হে আল্লাহ! শান্তিময় রমজান দান করুন
-
-
|

হে আল্লাহ! শান্তিময় রমজান দান করুন
রহমত, বরকত, মাগফেরাতের মাস রমজানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান। প্রতিটি মুসলমান নর ও নারী ব্যক্তিগত আমল ও আখলাককে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হওয়ার পথ খুঁজে পাবেন মাহে রমজানে। রমজান এক নেয়ামত স্বরূপ, যে মাসে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। যে মাসে রয়েছে হাজার বছরের চেয়ে উত্তম মহিমান্বিত রজনী লায়লাতুর কদর। যে রমজান মাস মুসলমানদের তাকওয়া বা খোদাভীতির শিক্ষা দেয়। দিনে রোজা আর রাতে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নামাজের দীক্ষা দেয়। পাপাচার, অনাচার থেকে ফিরে আসার প্রণোদনা দেয় রমজান। রমজান ক্ষমা ও নাজাতের এক মহা সুযোগ সৃষ্টি করে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য।
যে চাঁদ দেখে দোয়ার মাধ্যমে পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানানো হয়, তা হলো: ‘হে আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।‘ যার আরবি হল: আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান, ওয়া সাল্লিম রামাদানা লি, ওয়া তাসলিমাহু মিন্নি মুতাক্বাব্বিলা ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদের অনুসন্ধান করতেন। এমনকি সাহাবিদের চাঁদ দেখতে বলতেন। রমজানের নতুন চাঁদ দেখলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কল্যাণ ও বরকতের দোয়া করতেন।
রমজান ছাড়াও প্রতিটি মাসের নতুন চাঁদ দেখলে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া পড়তেন। যে দোয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা রয়েছে। হাদিসে (তিরমিজি, মিশকাত) আছে, হজরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন: ‘আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তৌফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ যার আরবি হল: আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
নতুন চাঁদকে আরবিতে বলে ‘হিলাল‘। ‘হিলাল’হচ্ছে এক থেকে তিন তারিখের তরতাজা চাঁদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। এর মাধ্যমে নতুন তারিখ শুরু হয়। কারণ, আরবি নিয়মে রাত আগে আসে। রাতই দিনের আগমন ঘোষণা করে। ফলে রমজানের চাঁদ দেখার সাথে সাথেই রোজার মাস আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। শুরু হয় তরাবিহ নামাজের আমলও। মোদ্দা কথায়, চাঁদ দৃষ্টিগোচর হওয়ার মাধ্যমে রমজানের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি মুসলমানের অন্তরে, ঘরে ঘরে, পাড়া মহল্লা ও জনপদে।
অতএব, পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত পন্থা মোতাবেক চাঁদ দেখে দোয়ার আমল করা জরুরি। এটিই সুন্নাহ এবং সঠিক ও সাওয়াবের কাজ। অন্য কোনও পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়। বরং রমজানকে স্বাগত জানাতে অন্য কোনও নব-উদ্ভাবিত আনুষ্ঠানিকতা ও পন্থা অগ্রহণযোগ্য এবং সম্পূর্ণভাবে পরিতাজ্য।
প্রসঙ্গত, ইসলামি জীবনধারায় শুধু রমজান মাসেই নয়, যে কোনও মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়তেন: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলামি- রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার রব। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৫১) যে দোয়া রমজানের চাঁদ দেখে এবং প্রতি আরবি মাসের চাঁদ দেখে পাঠ করা সকলেই কর্তব্য। যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতপ প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিন ও ক্ষণ কল্যাণ ও সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে।
সমাগত পবিত্র রমজান মাস আমাদের জন্য শান্তি, কল্যাণ নিয়ে আসুক। হে আল্লাহ! আমাদের শান্তিময় রমজান দান করুন। আমিন। আহলান সাহলান মাহে রমজান/রামাদান