খোশ আমদেদ মাহে রমজান
-
-
|

খোশ আমদেদ মাহে রমজান, ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র রমজানের চাঁদ উদিত হয়েছে। রোজার সওগাত নিয়ে এসেছে মাহে রমজান। খোদ আমদেদ। আহলান সাহলান। স্বাগতম। মাহে রমজান। রহমত, বরকত, মাগফেরাতে সবগুলো জানালা খুলে দিয়েছে রমজান। দিনে রোজা আর রাতে কিয়ামুল লাইলের নামাজের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতির দুয়ার উন্মোচিত করেছে রমজান। আত্ম পরিশুদ্ধির অবারিত সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমজান।
রমজান তাকওয়া বা খোদাভীতি শিক্ষার মাস। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে প্রশিক্ষিত হওয়ার মাস রমজান। রমজান জান্নাত লাভের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস।
অতি কল্যাণময় ও অত্যন্ত মূল্যবান রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের পথ দেখায়। কিন্তু অলস-অকর্মণ্য হয়ে বসে থাকলে বা অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করলে রমজান মাসের ফজিলত বা ফায়দাসমূহ কেমন করে পাওয়া যাবে? আলস্য, হতাশা ও বিমর্ষতার কারণে অচল ও উদভ্রান্ত হয়ে থাকলে রমজানের সীমাহীন সওয়াবের সুযোগ ও পাপমুক্তির সুবিধা কেমন করে নিজের জীবনে আসবে?
ফলে রমজানের পবিত্র ও তাৎপর্যময় প্রতিটি মুহূর্তকে নিজের ইতিবাচক/কল্যাণকর পরিবর্তনের পথে কাজে লাগানো ও পরিচালিত করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর একান্ত কর্তব্য। নিজের আত্মসমীক্ষা ও আত্মসমালোচনা করে রমজানের দিন ও রাত্রের আমলসমূহের প্রতি তৎপর হওয়ার মাধ্যমে ভাগ্য ও অবস্থাকে সাফল্যের দিকে পরিবর্তিত করাই সকলের কাম্য। রমজানে এমন সুযোগ হারানো যাবে না এজন্য যে, রমজান বিশেষ কয়েকটি কারণে শ্রেষ্ঠ মাসের একটি এবং মুসলিম নর-নারীর জন্য নানারূপ কল্যাণকর সুযোগে ভরপুর। নিজের দুরবস্থা কাটানো ও নিজেকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করতে রমজান একটি চমৎকার সুযোগ এনে দেয়।
কারণ- রমজানে ইসলামের অন্যতম রোকন বা স্তম্ভ সিয়াজ বা রোজা ফরজ করা হয়েছে। রমজান ছাড়া ফরজ রোজা পালনের সুযোগ সারা বছরে আর পাওয়া যাবে না। কোরআন নাজিলের কারণে কোরআনের মাস হিসেবে রমজান সম্মানিত।
রমজানে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহিহ মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে: ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
রমজানে রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ‘লাইলাতুল কদর’। রমজানে এমন একটি রাত আছে, যাকে কোরআনের হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ রাতের প্রশংসায় আল্লাহ তায়ালা একটি স্বতন্ত্র সুরা পবিত্র কোরআনে নাজিল করেছেন। সেই সুরা কদর-এ বলা হয়েছে: ‘কদরের রাত হাজার মাস (তথা চুরাশি বছর চার মাস) থেকেও উত্তম।’
রমজান মাসে রয়েছে সালাতুল তারাবিহ নামাজের আমল। অন্য কোনো মাসে এমন নামাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। রমজানে দিনে রোজা আর রাতে নামাজ আদায়ের সুযোগ প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য এক মহা নেয়ামত। তদুপরি, কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে রমজান মাস নামাজ ও রোজার আমলে ভরপুর থাকে। এসব আমলের সাওয়াবও রোজার মাসের বরকতে বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যেসব সুযোগ রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে মানুষ পায় না।
রমজানের বিশেষ আমল হলো শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফ করা, যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা বা রুহানিয়্যাত বৃদ্ধি পায় এবং রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে যে মহিমন্বিত লাইলাতুল কদর রয়েছে, সুনিশ্চিতভাবে সেটা পাওয়াও সম্ভব হয়। আমলে-আখলাকে পবিত্র-উজ্জ্বলতা হাসিলের মহাসুযোগ রমজানে পাওয়া যায়, যা বছরের অন্য কোনো মাসে পাওয়া সম্ভব নয়।
রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল করা হয়। রমজানে দিনে বা রাতে যে কোনো সময় রোজাদারের ফরিয়াদ বা দোয়া বা আবেদন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কবুল করেন। বিশেষত ইফতার সামনে রেখে দোয়া কবুলের বিষয়ে বহু বিশ্বস্ত বর্ণনা রয়েছে। রমজানে আল্লাহ তায়ালা অধিক হারে বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিসে মাহে রমজানে দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
রমজান দোয়া কবুলের মতোই গোনাহ মাফের মাস। এ মাসে আল্লাহ বান্দাহর গোনাহ মাফ করেন। রমজানে অধিক তাওবা করা ও নেক আমলের মাধ্যমে গোনাহ মাফ করিয়ে সাওয়াব হাসিলের চেষ্টা করা উচিত। রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে না পারা ব্যক্তিকে ‘হতভাগ্য’ বা ‘বঞ্চিত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রমজান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি আদায়ের মাস। রমজানের সঙ্গে নাজাত, মাগফেরাত সম্পর্কিত। আমল, রহমত, বরকতের সঙ্গে সঙ্গে মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার সুযোগ রমজান মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম।
সাধারণ আমলের মতোই দান, সাদাকা ইত্যাদির সাওয়াবও রমজান মাসে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। ফলে সাওয়াব, কল্যাণ, বরকত হাসিলের জন্য রমজানের চেয়ে দামি মাস আর নেই। গুণে, মানে, বৈশিষ্ট্য বছরের অন্য মাসগুলোর চেয়ে রমজানের গুরুত্ব, মর্যাদা ও তাৎপর্য অপরিসীম। ফলে বছরের অন্য সময়ের মতো পরিকল্পনায় রমজানকে বরণ ও পালন করা যাবে না। রমজানকে পালন ও বরণ করতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে, যাতে একটি মুহুর্তও নষ্ট না হয়ে রমজানের প্রতিটি রাত ও দিন যেন আমলের মাধ্যমে সার্থক ও সফল হয়।
রমজানে ছোট-বড় প্রতিটি আমলের সাওয়াব বা প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নফল ইবাদতের সাওয়াব অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। আর এক ফরজের সাওয়াব সত্তর বা ততোধিক ফরজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। এমনকি, রমজানের ওমরাহের সাওয়াব হজের সমতুল্য করে দেওয়া হয়। আবু দাউদ শরিফের ১৯৯১ নম্বর হাদিসটি এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্বরূপ। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলআইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।’
অতএব পবিত্র মাহে রমজানের পুরোটা সময়কাল পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে কল্যাণের দ্বারা। জান্নাত প্রাপ্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ হাসিলের লক্ষ্যে পূর্ণ সচেতন ও সচেষ্ট হওয়া রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ফলে আলস্য ও উদাসীনতায় মূল্যবান রমজানকে নষ্ট না করে রমজানের নানাবিধ আমলের মাধ্যমে সব ধরনের কল্যাণ হাসিলের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই সকলের জন্য একান্ত কর্তব্য ও প্রচেষ্টা হওয়া দরকার।