রোজার আদব জানা জরুরি
-
-
|

মসজিদে হারামে তারাবির জামাত, ছবি: সংগৃহীত
আদব অর্থ উৎকৃষ্ট রীতিনীতি, উত্তম পদ্ধতি ইত্যাদি। ইবাদত-বন্দেগি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব কাজ-কর্ম, লেনদেন, সামাজিকতা, আচার-ব্যবহার এবং মন ও মানসের পরিশুদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা যে রীতি ও নীতি নিজে অবলম্বন করেছেন এবং উম্মতকে তা অনুসরণ করতে বলেছেন তারই নাম আদব।
ইসলামে আদবের (তা যে কোনো বিভাগেরই হোক না কেন) স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। এগুলো কোনো অনর্থক বা অতিরিক্ত জিনিসের মতো নয়; বরং তা ইসলামের যাবতীয় হুকুম-আহকামের মৌলিক উদ্দেশ্যেরই অন্তর্ভুক্ত।
ইবাদত সংক্রান্ত আদবসমূহ এ জন্য যত্নের সঙ্গে পালনীয় যে, বিশেষত প্রত্যেক ইবাদতের ফজিলত, বরকত ও ফলাফল তখনই যথাযথভাবে পাওয়া যাবে যখন সে ইবাদতের যাবতীয় আদবের প্রতি যত্নবান হয়ে তা আদায় করা হবে।
ইসলামের আদবসমূহের ব্যাপারে একজন মুমিনের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই ইতিবাচক হওয়া উচিত। যাতে তা অবলম্বন করার সৌভাগ্য হয় এবং ইবাদতের সুফলসমূহ অর্জিত হয়। এরই লক্ষে রোজার আদব সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো-
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রোজার ব্যাপারে যেসব ফজিলত, বরকত ও পুরস্কারের ওয়াদা রয়েছে, তা পেতে হলে এবং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য তথা আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য্য, তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জন করতে হলে শুধু পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ ত্যাগ করাই যথেষ্ট নয়। কারণ, এগুলো হচ্ছে রোজার দেহ-কাঠামো। আর তার রূহ হলো- আদবসমূহ। তাই রোজার আদবসমূহের ব্যাপারে যত্নবান না হলে রোজার ফজিলত ও বরকত অর্জিত হবে না।
রোজার আদব হলো-
এক. দৃষ্টিকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে হেফাজত করা। যেমন বেগানা মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে, টিভি-সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা।
দুই. জবানের হেফাজত। অর্থাৎ মিথ্যা, গীবত-পরনিন্দা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচারিতা ও মন্দ কাজ করা পরিত্যাগ করেনি তার পানাহার পরিত্যাগের কোনোই গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহতায়ালা তার পানাহার ত্যাগ করার কোনোই পরোয়া করেন না।’ -সহিহ বোখারি: ১৯০৩
অন্য এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোনো অশ্লীল কিংবা মন্দ কথা না বলে। যেন কোনো প্রকার শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি অন্য কেউ তাকে গালিগালাজ করে কিংবা মারধোর করে তবে সে যেন (তদ্রুপ আচরণ বা গালির প্রতিউত্তরে গালি না দিয়ে) শুধু এতটুকু জানিয়ে দেয় যে, আমি রোজাদার।’ -সহিহ বোখারি: ১৯০৪
এতে প্রতীয়মান হয় যে, রোজা অবস্থায় মারধর ঝগড়াঝাটি তো দূরের কথা, শোরগোল করাও রোজার আদব পরিপন্থী। অতএব জবানকে এসব থেকে বিরত রেখে সর্বদা জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তরতাজা রাখবে। অন্তত চুপ থাকলেও রোজার বরকত বিনষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
তিন. কানকে সর্বপ্রকার গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করা। যেমন গানবাদ্য, গীবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে দূরে থাকা।
চার. এছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হাত ও পা ইত্যাদিকে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা।
পাঁচ. সাহহি ও ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করল, সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করল এবং একটি শহর ধুলিস্যাত করে দিল।
ছয়. রোজা অবস্থায় আল্লাহতায়ালার আজমত ও বড়ত্বের কথা এবং তার হুকুম আহকাম বেশি বেশি স্মরণ রাখা। রোজাদারের অন্তরে এ চিন্তা জাগরুক থাকা উচিত যে, আল্লাহতায়ালা হাজির-নাজির। আমি তার হুকুমে এবং তারই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পানাহার ত্যাগ করেছি। তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাকে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকতে হবে।
এভাবে এক মাস রোজা রাখা সম্ভব হলে- আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তাকওয়া ও সংযমের মহামূল্য সম্পদ দান করবেন, যার মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত হবে।