বিশিষ্ট ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষের সমাগম উপলক্ষ্যে আয়োজন সম্পন্ন করেছে মাহফিল কমিটি। এ উপলক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহারাজপুর ইউনিয়নের ঘোড়াস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রায় ৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটেছে এবং দূরদূরান্ত থেকে শ্রোতারা আসছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছে জোহর নামাজ শেষে বয়ান পেশ করার কথা রয়েছে মিজানুর রহমান আজহারীর।
সরজমিনে মাহফিল এলাকায় দেখা যায়, জনসমাগম বিবেচনা করে দর্শকদের জন্য ৮টি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রাণকেন্দ্র মহারাজপুর ইউনিয়নের ঘোড়াস্ট্যান্ডের পাশের আমবাগান মাঠে করা হয়েছে মূল মঞ্চ। এই মূল মাঠ ছাড়াও আশপাশে পুরুষদের জন্য ৩টি ও নারীদের জন্য ৪টি আলাদা আলাদা মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মূল মাঠে ৪ টি প্রজেক্টরসহ সব মাঠে থাকবে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য গ্রামীণফোনের টাওয়ার, রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল, সমাগম কেন্দ্র করে রয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্প। জাবালুন নূর ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই ঐতিহাসিক মাহফিলের আয়োজন করছে। এ মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন জাবালুন নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু জার গিফারী এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
অপরদিকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মাহফিলের ময়দানে আসছেন। অনেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। কেউ একা, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ পরিচিতজনদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। এছাড়া আজকে আগত দর্শকদের জন্য বিকেল থেকে বিভিন্ন শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকারী মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী আগামীকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাহফিলে আসবে। এই উপলক্ষ্যে সেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আশা করছি আমরা একটি ভালো মাহফিল উপভোগ করতে পারবো।
গোমস্তাপুর উপজেলার যাতাহারা এলাকা থেকে এসেছেন মো: রিফাত। তিনি বলেন, আমার পছন্দের হুজুর মিজানুর রহমান আজহারী। তার অসংখ্য ওয়াজ ইউটিউবে শুনেছি। আগে না আসলে মঞ্চের কাছাকাছি স্থানে জায়গা পাওয়া সম্ভব না। তাই এবার সরাসরি দেখতে একদিন আগে বিকেলেই চলে এসেছি।
শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, মধুর কণ্ঠে বয়ান করেন আজহারী হুজুর। তাকে সরাসরি দেখে বয়ান কখনো শুনতে পারিনি। খুব ইচ্ছে তাকে সরাসরি দেখে বয়ান শোনার। হুজুরকে দেখে বয়ান শোনার জন্য আজ সন্ধ্যার দিকেই মাহফিল মাঠে চলে এসেছি।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য হাফেজ গোলাম রাব্বানী বলেন, মূল প্যান্ডেলসহ সকল কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। সুতরাং বিগত মাহফিলে ঘটে যাওয়া চুরি-ছিনতাই এখানে ঘটবে না বলে আমরা আশা করছি। এরপরও সেদিক বিবেচনা করে আমরা কাজ করছি। মাঠের প্রবেশ পথেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে দামি স্বর্ণালংকার পরিধান না করতে নারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত টয়লেট, পানির ব্যবস্থা, খাবার হোটেল, প্রকাশনা স্টল, মেডিকেল টিম, ও পরিবহণ রাখার জন্য প্রায় ১৬টি গ্যারেজের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাহফিলের সভাপতি মাওলানা আবু জার গিফারী বলেন, মাহফিল সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মাহফিলের মাঠগুলোতে। পুরো শহরে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বক্তা ও অতিথিগণের বক্তব্য শুনতে পারবে মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ থেকেই কাজ শুরু করছে পুলিশ বাহিনী। যানজট নিরসনে ট্র্যাফিক পুলিশ কাজ করছে এবং জননিরাপত্তায় পুলিশের সদস্যরা নিয়োজিত আছে।