যেভাবে এলো কামানের গোলা ছুড়ে ইফতারের সময় জানানোর রীতি

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আরব আমিরাতে ইফতারের সময় কামান দাগানো হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আরব আমিরাতে ইফতারের সময় কামান দাগানো হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আরবের মুসলিম দেশগুলোতে কামান দাগিয়ে ইফতারের সময় জানিয়ে দেয়ার রেওয়াজ বেশ পুরোনো। আর যে কামান এ কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয়- ‘মিদফা আল ইফতার’ অর্থাৎ ইফতারের কামান (আক্ষরিক অর্থে)।

কিভাবে এই রীতির প্রচলন শুরু হয়েছিল তা নিয়ে দুই রকম ইতিহাস পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই বলেন, দশম শতকে মিসরে যখন ফাতেমি খিলাফত ছিল, তখন কায়রোর মুক্বাতাম পাহাড়ে একটি কামান বসানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, কামানের গোলা ছুড়ে একই সময় সকল নগরবাসীকে ইফতারের সঙ্কেত দেওয়া যায়।

এতো গেল প্রথম ইতিহাস। মিদফা আল-ইফতার নিয়ে দ্বিতীয় ইতিহাসটি বেশ মজার।

বিজ্ঞাপন

মামলুক শাসনামলের কথা, কায়রোর সুলতান তখন সাইফুদ্দিন খোশক্বাদম। হঠাৎই একদিন সুলতানের কাছে এক বিশেষ উপহার আসে। সেটি ছিল একটি কামান।

উপহার পেয়ে তো সুলতান ভীষণ খুশি। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন কামানটি পরীক্ষা করতে, তখন ছিল মাগরিবের ওয়াক্ত আবার প্রথম রমজান। কিন্তু সুলতানের আদেশ কী আর অমান্য করা যায়!

পরক্ষণেই কয়েকজন সৈনিক এসে কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করলো। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ ছড়িয়ে পড়লো কায়রোর চতুর্পাশে। নগরবাসী হঠাৎ করে ওই শব্দ শুনে ভাবল, সুলতান হয়তো ইফতারের সঙ্কেত হিসেবেই কামান দাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

পর দিন লোকজন এসে সুলতানকে কৃতজ্ঞতা জানায়, নতুন পদ্ধতিতে সঙ্কেত দেবার জন্য!

ওই সময় ঘড়ি সহজলভ্য ছিল না, আবার এখনকার মতো মসজিদে মাইকও ছিল না। তাই ইফতারের সময় কামানের আওয়াজ পেয়ে সবাই অনেক আনন্দিত হয়। যদিও ঘটনাটি ছিল কাকতালীয়, কিন্তু শহরবাসীর তো আর জানা ছিল না যে সুলতান শুধু নতুন কামান পরিক্ষা করতেই গোলা ছুড়তে বলেছিলেন!

দলে দলে লোকজন প্রাসাদে এসে যখন সুলতানের প্রশংসা করতে শুরু করে, ওই ব্যপারটা বেশ পছন্দ হয় সাইফুদ্দিন খোশক্বাদমের কন্যা ‘হাযযা ফাতিমাহ’র। শাহজাদী একরকম বায়না ধরে বসেন সুলতানের কাছে, যেন রমজানের প্রতিদিনই ইফতারের সময় কামান দাগিয়ে সঙ্কেত দেওয়া হয়। সুলতানও প্রিয় কন্যার কথা মেনে নেন এবং সে অনুযায়ী আদেশ জারি করেন। সেই থেকেই মিসরের ঐতিহ্যে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে ‘মিদফা আল-ইফতার।’

ধীরে ধীরে আরবের অন্যান্য মুসলিম দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই প্রথা। আরব আমিরাতে আজও চলে ওই পুরোনো ঐতিহ্যের চর্চা।

তবে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল অর্থাৎ কায়রোতে ১৯৯২ সালের পর থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ ছিল রমজান মাসে কামান থেকে গোলা ছোড়া। ভালো খবর হলো, কয়েক বছর থেকে কায়রোতে আবারো শুরু হয়েছে কামান দাগিয়ে ইফতারের সংকেত দেওয়া। এ নিয়ে ভীষণ খুশি সেখানকার স্থানীয়রা।