অন্ত্রে খাবার পরিবহন এবং পরিপাক
-
-
|
![অন্ত্রে খাবার পরিবহন / ছবি: পিক্সাবে](https://imaginary.barta24.com/resize?width=1280&quality=75&type=webp&path=uploads/news/2025/Feb/14/1739517944691.jpg)
অন্ত্রে খাবার পরিবহন / ছবি: পিক্সাবে
আমরা যখন খাবার খাই, সে খাবার যে শুধু পাকস্থলির জন্য খাই তা কিন্তু নয়। আমাদের শরীরের যে ছোট ছোট অঙ্গানু রয়েছে তার শক্তির জোগান এবং কার্যকারিতার পেছনেও সরাসরি সম্পৃক্ত আমাদের গ্রহণ করা খাবার। যে খাবার আমরা খাই, তাই আমাদের শরীরের সব কার্যক্রমের শক্তি জোগায়। তাই অনেকেই যেসব খাবার খাওয়া হচ্ছে, তার দিকে বিশেষ নজর দেন। তবে শুধু খাবার উপাদান নয়, খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কত দ্রুত বা ধীরে খাবার হজম হচ্ছে, তা শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার জানান দেয়।
খাবার পরিপাক হওয়ার প্রক্রিয়া খাবার চিবানোর সময় মুখেই শুরু হয়। এরপর পাকস্থলি থেকে অন্ত্রে এই হজম প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চলমান থাকে। অন্ত্রে থাকা কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া মেটাবোলাইট নামক ছোট অণু তৈরি করে, যা পরিপাকের কাজ করে। গ্রহণকৃত খাদ্য ভেঙে শক্তি উৎপাদন এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া এবং বিপাকীয় পদার্থ ছাড়া অন্ত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের মধ্য দিয়ে খাদ্য পরিবহন করা বেশ কঠিন হত। এর ফলে খাদ্য জমা হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অস্বস্তি হতে পারে।
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের খাবার গ্রহণের পাশাপাশি, পরিপাক ক্রিয়া নিয়েও সচেতন হতে হবে। খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে যে সময় লাগে তাকে অন্ত্রের পরিবহন সময় বলে। একজনের অন্ত্রে খাবার প্রবেশের সময়কাল অন্যজনের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। আনুমানিকভাবে বলা যায়, ব্যক্তিভেদে খাদ্য শরীরের মধ্য দিয়ে যেতে ১২ থেকে ৭৩ ঘণ্টার মধ্যে সময় নিতে পারে। অর্থাৎ গড়ে ২৩-২৪ ঘণ্টা করে সময় লাগে।
পরিবহন সময়ের এই তারতম্য বিভিন্ন ব্যক্তির অন্ত্রের স্বাস্থ্য অর্থাৎ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের পার্থক্যকে বোঝায়। জিন, খাদ্যাভ্যাস এবং অন্ত্রে থাকা মাইক্রোবায়োমের সংখ্যার ভিত্তিতে এই পার্থক্য দেখা যায়। অন্ত্রের পরিপাক হতে যদি সময় বেশি লাগে অর্থাৎ, অন্ত্রের কার্যকারিতার গতি ধীর হয়, তাহলে এর মানে হলো বৃহদান্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন বিপাক ঘটাচ্ছে।
এর কারণ হলো আমাদের দেহের মতো, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোরও খাবার প্রয়োজন হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ফাইবারজাতীয় উপাদান বেশি উপভোগ করে। কিন্তু, যদি খাবার হিসেবে খাওয়া ফাইবার অন্ত্রে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নেয়, তাহলে এই অণুজীবগুলো বিকল্প খাদ্য খোঁজে। তখন তারা প্রোটিন গ্রহণের আগ্রহ দেখায়। ফাইবারের বদলে প্রোটিন গ্রহণে পেটে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হতে পারে। এতে পেটে ফাঁপা ভাব এবং প্রদাহ অনুভব হতে পারে।
অন্ত্রে ধীরগতিতে খাবার পরিবহনের ফলে আংশিকভাবে হজম হওয়া খাবার ক্ষুদ্রান্ত্রে আটকে যেতে পারে। এতে ক্ষুদ্রান্ত্রে ব্যাকটেরিয়া অত্যধিক বেড়ে বমি বমি ভাব এবং পেটে গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দ্রুত অন্ত্রের চলাচল স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আবার অন্যদিকে খাবার ধীরে পরিবহনেরও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। পেটের প্রদাহ রোগ, ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রদাহ বা স্নায়ুবিক কোলনের কারণে পরিবহন সময় ক্ষণ হতে পারে।
খাবার দ্রুত পরিবহন হওয়ার কারণে খাবারের সঙ্গে পানিও প্রবাহিত হয়। কারণ অনে্ত্র খাবার পরিপূর্ণ পরিপাক হয়ে মলে রূপান্তরিত হওয়ার পর্যাপ্ত সময় পায় না। এর ফলে ডায়রিয়াও হতে পারে।