হাঁস পালনে বদলে যাচ্ছে হাওরের শিক্ষিত বেকারদের জীবন

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবিঃ বার্তা২৪

ছবিঃ বার্তা২৪

কম খরচসহ বিনামূল্যে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন নেত্রকোনা জেলার হাওরের যুবকেরা। ধান এবং মাছের পাশাপাশি বিকল্প পেশা হিসেবে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয় পেয়েছে এই হাঁস পালন। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে বেড়ে উঠছে হাঁস। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে,অন্যদিকে চাহিদা মিটছে প্রোটিন ও আমিষের। নেত্রকোনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, বেকারদের আরও আগ্রহী করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় এনজিওগুলোর সহযোগিতাও প্রয়োজন বলেন জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাওরে প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন পালন হচ্ছে হাঁস। প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ছোট বড় মাঝারিসহ বিভিন্ন ধরনের খামারি। বাড়তি আয় হিসেবে খামার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। হাওরে রয়েছে প্রকৃতির নানান বৈচিত্র্য। আর এই সুযোগে বর্ষাকাল পর্যন্ত অনায়াসে বিস্তীর্ণ ভূমি ব্যবহার করে পালন করছেন হাঁস। বৈশাখ মাসে ফসল ওঠার সময় হাঁসের খাবার খরচও বেঁচে যায় অনেক। যে কারণে জেলার হাওরাঞ্চল মদন , মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীতে বেশি জনপ্রিয় এখন হাঁস পালন।

বিজ্ঞাপন

নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি উপজেলার নীচু এলাকায় এখন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী অনেকে। অনেকেই বাড়তি লাভ এমনকি কায়িক পরিশ্রম কম হওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় এটিকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছেন। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রোটিন এবং আমিষের জোগান হচ্ছে।

মদন থানার জঙ্গল টেংঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত যুবক আব্দুল মান্নান। হাঁস পালনে হয়েছেন সফল। তাকে দেখে হাঁস পালনে উৎসাহিত হয়েছেন উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার, সকলেই দেখেছেন সফলতার মুখ। আব্দুল মান্নান বলেন, বেকার যুবকেরা হাঁস পালনে যুক্ত হচ্ছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁস বেড়ে ওঠে। তার খামারের থেকে উৎপাদন খরচ অনেক কম।

বিজ্ঞাপন

হাঁস পালনের সাথে যুক্ত আরও কয়েকজন যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক তরুণই হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলছেন। হাঁস থেকে ডিম ও মাংস উৎপাদন করে তারা বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন, যা তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন হাঁসের খামার করার জন্য বেশ আগ্রহী। হাঁসের খামার করে যুবকেরা লাভবান হচ্ছেন। জেলায় বাণিজ্যিক প্রায় ৬ হাজার খামারি রয়েছে। এছাড়া ছোটখাটো করে বা বাড়িতে লালন পালনের হিসাব তো করাই হয়নি। এদিকে ডিম মাংসে মিটে যাচ্ছে প্রোটিন আমিষের চাহিদাও। তিনি বলেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিদের উন্নত করার চেষ্টা চলছে। তবে বেসরকারিভাবে এই একটি সম্পদকে কাজে লাগালে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হতে পারে।

নেত্রকোনা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলায় ২০২৩—২০২৪ অর্থবছরে ডিম, মাংস, দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ডিমের চাহিদা ছিল ৫৩ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ৫৩.৮০ কোটি, মাংস উৎপাদনের চাহিদা ছিল ১.৭৩ লক্ষ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ১.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে ২.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন।