মেধাবী, সৎ ও গণতন্ত্রমনা সাংবাদিক ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ
-
-
|

জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি সভা
প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ একজন গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক মানুষ ছিলেন। তার ইতিহাস চর্চা ছিল নির্মোহ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও সৎ সাংবাদিক। বর্তমানে যেখানে অনেক সাংবাদিক ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য দালালি করেন সেখানে তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত সততার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে গেছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে রাজনৈতিক পরিবর্তন যে দিকে যাচ্ছে সেখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের ইতিহাসের ভিত্তিটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত সময়ে আমার সঙ্গে তার যে সম্পর্কটা ছিল সেটা ছিলো রাজনৈতিক, আন্দোলনভিত্তিক। একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ যখন আন্দোলনকে সমর্থন করেন, তখন মনে হয় বিরাট পাওনা। সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কেউ যখন এগিয়ে আসছে না তখন মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের মতো লোক চলে আসে এটা কিন্তু আন্দোলনের জন্য বিরাট পাওয়া।
বিগত সময়ের আন্দোলন পুঞ্জিভূত হতে হতে ফ্যাসিবাদের যে পতন হলো এখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের পায়ের ছাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই আগস্টের আন্দোলনের পরে আমরা অনেককেই দেখতে পাচ্ছি কিন্তু এই আন্দোলনের যে ফাউন্ডেশন, জনমত সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে স্বৈরাচার বিরোধী যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছে সেখানে মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের চিরায়ত অবদান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লড়াইয়ের জন্য যদি কাউকে পদক দিতে হয় তাহলে মাহফুজ উল্লাহকে দিতে হবে কারণ যখন কেউ যেত না টেলিভিশনে তখন তিনি একা ইনিংস খেলেছেন। শেষ টকশো যেদিন করেছে সেদিন মাথাঘুরে পড়ে গেছে। তারপর ব্যাংককে ডাক্তার দেখিয়ে দেশে আসার ৭/১০ দিন পরই চলে গেছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মাহফুজ উল্লাহ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। আমি শুনেছি, অনেকে অনেক সময় তাকে দাওয়াত দিতে ভয় পাতেন। উনি আসবেন, একা কথা বলবেন, বিতর্কে উনার সঙ্গে পারা খুব মুশকিল ছিলো। উনার ৪/৫ দশকের ইতিহাস মুখস্ত ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেরুদণ্ড ওয়ালা সাংবাদিক পাওয়া খুব মুশকিল। ইতিহাসে সাংবাদিকদের ক্ষমতার সঙ্গে কলিউশন টা খুব বাজে। বছরের পর বছর সাংবাদিকরা লিডার হওয়ার জন্য, একটা প্লট পাবার জন্য। সেই জায়গায় মাহফুজ উল্লাহ ভাই ব্যতিক্রম ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তিনি নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আমরা সবসময় পরিবেশ-বনকে এক কোণায় রেখে দেই, এটা কিন্তু চলবে না। আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখতে চাই কিন্তু সেই পরিবর্তনে যদি আমরা বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার আলোচনা না দেখতে পাই তাহলে পরিবর্তন কিন্তু একেবারেই নিরর্থক। আমার কাছে মনে হয় মাহফুজ উল্লাহ বাসযোগ্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন, আমরা যদি সেদিকে না যেতে পারি তাহলে নিজেদেরকে ক্ষমা করতে পারবো না।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও এসময় প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।