রাজশাহীতে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে আম চাষিদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
তবে বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া বৃষ্টি চাষিদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। দীর্ঘদিনের খরা ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার পর এই বৃষ্টির পরশে আমের মুকুল নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
আম চাষিরা বলছেন, এ বছর বৃষ্টির আগমন তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। তারা জানাচ্ছেন, এই বৃষ্টির ফলে তাদের আম গাছের মুকুলগুলো আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন। বিশেষ করে, যে আম গাছগুলো শুষ্কতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এখন সেগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
চাষিরা বলছেন, দীর্ঘদিনের খরা এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা আম চাষে অনেক ক্ষতি করেছে, তবে এই বৃষ্টি তাদের জন্য নতুন শক্তি এনে দিয়েছে। তারা আশা করছেন, এই বৃষ্টি ফলন বাড়াতে সহায়তা করবে এবং বাজারে আমের দামও ভালো হবে।
রাজশাহীর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এই বৃষ্টির পর কৃষকদের আমের ফলন নিয়ে আশাবাদী হওয়া উচিত। তারা আরও বলেন, বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছগুলো নতুন করে পানি পেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে, যা আমের গুণমান এবং পরিমাণের জন্য উপকারী হবে। এছাড়া, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বৃষ্টির পর কৃষকদের আরও কিছু সহায়তা দেওয়া হবে যাতে তারা পরবর্তী সময়ে শস্যের সুরক্ষা এবং সঠিক পরিচর্যা করতে পারেন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাষি আব্দুল মালেক বলেন, আমরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় মুকুল টিকবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না। এই বৃষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
তানোর উপজেলার আম চাষি মফিজুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির আগে তীব্র গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ার ভয় ছিল। কিন্তু এই বৃষ্টির পর মুকুলগুলো আরও ভালো হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে যে, আমের ফলন ভালো হবে। গত কয়েক দিন খরা এবং তাপমাত্রা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল, তবে আজকের বৃষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমি আশা করি, এই বৃষ্টি ফলন বাড়াতে সাহায্য করবে।
বাঘা উপজেলার আম চাষি আবদুল জব্বার বলেন, বৃষ্টির কারণে আমার আম গাছগুলো নতুন প্রাণ পেয়েছে। আগে গাছগুলো খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল, কিন্তু এখন তারা আরও শক্তিশালী দেখাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে গরম ছিল, যা গাছের জন্য ক্ষতিকর ছিল। তবে এখন আমি আশাবাদী যে এই বৃষ্টির পর আমের গুণমান ভালো হবে এবং ফলনও বাড়বে। আমি কৃষি বিভাগের সাহায্যও আশা করছি।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষেরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। নগরের বিনোদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রি শাহ আলম জানান, বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা যাচ্ছে না, আজ দুপুরের পর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। শহরের রিকশাচালকরা পলিথিন ও রেইনকোট মুড়িয়ে কাজ করছেন, কিন্তু ভাড়া কম পাচ্ছেন। আবু হাশেম নামের এক রিকশাচালক বলেন, বৃষ্টির কারণে মানুষ কম বের হচ্ছে, ফলে ভাড়া কম পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এই বৃষ্টি আমের জন্য উপকারী হবে, কারণ দীর্ঘদিন পর বৃষ্টির ফলে আমের গুটি আরও শক্তিশালী হবে। তবে, যদি বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে রোদ উঠলে আম চাষিদের ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করা প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে, পেঁয়াজ ও ধানের মতো অন্যান্য ফসলের কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, এই বৃষ্টি আমের মুকুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে চাষিদের অতিরিক্ত আর্দ্রতা থেকে সাবধান থাকতে হবে, যাতে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব না ঘটে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, আজ বিকেল ৩ টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বৃষ্টিপাত ৫.২ মিলিমিটার। এ ধরনের আবহাওয়া আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, রাজশাহীতে গত বুধবার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে, বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমে গেছে। গতকাল বেলা ২টার পর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি কিছু সময় স্থায়ী হলেও আজ সকাল থেকে এটি অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সময়ের বৃষ্টি আমের মুকুলের গুণগত মানের উন্নতিতে সাহায্য করবে। তবে, চাষিদের নিয়মিত পরিচর্যা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে ছত্রাকজনিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, এই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে গেছে এবং আগামীকালও বৃষ্টি থাকতে পারে। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।