শিল্পে বাড়ছে গ্যাসের দাম, এপ্রিলেই ঘোষণা!
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
নতুন শিল্পে দাম বাড়ানোর পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ৩০ টাকা থেকে দাম বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মতো নির্ধারণ করার আভাস পাওয়া গেছে। এপ্রিলে ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সুত্রটি দাবি করেছে, দাম কিছুটা হলেও বাড়ছে এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। তবে কত টাকা বাড়ানো হবে, শুধু নতুন শিল্পে বাড়বে নাকি বিদ্যমান শিল্পেও বাড়বে সে বিষয়টি পুরোপুরি চূড়ান্ত হয় নি। দরের কয়েকটি ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি ফর্মুলায় আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমে গেলে দাম কমানোর ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি বিদ্যমান শিল্পের বিষয়টি নিয়ে কথা চলমান রয়েছে।
বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন ও প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) গ্যাসের অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা, নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করা। পাশাপাশি বিদ্যমান শিল্পে অনুমোদনের বেশি গ্যাস ব্যবহার করলে বাড়তি গ্যাস ৭৫.৭২ টাকা নির্ধারণ করা।
পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। পেট্রোবাংলা তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দাম না বাড়ালে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। পেট্রোবাংলার সেই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শুনানিতেও ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা তীব্র আপত্তি তোলেন। বিশেষ করে শিল্পে দুই ধরণের দর করার বিরোধীতা করেন সকলেই। কিন্তু তারপরও নির্বাহী বিভাগ ও বিইআরসি দাম বাড়ানোর পথেই হাটছে বলে জানা গেছে।
দাম বাড়ছে কি-না? এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কমকে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, গ্যাসের দাম না বাড়ালে যে কোন দিন আদেশ দেওয়া যেতে পারে, দাম বাড়ানো হলে ঈদের আগে ঘোষণা দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না বলে মনে করি। তবে এখনও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় নি।
এক পশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে নীতি সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত রয়েছে। সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে সেটাও এখানে বিবেচ্য।
শুনানিতে অনেকেই শিল্পে দুই ধরণের দরের বিষয়ে আপত্তি করেন। তারা বলেছেন, বিদ্যমান শিল্প বিদ্যমান দরে, আর নতুন শিল্পের জন্য বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হলে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এ বিষয়ে বিইআরসি কি ভাবছে? জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কমিশনের বৈঠকে মতামতগুলো বিশ্লেষণ করবো। তারপর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। নিশ্চয় সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানিতে ক্যাব, ব্যবসায়ী সংগঠন শিল্প মালিকদের তোপের মুখে পড়ে বিইআরসি, পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানি কর্মকর্তারা। প্রস্তাবকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে শুনানি করায় বিইআরসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। শুনানিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে এবারই প্রথম।
শুনানিতে বিকেএমইএ সভাপতি হাতেম আলী বলেন, অবান্তর অযৌক্তিক প্রস্তাবের শুনানি বন্ধ করার বিনীত অনুরোধ করছি। ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা হলে নতুন শিল্প আসবে না, শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। আশা করি শিল্পখাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করবেন না।
বিটিএমইএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা বিনিয়োগ করে ফেঁসে গেছি। ব্যবসা বন্ধ করতে পারছি না, ব্যাংক ঋণ রয়েছে বলে। না হলে অনেক আগেই বন্ধ করে দিতাম। এখন যে ৩০ টাকা দিচ্ছি সেটাই অনেক বেশি। আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, আর আপনারা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আপনারা ব্যবসাটা কি ভারতের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন! দয়া করে শিল্পকে ভারতের হাতে তুলে দিবেন না।
পেট্রোবাংলা কয়েকটি উৎস থেকে গ্যাস কিনে থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কেম্পানি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে প্রতি হাজার ঘনফুটের দাম দেওয়া হয় ২৮ টাকার মতো, আর বাপেক্সকে দেওয়া হয় ১১২ টাকার মতো।
দেশের খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২.৭৬ ডলার, আর টাল্লোকে দেওয়া হয় ২.৩১ ডলার। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম ১০.৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.০৯ ডলার। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কয়েক দশকের স্থবিরতার কারণেআমদানির দিকে যেতে হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।