যশোরে ঘুষেই চলছে ৮০ ভাগ ইটভাটা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঘুষেই চলছে যশোর জেলার ৮০ ভাগ অবৈধ ইটভাটা। ঝুঁকিপূর্ণ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই পরিচালিত হচ্ছে এসকল ইটভাটা। সরকারিভাবে বারবার অবৈধ ভাটা উচ্ছেদের নির্দেশনা আসলেও যেন কচ্ছপ গতিতেই পদক্ষেপ নিচ্ছে যশোর পরিবেশ অধিদফতর।

জানা যায়, যশোর জেলার ৯টি থানায় ইটভাটা গড়ে উঠেছে ১৪৭টি। ৩০টি ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ১১৭টি ভাটার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ফসলি জমি নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে বেশিরভাগ ইটভাটা। ইটভাটায় পোড়ানো কাঠের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র। এসকল অবৈধ ইটভাটা যেমন ক্ষতি করছে পরিবেশের, তেমনই সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে।

বিজ্ঞাপন

আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রায় ১২০টা ভাটায় না মেনে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। এছাড়াও জেলার অনেক ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলতে থাকা একাধিক ইট ভাটায় দেখা দিয়েছে ফাঁটল। ঝুঁকিপূর্ণ এসকল ইটভাটা যেন দেখেও না দেখার ভান ধরেছে কর্তৃপক্ষ। আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন না করা এবং এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও যেন ভুলেই গেছে যশোর জেলা পরিবেশ অধিদফতর।

ইটভাটার আশেপাশের স্থানীয়রা জানায়, কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেন না এসকল ইটভাটা মালিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও গ্রামীণ সড়কের পাশে ফসলি জমি ধ্বংস করে গড়ে ওঠা ইটভাটা ভাটা থেকে প্রতিনিয়ত কুণ্ডলী পাকিয়ে বের হয় কালো ধোঁয়া। ধোঁয়া থেকে ছাইয়ের ছোট ছোট টুকরো এসে পড়ছে আশেপাশের ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা ঘরবাড়ির উপর। দীর্ঘদিন যাবত ইটভাটার পাশে বসবাস করায় অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানী রোগে।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও জানায়, ইটভাটায় প্রতিনিয়ত মাটি বহন করায় রাস্তায় পড়ছে মাটির প্রলেপ। দুর্ঘটনার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তা। এসকল ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়াই কিছু বলতে গেলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু এতো অনিয়মের পরও কেন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয় না জানতে চান স্থানীয়রা।

একাধিক ইটভাটা মালিক জানায়, আমরা ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য কম চেষ্টা করি নাই। কিন্তু নানা সমস্যা দেখিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতা ছাড়া আমরা নির্বিঘ্নে বছরের পর বছর কাজ করতে পারতাম না। অর্ধেকের বেশি ভাটাই অবৈধ। আমাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন পরিবেশ অধিদফতর। তাদের সম্মতি ছাড়া তো আর কাজ চলছে না।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন ভাটা মালিক বলেন, আমাদের ছাড়পত্র না দিলেও প্রতি বছর আমাদের টাকা দিতে হয়। এই বছর আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরও আমার ভাটা ভেঙে দিয়েছে। আমার ভাটা ভাঙার সময় পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালকে বলেছিলেন আমার টাকা ফিরিয়ে দিবেন। তখন তিনি আমাকে বলেছেন, ভাটা মালিক সমিতির সাথে কথা বলতে। প্রতিটা ভাটা মালিকের কাছে পরিবেশ অধিদফতর টাকা খায়। বর্তমানে যে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে সেটাতেও পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ভাটা মালিকদের সাথে সিদ্ধান্ত করে করছে।

এবিষয়ে যশোর পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক এমদাদুল হক বার্তা২৪-কে বলেন, যারা টাকা নেওয়ার কথা বলছে তাদেরকে লিখিতভাবে আমাকে জানাতে বলেন। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।

অবৈধ ১১৭ টা ইটভাটার কয়টা উচ্ছেদ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।