‘বাজেট খুব বড় হবে তা নয়, কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন হবে’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট খুব বড় হবে তা নয়, সেখানে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জাতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রাজস্বনীতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, তুলনামূলক উন্নয়ন অভিজ্ঞতাসহ অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অর্থ উপদেষ্টার একটি একান্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজে।

বিজ্ঞাপন

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজ- এর সম্পাদক মোস্তফা কামাল।

এবারের বাজেট কেমন হবে এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন,  এবার আমরা একটা রিভাইজ বাজেট করছি। বৈদেশিক বিনিময় বাড়াতে এক্সপোর্ট ডাইভারসিটি করতে চেষ্টা করব। এখন তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। এটির ওপর নির্ভর করা ঠিক না। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জ্বালানি প্রণোদনা। এ ক্ষেত্রে অনেক ভর্তুকি দিতে হবে। এবার ৪০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। পেট্রোল, কৃষিতে সার- এর জন্য ভর্তুকি দিতে হয়। সার যে দামে কেনা হয়, সে দামে কৃষক পায় না। তার থেকে অনেক কমে পায়। বাজেট খুব বড় হবে তা নয়। সেখানে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন হবে। তবে পরিচালন ব্যয় কমানো যাবে না।

বিজ্ঞাপন

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা বেতন-ভাতা দিই, ঋণের সুদহার আছে। এগুলো কমানো যাবে না। সে কারণে বাজেট কিছুটা ছোট করব। বড় বড় মেগা প্রকল্প হবে না। এ ক্ষেত্রে দেশি ও আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর অর্থ প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের বাজেটে সম্পদ নেই। জিডিপি ট্যাক্সে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ আছে। ভুটানে ১২%, জাপানে ২১ থেকে ২২%। আবার ফিনল্যান্ডে ৫০% ট্যাক্স হিসেবে দিয়ে দেয়। এর সুবিধা স্যোশাল বেনিফিট।

উন্নত দেশগুলোতে ট্যাক্সের টাকায় নাগরিকদের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দেয় জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন,  যেমন বৃদ্ধ বয়সে ওষুধ-হাসপাতাল অর্থাৎ ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। যদিও তাদের দেশে ট্যাক্সের  পরিমাণ বেশি। আমাদের দেশে এ পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে। কারণ আমাদের দেশে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রগুলো এখনো বিস্তৃত নয়। কী পরিমাণ ট্যাক্স আদায় হলো তার সঠিক পরিসংখ্যানও উঠে আসে না।   অনলাইন করাতে ট্যাক্সের বিষয়গুলো বুঝতে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে সময় বাড়াতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট সময়ের পরে হলেও মেনে নিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে সময় বৃদ্ধি প্রয়োজন। ট্যাক্স আইনজীবীদের মতে, এখনো তারা অনেককিছু করতে পারেনি। ইতোমধ্যে ১২ লাখ লোক অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি। এটি আরেকটু বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১২ লাখ খারাপ নয়। কোম্পানির জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা এখনো  বাধ্যতামূলক করিনি। কোম্পানিগুলোকে অনেক তথ্য দিতে হয়। তাদের বিভিন্ন লাইসেন্স দিতে হয়, না হলে ট্যাক্সের নাম নির্ধারণ করা যায় না। অতএব, এটা একটা বড় মোবিলাইজেশন। অতিদ্রুত খরচ কমাতে পারব না।

বাজেটে নেট বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া বড় প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখার ব্যাপারে এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রাজি হয়েছে। এখন আমাদের বাজেটের ব্যাপারে নেটটা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আরেকটা বিষয়, বাজেট যেন বাস্তবধর্মী হয়। কিছু বড় প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ খাত এগুলোতে খরচ করতেই হবে। আবার বৈদ্যুতিক লাইন, কিছু পাইপ লাইন পুরাতন হয়ে গেছে, সেগুলো রিপ্লেস করতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থানে যদি আয় না থাকে তাহলে মূল্যস্ফীতি  আরও বেশি হবে। গত এক বছরে মালয়েশিয়া, দুবাই, আবুধাবি, কাতার, ওমানে লোক নিচ্ছে না। শুধু সৌদি আরব নিচ্ছে। আর ইতালিতে যাচ্ছে। সেটিও বৈধভাবে হচ্ছে না। জাহাজ দিয়ে, সাঁতার কেটে অবৈধভাবে যাচ্ছে বেশি। ইতালিতে বড় সংখ্যক কর্মী রয়েছে। আমাদের রাজস্ব চাপ বাড়ছে। সে কারণে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। কিন্তু সোশ্যাল সেক্টরে এগুলো সম্ভব নয়। এটা অবশ্য দাতারা বলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক বিষয়গুলো কমাতে পারবে না। আমি যদি স্বাস্থ্য খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিই তাহলে বাজেটে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কমালে অনেক হাসপাতাল, অনেক মেডিকেল সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে শিক্ষায়ও সমস্যা আছে। এরপর আইটিতে সমস্যা রয়েছে।  আগে সরকারের যত টাকা খরচ হয়েছে, এসব টাকা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কাছে চলে গেছে।