি করি।
তার সাফল্য ইয়াসিন আলী সহ অন্যদের উৎসাহিত করেছে, রুবেলের বাগানের কাছে ২৫ বিঘা জমিতে কাটিমন আমের আবাদ করেছেন। ইয়াসিন আলী বলেন, এই জাতটি বছরে তিনবার ফল দেয়, কিন্তু আমি অফ-সিজনে মনোযোগ দেই, বিশেষ করে রমজান মাসে যখন আমের অভাব হয়, ভালো দাম নিশ্চিত করে, আশেপাশের এলাকার দর্শনার্থীরাও এই সুযোগে আগ্রহ নিচ্ছেন।
ইয়াসিন আরো বলেন, রুবেলের সাফল্যের কথা শুনে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আমার নিজের বাগান শুরু করার আগে তার সাথে পরামর্শ করার পরিকল্পনা করছি,
নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালেহ আকরাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রমজান মাসে আমরা আমদানিকৃত ফলের বৃদ্ধি লক্ষ্য করি, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা নিষ্কাশন হয়। দেশীয় বছরব্যাপী ফল উৎপাদন সম্প্রসারণ ভোক্তা এবং জাতীয় অর্থনীতি উভয়কেই উপকৃত করতে পারে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহায়তা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে কাটিমন আম চাষ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করলে তা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমি কাটিমন আম চাষের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।
একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলে মৌসুমে একবার ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল চাষে স্বপ্নও দেখতো না কৃষক। এবার সেই বরেন্দ্রভূমিতে দেশি বিদেশি ফুল চাষে চমক দেখালেন এক উদ্যোক্তা। ২০১৭ সালে শুরু করে এখন ফুল বিক্রি করেই বছরে আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এখানকার উৎপাদিত ফুল সরবরাহ হচ্ছে পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়ে। এবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে চাষ করেছেন বিভিন্ন জাতের ফুল। কৃষি বিভাগ বলছে ফুল চাষের উর্বরভূমি বরেন্দ্র অঞ্চল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বংপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুল ইসলাম টুটুল। শখের বসে বাড়ির পাশে নিজ জমিতে ২০১৭ সালে ফুল চাষ শুরু করেন। এরপর বাড়াতে থাকেন বাগানের পরিমাণ। ২০১৯ সালে করোনায় তার ১৫ বিঘা জমির ফুল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তখন সব পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরপরেও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। ধীরে ধীরে আবারও আবারও ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার জমিতে রয়েছে। গাদা,গোলাপ,যারভেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বেশ কয়েক জাতের ফুল। এরমধ্যে গাদা গোলাপ তৈরি করেছেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে। এবার ফুল বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।
সাদিকুল ইসলাম টুটুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রথম দিকে যশোরের গদখালী থেকে ফুলের চারা নিয়ে জমিতে ফুল চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার বাগানে গোলাপ, রজনিগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল রয়েছে।
তিনি বলেন, বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ফুলের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুল বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার ফুল ব্যবসায়ীরা আমার বাগান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার তানভীর আহমেদ সরকার বার্তা২৪.কমকে জানান, জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করায় তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এলাকায় ফুল চাষ বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফুল চাষ বৃদ্ধি হলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বেকার সমস্যা দূর হবে।