বাসাবাড়িতে তারাবির আয়োজন নিয়ে কিছু কথা
-
-
|

বাসাবাড়িতে তারাবির নামাজ, ছবি: সংগৃহীত
অনেক হাফেজ যারা খতম তারাবি পড়াতে ইচ্ছুক, কিন্তু মসজিদ না পাওয়া নিয়ে খুব চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা কিংবা মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিহ হাদিসের আলোকে বাসাবাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করা অধিক সওয়াবের কাজ। তাই হাফেজরা তারাবির ইমামতির জন্য মসজিদ না পাওয়ায় দুঃখিত হবেন না, বরং নিজেদের কিংবা অন্য কারও বাড়িতে তারাবির নামাজের ব্যবস্থা করুন। এর মাধ্যমে মসজিদে তারাবি পড়ানোর তুলনায় আরও বেশি সাওয়াব পাবেন- ইনশাআল্লাহ।
বাসাবাড়িতে জামাতের সঙ্গে তারাবি আদায়ের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।
এক. বাসাবাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করার মাধ্যমে কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা হবে। যার মাধ্যমে অত্যন্ত বরকতময় একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যে ব্যাপারে স্বয়ং নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন।
দুই. বাসাবাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করার বরকতে ঘরের মা-বোন ও আশপাশের নারীরাও পবিত্র রমজানের রাতগুলোতে দীর্ঘ নামাজ পড়ার সওয়াব পাবেন- ইনশাআল্লাহ
তিন. ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদে গেলে তাদের হট্টগোলের কারণে কখনও কখনও অন্যদের কথা শুনতে হয়। বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে, এসব অযাচিত বিষয় থেকে হেফাজত থাকা যাবে।
চার. বাচ্চাদের মাঝে নামাজ পড়ার আগ্ৰহ তৈরি হবে। মায়েদের মনে সন্তানদের হাফেজ বানানোর আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হবে।
বিভিন্ন সহিহ হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, ফরজ নামাজ ছাড়া অন্য সব নামাজ বাড়িতে পড়া বেশি সওয়াবের কাজ। তারাবির ভিত্তি হিসেবে যে হাদিস পেশ করা হয়, তার এক রেওয়ায়েতে এই কথাও এসেছে অর্থাৎ বিশেষভাবে তারাবি প্রসঙ্গে।
সাইয়্যেদুনা হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট কক্ষ নির্ধারণ করলেন। আমার ধারণা তিনি বলেছিলেন, একটি চাটাই দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল। পবিত্র রমজানে তিনি এতে কয়েক রাত নামাজ আদায় করলেন এবং কিছু সাহাবিও তার সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। কিন্তু যখন তিনি এটি জানতে পারলেন, তখন তিনি আর বের হলেন না। পরে তিনি সাহাবিদের সামনে এসে বললেন, আমি তোমাদের কৃতকর্মের কথা জানি। হে লোক সকল! তোমরা নিজ নিজ বাড়িতে নামাজ আদায় করো, কেননা ফরজ নামাজ ব্যতীত মানুষের জন্য সেরা নামাজ তার বাড়িতেই আদায়কৃত নামাজ।’ -সহিহ বোখারি: ৭৩১
সম্ভবত এই কারণেই যখন হজরত উমর (রা.) মসজিদে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করলেন, তখন তিনি নিজে এই জামাতে অংশ নেননি।
মুয়াত্তার প্রসিদ্ধ হাদিস অনুযায়ী ঘটনাটি এমন- হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবদুল কারি বলেন, আমি পবিত্র রমজানে হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদে গিয়েছিলাম। সেখানে লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে নামাজ আদায় করছিল। কেউ একা পড়ছিল, আবার কোথাও কেউ এক ব্যক্তির অনুসরণে কয়েকজন পড়ছিল। তখন হজরত উমর (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মনে করি, যদি সবাইকে এক ইমামের পেছনে একত্রিত করে দেই তাহলে তা উত্তম হবে।
এরপর তিনি তাদেরকে হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর পেছনে একত্র করলেন। পরে এক রাতে আমরা আবার তার সঙ্গে বের হলাম, দেখলাম লোকেরা এক ইমামের পেছনে নামাজ পড়ছেন। তখন হজরত উমর (রা.) বললেন, এটি কতই না চমৎকার একটি নতুন নিয়ম (বিদআতে হাসানা)! -মুয়াত্তা মালিক: ৩০১
সম্ভবত এ কারণেই হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) হজরত উমর (রা.)-এর নিযুক্ত তারাবির ইমাম হওয়া সত্ত্বেও তিনি রমজানের শেষ দশকে মসজিদে তারাবি পড়াতেন না, বরং নিজের বাড়িতে আদায় করতেন।
এ প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত উমর (রা.) হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর পেছনে তারাবির জামাত চালু করেছিলেন। তিনি রমজানের বিশ রাত মসজিদে ইমামতি করতেন, কিন্তু শেষ দশকে তিনি মসজিদে আসতেন না, বরং নিজের বাড়িতে নামাজ আদায় করতেন। তখন লোকেরা বলতেন, হজরত উবাই (রা.) যেনো পালিয়ে গেছেন! -সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৯
নিঃসন্দেহে মসজিদে তারাবির জামাত আয়োজন করা সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসা যুগ-যুগের প্রচলিত একটি আমল। এটি সুন্নত এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য কোনো অবস্থাতেই মসজিদে তারাবির জামাতের গুরুত্ব কমিয়ে দেখা নয়। বরং এখানে আমরা সেসব মানুষদের জন্য কথা বলছি, যারা ঘরে অত্যন্ত যত্ন ও পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সঙ্গে এই নামাজ আদায় করতে সক্ষম।
এখন প্রশ্ন হলো, তাদের জন্য ঘরে, বাসাবাড়িতে তারাবি পড়ার বিধান কী?
আমাদের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো, তাদের জন্য সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া, যাতে তারা বুঝতে পারেন- মসজিদের জামাতে শরিক না হয়ে ঘরে তারাবি পড়লে তাদের জন্য কেমন সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে।
মনে রাখতে হবে, এটি কোনো সাধারণ ইবাদত নয়, সঠিক উপলব্ধি এবং ইখলাসের সঙ্গে আদায় করলে ঘরেও এটি এক মহান ইবাদতে পরিণত হতে পারে।
আল্লাহতায়ালা সবাইকে সুন্নতের ওপর দৃঢ় থাকার এবং ইবাদত-বন্দেগিকে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে পালনের তওফিক দান করুন।