আসছে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজানুল মোবারক। রমজানের গুরুত্বের জন্য নবী কারিম (সা.) উম্মতকে শাবান মাসের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন, যেন রমজান আগমনের বিষয়ে সন্দেহে পতিত হতে না হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ -সিলসিলাতুস সহিহাহ
রমজান মানেই সওয়াবের অনন্ত উৎসধারা। নেক আমলের ভরা বসন্ত। রমজান মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের মাস। হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবানের পূর্ণ মাসই রোজা রাখতেন। তিনি শাবানের রোজা রাখতেন, তবে অল্প কিছু দিন (রাখতেন না)। -সহিহ বোখারি
যেহেতু রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস, তাই এ মাসের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি দরকার। তেমনিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে আমাদের রমজানের প্রস্তুতি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হয়, আমরা যেন অতিরঞ্জিত কিছু করে না ফেলি, যা সুন্নতের পরিপন্থি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রদান করতেন। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, রমজান বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ থেকে)। -সুনানে নাসায়ি: ২১০৬
এ জন্য রমজান আসার আগেই নিজেকে মানসিক, শারীরিক ও সর্বোতভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। যেন মূল্যবান এ মাস অধিক ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো যায়।
হাদিসে আছে, মহিমান্বিত রমজানের আগমনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুবই আনন্দিত হতেন। এ মাসে অতুলনীয়ভাবে উদারতা ও দানশীলতার পরিচয় দিতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন- আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরও বেশি দানশীল হতেন, যখন হজরত জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই হজরত জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা একে অন্যকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও বেশি দানশীল ছিলেন। -সহিহ বোখারি: ৬
রমজানের শেষ ১০ দিনে নবীজি (সা.) ইতিকাফে বসতেন এবং নিজেকে আরও বেশি ইবাদতে নিয়োজিত করতেন। তিনি এই দিনগুলোতে বিশেষভাবে লাইলাতুল কদর খোঁজার চেষ্টা করতেন। উম্মুল মুমিমিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন- তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। -সহিহ বোখারি: ২০২০
নবীজি (সা.) রমজান মাসকে শুধু রোজার মাস হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তার জন্য ইবাদত, উদারতা, কোরআন তেলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিজে যেমন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতেন, তেমনি উম্মতকেও অনুপ্রাণিত করতেন, যাতে তারা রমজানের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করতে পারে।