রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের
-
-
|

প্রথম রোজায় মসজিদে হারাম প্রাঙ্গণে ইফতারের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র রমজান সওয়াব অর্জনের প্রতিযোগিতার মাস। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, বান্দার সওয়াব অর্জনের এ প্রতিযোগিতা মহান আল্লাহ দেখেন। তাই মুমিনদের উচিত, এ মাসে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা বেশি বেশি করা। রোজাদারকে ইফতার করানো রমজানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভালো কাজ।
রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। হাদিসে ইফতার করানোর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।’
সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও আল্লাহ তাকে সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ -মিশকাত
অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না।’ -জামে তিরমিজি
অনেকে মনে করেন, ইফতার করালে দাওয়াতকারী ব্যক্তি রোজার পুরো সওয়াব পেয়ে যাবেন। এটি একটি ভুল ধারণা। উল্লিখিত উভয় হাদিসে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, দাওয়াতকারী ব্যক্তি রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন। এবং রোজাদারের সওয়াবও বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। সুতরাং সামর্থ্য অনুযায়ী রোজাদারকে ইফতার করানোর মাধ্যমে সওয়াব অর্জনের চেষ্টা করা আমাদের সবার কর্তব্য।
ইফতারের আদব
নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করার সময় যেসব আদব অনুসরণ করতে হয়, তা ইফতারের সময়ও অনুসরণ করা চাই। তবে ইফতারের রয়েছে বিশেষ কিছু সুন্নত ও আদব। যেমন-
সময় হওয়ার পরপরই ইফতার করা: সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিংবা মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার শুরু করে দেওয়া সুন্নত। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘লোকেরা তত দিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যত দিন তারা ইফতার দ্রুত সম্পন্ন করবে।’ -সহিহ বোখারি
সম্মিলিত ইফতার করা: একা একা ইফতার করা অনুচিত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদার ভাইকে ইফতার করাবে, সে ওই ব্যক্তির রোজার সওয়াব লাভ করবে। এবং তার রোজার সওয়াবের মধ্য থেকে কমানো হবে না।’ -জামে তিরমিজি
ইফতারের আগে দোয়া করা: হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের সময় সাধারণত রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।’ -ইবনে মাজাহ
মিষ্টিজাতীয় খাবার দিয়ে ইফতার শুরু: বিশেষত খেজুরের মাধ্যমে ইফতার শুরু করা সুন্নত। মিষ্টিজাতীয় কিছু পাওয়া না গেলে পানি দিয়ে ইফতার করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
ইফতারের বিশেষ দোয়া পড়া: ইফতার শুরু করার সময় যে দোয়াটি পড়বেন, তা হলো- (উচ্চারণ): ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রোজা রেখেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দিয়েই ইফতার করছি।’ -সুনানে আবু দাউদ
এ ছাড়া ইফতার শেষ করার পর আরেকটি দোয়া পড়ার কথা এসেছে। দোয়াটি হলো- উচ্চারণ: জাহাবাজ্জামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়াসাবাতাল আজরু ইনশা আল্লাহ।
অর্থ: পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ