উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের বাধায় পন্ড জাপা’র ইফতার মাহফিল

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের স্লোগান দিয়ে জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক।

শনিবার (৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্লবী থানা সংলগ্ন ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে ইফতার মাহফিল শুরু হওয়ার কথা ছিলো।

বিজ্ঞাপন

বিকাল ৪টার দিকে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও স্থানীয় দুই শতাধিক রোজাদার ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হন। এসময় ৩০ থেকে ৪০ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে উপস্থিত হয়ে অশালীন শ্লোগান দিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিড়ে ফেলে।

এসময় উপস্থিতি জাপার কর্মী সমর্থকদের গলাগাল দিয়ে হলরুম থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে হলরুম ও গেটের সামনে জড়ো হয়ে অশালীন ব্যাক্যে স্লোগান দেয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা। ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করার কথা ছিলো জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে জাতীয় পার্টির ইফতার অনুষ্ঠানে বাঁধা দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির দুইজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অনেকেই মামলা ও হামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছেন। অথচ, বর্তমান সরকার আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করছে। মিছিল ও সমাবেশের ন্যায় অহিংস স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, তা থেকে আমাদের বঞ্চিত করছে।

তিনি বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। এমনকি পরবর্তীতে থানায় জিডি করতে গেলেও দায়িত্বরত ব্যাক্তিগত তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আটককৃতদের জামিন দেয়া হচ্ছেনা। ফলে দোষী সাব্যস্ত না হয়েও শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে নিরপরাধ মানুষ কারাভোগ করছে। এ ধরনের হয়রানির মাধ্যমে আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে যোগ না দিতে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে । ফলে বলা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক আগেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

তিনি বলেন, এই সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আনুকূল্যে নতুন দলটি ক্ষমতার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে চাইবে। এমন বাস্তবতায় পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বোকামী। তা ছাড়া বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃষ্টে এ কথা বলা যায় গ্রহনযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যে শক্তি ও সামর্থ দরকার তা এই সরকারের নেই। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ এখন মনে করে এ সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সরকারের কোন নির্বাচনই বিশ্বাসযোগ্য হবে না, দেশ বিদেশে গ্রহণ যোগ্য হবেনা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন এই অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে বেকারত্ব। এরই মধ্যে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হচ্ছে। একারণেই, দেশে অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে রাজনীতির নামে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের জন্য উশৃঙ্খল জনতার অভাব হয় না। সরকার ঘনিষ্ঠ মহল ভাবাদর্শের এ সকল জনতাকে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী বাঁধা দিচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। এই সুযোগে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী বাহিনী যে কাউকে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে তার সহায় সম্পদ লুটপাট করতে পারছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে মবক্রেসী বা মবতন্ত্র চলছে।

সম্প্রতি গুলশানের একটি বাসায় লুটপাটের ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে, অথচ লুটের ঘটনায় ৮০/৯০ জন মানুষ উপস্থিত ছিল বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়। বাকি মানুষ কি কারনে দায় মুক্তি পেল, বোঝা গেল না।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মনোবল দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে ঢালাওভাবে বিগত সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করায় তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। দায়িত্ব পালনকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারনে ঝুঁকি মনে করছে ও তারা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে না, ধারণা করি। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।